ষ্টাফ রিপোর্টারঃ জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে বকেয়া বেতনসহ চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে করা আমরণ অনশন স্থগিত করেছে বগুড়ার বিসিক শিল্প নগরী এলাকার ইঞ্জিন ফিল্টার তৈরির কারখানার চাকুরিচ্যুত শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা অনশন স্থগিত করেন বলে জনিয়েছেন ওই আন্দোলনের শ্রমিক নেতা মো. সামছুদ্দিন।
বগুড়া মটরস ও পাওয়ার ফিল্টার কোম্পানির শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সামছুদ্দিন আরও বলেন, বিকেলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সালাহ্উদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী, মালিকপক্ষের লোকজন আমাদের এখানে এসেছিলেন। জেলা বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। এই কারণে আগামী শনিবার পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শনিবারের মধ্যে সংকট সমাধান না হলে রোববার থেকে আবার অনশন শুরু হবে।
জানতে চাইলে বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে প্রাথমিকভাবে। শনিবার দুপক্ষ বসে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাসে শ্রমিকরা অনশন তুলে নিয়েছে। আশা করা যায় শনিবার ইতিবাচক সমাধান হবে।
এর আগে গত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বগুড়া মটরস ও পাওয়ার ফিল্টার কোম্পানির মূল ফটকের সামনে অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটির চাকুরিচ্যুত ৯৭ জন শ্রমিক আজ বৃহস্পতিবারও এই অনশন করেন। এই প্রতিষ্ঠানে অন্তত ২০০ জন শ্রমিক কাজ করেন বলে বগুড়া মটরস ও পাওয়ার ফিল্টার কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, জেলা প্রশাসন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা না করে বগুড়ায় একটি ইঞ্জিন ফিল্টার তৈরির কারখানার ৯৭ জন শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। মূলত এর বিরোধীতা করেই অনশন শুরু হয়। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে ওই কারখানা। বগুড়া মটরস ও পাওয়ার ফিল্টার কোম্পানি হলো উত্তরবঙ্গের একমাত্র ফিল্ডার উৎপাদন কারখানা।
ওই কোম্পানির শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সামছুদ্দিন অভিযোগ করেন, করোনার অজুহাতে গত জুন মাসের ১৪ তারিখে ৫০ ভাগ বেতন দেওয়ার শর্তে কারখানা বন্ধ করে মালিক পক্ষ। এরপর ওই মাসের ২৯ তারিখে কারখানায় ঢুকতে গেলে জানানো হয়, ৯৭ জন শ্রমিককে কারখানা থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অথচ তাদের বেতন ভাতা কিছু দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, শ্রম অধিদপ্তর ও কলকারখান অধিদপ্তরসহ একাধিক জায়গায় অভিযোগ করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকরা কারও কথা শুনতে নারাজ। বিসিকের মধ্যে প্রতিষ্ঠান থাকলেও এখানকার কারও সিদ্ধান্তও মানেন না কর্তৃপক্ষ।
এই প্রতিষ্ঠানে অন্তত ২০ বছর ধরে করা আদুল আজিজ বলেন, একদিকে তারা বেকার হয়ে পড়েছেন, অন্যদিকে ৬ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে তাদের।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, চাকরিচ্যুত হওয়ার কারণে তার সন্তানের লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এই প্রতিষ্ঠানে অন্তত ২৫ বছর ধরে কাজ আবদুল বারী। জানান, চাকরিচ্যুত হওয়ার পর থেকে চরম কষ্টে জীবন চলাচ্ছেন তিনি।
বগুড়া মটরস ও পাওয়ার ফিল্টার কোম্পানি বিসিক এলাকায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় তদারকি করে থাকে বিসিক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিক শিল্পনগরী কর্মকর্তা এসএম মাহফুজুর রহমান জয়যুগান্তরকে বলেন, দফাদফায় বগুড়া মটরস ও পাওয়ার ফিল্টার কোম্পানির মালিকদের সাথে বসে বিষয়টি সমঝোতা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা কারও কথা মানতে নারাজ। এ কারণ তাদের বিরুদ্ধে শ্রম অধিদপ্তর ও কলকারখানা অধিদপ্তর মামলা করেছে। তবে বগুড়া মটরস ও পাওয়ার ফিল্টার কোম্পানিও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেছে।
জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী মহাপরিদর্শক (সেফটি) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তদন্ত করে দেখা গেছে বগুড়া মটরস ও পাওয়ার ফিল্টার কোম্পানি শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছে। এই কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে একাধিকার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক তাহমিদুল ইসলাম চন্দন মোবাইলে ধরেননি। এসএমএস করলেও কোনো সাড়া দেননি।