নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমাও, বাজারমূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ কর

সাইফুজ্জামান টুটুলঃ দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি রোধ, বাজারমূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে মজুরি নির্ধারণ, শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু, বেতন বৈষম্য কমানো ও মহার্ঘ্য ভাতা প্রদানের দাবিতে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ স্কপ এর কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসুচির অংশহিসাবে বগুড়া জেলা শাখার উদ্যোগে আজ ২৫ নভেম্বর ২০২০, সকাল ১১ টায় সাতমাথায় মানববন্ধন-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্কপের বগুড়া জেলা আহবায়ক ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র্রের  জেলা সাধারণ সম্পাদক  মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধন-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।  সমাবেশ সঞ্চালনা করেন স্কপের বগুড়া জেলা সদস্য সচিব ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট জেলা সভাপতি সাইফুজ্জামান টুটুল, সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় শ্রমিক লীগ বগুড়ার সভাপতি আব্দুস সালাম, সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল বগুড়ার সভাপতি মো: আব্দুল ওয়াদুদ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুর রহমান, জাতীয় শ্রমিক জোটের বগুড়ার  সভাপতি মো: মকবুল হোসেন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বগুড়ার সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বগুড়ার সভাপতি আব্দুল বারী, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন বগুড়ার সভাপতি মো: শাখাওয়াত হোসেন,  ফ্রি ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস বগুড়ার সভাপতি মো: শাহাজাহান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ  হয়েছে শ্রমিক কর্মচারীরা। তারা চাকুরি হারিয়েছে, মজুরি কমেছে অথচ সরকার ঘোষিত সহযোগিতা বা প্রণোদনা  শ্রমিকরা পায়নি। হোটেল, বেকারী, সেলুন,দোকান কর্মচারী,রাইস মিল, সেমি অটো রাইস মিল, অটো রাইস মিল, রিক্সা, অটো রিক্সা, ভ্যান, ইজিবাইক, সি এন জি, পাদুকা, খাদ্যগুদাম, শ্রমিক বগুড়া বিসিক শিল্পাঞ্চালসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক – অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের করোনাকালীন দূর্দশা লাঘবের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট মালিকদের প্রতি নেতৃবৃন্দ উদাত্ত¡ আহŸান জানান। সেই সাথে নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেল লাইন দ্রæত-নির্মাণ-চালু করার দাবী জানান।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ  রাষ্ট্রীয় ১৩ লক্ষ কর্মচারীদের  সর্বনিম্ন ৮২৫০ এবং সর্বোচ্চ ৭৮০০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছে। এই পে- স্কেল অনুসারে বাৎসরিক ৫% হারে বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ প্রতি বছরের গড় মুদ্রাস্ফীতি ছিল প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ থেকে ৬% শতাংশের বেশী আর নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের ব্যবহার্য পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুন। বিশেষত আলু,  পেঁয়াজ, মরিচ, শাক-সবজির দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে করোনা মহামারির এই সময়ে একদিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রতিদিনের ব্যয় বেড়েছে অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকৃত আয় কমেছে। শ্র্রমিক কর্মচারীরা তাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাকে সংকুচিত করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, টিসিবি’র ট্রাকে পণ্য বিক্রয় বা ও.এম.এসে চাল বিক্রি করে শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশা দুর করা যাবেনা। প্রতিজন শ্রমিক কর্মচারীর জন্য পুলিশ বা সেনাবাহিনীর মত রেশন প্রদানের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। আর বাজারমূল্যের সাথে সঙ্গতি  রেখে নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করে প্রতিবছর সমন্বয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের সংবিধানে বৈষম্য নিরসনের কথা বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের স্বপ্ন। অথচ, সরকারী বেতন স্কেলে সর্বনিম্ন আর সর্বোচ্চ স্তরের মজুরি বৈষম্য প্রায় দশগুণ, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারীদের অবস্থা আরো শোচনীয়। তাই বৈষম্য কমাতে সরকারি বেতন কাঠামোর স্তর ২০টি থেকে অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে আর মালিকানা নির্বিশেষে সমকাজে সমমজুরি নিশ্চিত করতে হবে।   রাষ্ট্রীয় পাটকলসহ কলকারখানা রক্ষা, করোনাকালীন সুরক্ষা , গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, ন্যায্য মজুরি ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার রক্ষাসহ ৯ দফা দাবির ভিত্তিতে নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের প্রতি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহŸান জানান।
নেতৃবৃন্দ মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন এবং মজুরি পুণঃনির্ধারণের অন্তর্র্বতী সময়ে মহার্ঘভাতা প্রদানের দাবি জানান।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ