ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর শুরু আগামী সপ্তাহে

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অবশেষে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ প্রথম দফায় উদ্বাস্তুদের একটি দলের চরটিতে যাওয়ার কথা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর অব্যাহত বিরোধিতার মুখেও সরকার এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে পেছনে ফিরছে না। আর নিজেদের দেশে এখনও ফিরতে না পারা রোহিঙ্গারাও শিবিরের জনাকীর্ণ পরিবেশ থেকে নতুন চরে গিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে আগ্রহী। এমন ইচ্ছা পোষণ করা রোহিঙ্গাদের পাল্লা ক্রমশ ভারী হচ্ছে। তারা শেষ পর্যন্ত জায়গা বদল করতে সম্মতি জানানো শুরু করেছেন।

রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর বেশ কঠোর ভূমিকা নেয়ার পরই পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে। বিদেশি নানা গোষ্ঠীর মদদে এত দিন যেসব উগ্র রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ভাসানচরবিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে আসছিলেন তারা এখন এক প্রকার ঝিমিয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে শিবিরগুলোতে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা ভাসানচরের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার পরই রোহিঙ্গারা সেখানে যেতে আগ্রহ দেখাতে শুরু করে।

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ সিকদার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলো কেবল নিজেদের সুযোগ-সুবিধার জন্যই দীর্ঘদিন ধরে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে নানাভাবে বাধা দিয়ে আসছে। না হলে অনেক আগেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো।’

তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোর অব্যাহত চাপ এড়িয়েই সরকারকে ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গা স্থানান্তরের সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে হবে।

দীর্ঘদিন ধরে শিবিরে সশস্ত্র রোহিঙ্গা গ্রুপের নির্যাতনে অস্থির হয়ে পড়েছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। তারা নির্যাতনের ভয়ে নিজেদের দেশে ফেরা বা ভাসানচরে যাওয়ার আগ্রহের কথা কর্তৃপক্ষের সামনে প্রকাশ করতে পারেন না। সেই সাথে শিবিরের ঘিঞ্জি পরিবেশ বাসিন্দাদের জীবন বিষিয়ে তুলেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া এখনও অনিশ্চিত থাকায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের শিবিরে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা জায়গা বদল করার চেষ্টা করছেন।

কুতুপালং শিবিরের একজন ‘শেড মাঝি’ নাম প্রকাশ না করে জানান, সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের অত্যাচার-নির্যাতন তাদের জীবন বিষিয়ে তুলেছে। তারা যেকোনোভাবে স্বদেশে ফিরতে চান। আর যত দিন স্বদেশে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি হবে না তত দিন ভাসানচরের নিরাপদ স্থানে থাকতে চান তারা। সরকারের এমন উদ্যোগে তারা বেশ খুশি বলেও জানান।

সরকার অনেক আগে থেকেই ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়টি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে আসছিল। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা শেড মাঝিদেরও দফায় দফায় নেয়া হয়েছে চরটি দেখাতে। সর্বশেষ গত ১৬ নভেম্বর রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট ২২ এনজিও প্রতিনিধিদের ভাসানচর পরিদর্শন করিয়ে আনা হয়।

ভাসানচর দেখে আসা এনজিও পালস-বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম কলিম বলেন, ‘ভাসানচরে না যেতে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা একদম পরিকল্পিত মিথ্যাচার। আমি সরেজমিনে ভাসানচর গিয়ে স্বচক্ষে না দেখলে এ রকম অপপ্রচার নিয়ে হয়তোবা আমাকেও বিভ্রান্তিতে থাকতে হতো।’

তিনি জানান, সরকার ভাসানচরে বসবাসের জন্য চমৎকার পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। সেখানে প্রচুর সংখ্যক দেশীয় এনজিও রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী বলে জানান তিনি।

কক্সবাজারে কাজ করা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব শাহ রেজোয়ান হায়াত বলেন, ‘ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের প্রথম দফায় স্থানান্তরের দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তবে আগামী সপ্তাহ নাগাদ রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি পাঠানোর যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে। প্রথম দফায় স্বল্প সংখ্যক রোহিঙ্গাকে নেয়া হবে ভাসানচরে। এভাবে দফায় দফায় শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের পাঠানো হবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ