আজ বগুড়া হানাদার মুক্ত দিবস

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ আজ ১৩ ডিসেম্বর, বগুড়া হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় পাক বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণের মধ্য দিয়ে বগুড়াকে হানাদার মুক্ত করা হয়। এর আগে টানা তিনদিন মিত্রবাহিনীর সহায়তায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।

বগুড়া বাংলাদেশের একমাত্র জেলা, যেটি দখল নিতে পাক বাহিনীর সময় লেগেছিল ২৩ দিন। এরপর নির্ভীক মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে পাক বাহিনীর বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সকালে রংপুর থেকে পাক বাহিনী সড়ক পথে এসে বগুড়া দখল নিতে আক্রমণ চালায়। টানা পাঁচ দিন যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পাক বাহিনীকে বগুড়া থেকে হটিয়ে দিতে ওই কদিনে আজাদ, টিটু, তোতা, তারেকসহ প্রায় ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

১৭ এপ্রিল সড়ক এবং আকাশ পথে হামলা চালিয়ে আবারও বগুড়ার দখল নেয় পাক বাহিনী। এর পরপরই শুরু হয় তাদের নারকীয় হত্যাকাণ্ড। শহর এলাকা ছাড়াও তারা বগুড়ার শাজাহানপুরের বাবুর পুকুর এলাকায় ১৪ জনকে গুলি করে হত্যা করে।

১৯৭১ সাল, ১০ ডিসেম্বর। ভোর থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা বগুড়াকে শক্রু মুক্ত করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
মুক্তিযোদ্ধারা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নওদাপাড়া, চাঁদপুর ও ঠেঙ্গামারা এলাকায় নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরী করেন।

পরে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর ৬৪ মাউন্টেন্ট রেজিমেন্টের বিগ্রেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার প্রেম সিংহের নেতৃত্বে ট্যাংক নিয়ে তারা শহরের দিকে এগুতে থাকেন। ওইসব এলাকার অসংখ্য স্থানীয় যুবকও সেদিন তাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

১৩ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় পৌঁছার পর পাক বাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। তবে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পাক বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।

পরে ওইদিন দুপুরে ফুলবাড়ী এলাকার পাশে শহরের বৃন্দাবন পাড়া এলাকায় পাক বাহিনীর প্রায় ৭০০ সৈন্য অস্ত্রসহ মিত্র বাহিনীর মিত্রবাহিনীর ৬৪ মাউনটেন্ট রেজিমেন্টের বিগ্রেডিয়ার প্রেম সিংহের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

বগুড়ায় উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলার রক্তলাল পতাকা। আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় হানাদার বাহিনী। তাদেরকে বন্দী করে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ে মিত্র বাহিনীর হেফাজতে রাখা হয়। এই দিনেই হানাদার মুক্ত হয় বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলা।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ