পেঁয়াজের স্বাস্থ্য উপকারিতা

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ পেঁয়াজ নেই, এমন কোন রান্না ঘর হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। পিঁয়াজ বাংলাদেশের একটি মসলা ফসল। কারণ কোন রান্না শুরু করার আগে, কড়াইতে তেল দেয়ার পরপরই সাধারণত: যে উপাদানটি ব্যবহার করা হয় সেটি পেঁয়াজ। এছাড়া সরাসরি কাঁচা পেঁয়াজ, ভর্তা, আচার এবং সালাদ হিসেবেও পেঁয়াজের কদর কম নয়।

পিঁয়াজ আদিকালে কলেরা ও প্লেগ রোগের প্রতিশেধক হিসাবে ব্যবহৃত হতো। এটি বর্ষজীবি কন্দ জাতীয় ফসল। পিঁয়াজে এক প্রকার উদ্বায়ী তেল এবং বিভিন্ন প্রকার সালফার যৌগ যেমন-মনো, ডাই, ট্রাই এবং টেট্রাসালফাইড থায়োল এবং থায়োফেন ডেরিভেটিভস পাওয়া যায়। পিঁয়াজে বিদ্যমান অ্যালাইল প্রোপাইল ডাইসালফাইড ঝাঁঝ তৈরী করে। পিঁয়াজে থাকে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, অ্যামাইনো এসিড, পলিফেনল, ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি, স্যাপোনিন, বিটা-অ্যামিন, স্টেরল, ফেনলিক এসিডস, ক্যাটেচল, ফলিক এসিড, প্রোটোক্যাটেচুয়িক এসিড, হজম যোগ্য আঁশ ইত্যাদি।

১ টি বড় পিঁয়াজে ৮৬.৮ শতাংশ পানি, ১.২ শতাংশ প্রোটিন, ১১.৬ শতাংশ শর্করা জাতীয় পদার্থ, ০.১৮ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ০.০৪ শতাংশ ফসফরাস ও ০.৭ শতাংশ লোহা থাকে। পিঁয়াজ রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমায়। তাই অনেক কার্ডিওলজিস্টই রোগীদের নিয়মিত পিঁয়াজ খেতে পরামর্শ দেন । বিশেষ করে হার্টের ডাক্তার ভিক্টর ও গুডউইচ তাঁর রোগীদের প্রতিদিন অন্তত একটি করে পিঁয়াজ খাওয়ার উপদেশ দেন। পিঁয়াজের রস বিষাক্ত নয় এবং এর কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নাই। তাই যত খুশি খেলেও কোন সমস্যা নাই। গবেষকদের মতে দিনে ২-৩ টি কাঁচা পিঁয়াজ খেলে নিন্মলিখিত উপকার পাওয়া যায়ঃ

১. মুখের বদ-গন্ধ দূর করে: কাঁচা পেঁয়াজ খেলে মুখ গহ্বরের উপস্থিত ব্যাকটেরিয়াগুলি মরতে শুরু করে। ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। সেই সঙ্গে মাড়িতে নানাবিধ রোগ হওয়ার আশঙ্কাও কমে।

২. খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়: শরীরে ভাল কোলেস্টেরল বা এইচ ডি এল-এর মাত্রা বাড়িয়ে একদিকে যেমন শরীরকে চাঙ্গা রাখে, তেমনি অন্যদিকে খারাপ কোলেস্টরলের পরিমাণ কমিয়ে হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এই ভাবে নিজের বিশেষ ক্ষমতা বলে পেঁয়াজ আমাদের আয়ু বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।

৩. জ্বরের প্রকোপ কমায়: শুতে যাওয়ার আগে একটা পিঁয়াজ কেটে নিন। তার সঙ্গে অল্প করে আলু এবং ২ টো রসুনের কোয়া মিশিয়ে মোজার মধ্যে রেখে সেই মোজা পরে শুয়ে পড়ুন। এমনটা কয়েকদিন করলেই দেখবেন সুস্থ হতে শুরু করেছেন।

৪. ডায়াবেটিসের মতো রোগকে দূরে রাখে: দেহে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে পেঁয়াজ অত্যন্ত ভালো। যারা ডায়াবেটিক তারা চিকিত্স কের পরামর্শ নিয়ে রোজ পেঁয়াজ খান।

৫. ইনসমনিয়ার মতো রোগের প্রকোপ কমায়: আপনি কি রাতের তারা? ঘড়ীর কাঁটা সকালের দিকে এগিয়ে গেলেও চোখের পাতা এক করতে পারেন না? তাহলে তো প্রতিদিনের ডায়েটে পেঁয়াজের থাকা চাইই চাই। কারণ ইনসমেনিয়ার মতো রোগের উপশমে এই সবজিটি দারুন কাজে আসে।

৬. পুড়ে গেলে কাজে আসে : রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়ে যাওয়ার ঘটনা গৃহিণীদের সঙ্গে আকছারই হতে থাকে। এক্ষেত্রেও পিঁয়াজ দারুন উপকারে লাগে। কেমন ভাবে? এবার থেকে পুড়ে গেলে, ক্ষতস্থানে এক টুকরো পিঁয়াজ কিছু সময়ের জন্য রেখে দিন। অল্প সময়েই দেখবেন জ্বালা ভাব কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতও সেরে গেছে।

৭. আঁচিল দূর করে: গোল করে পেঁয়াজ কেটে আঁচিলের উপর রেখে একটা কাপড় দিয়ে বেঁধে দিন। যাতে সেটি পরে না যায়। প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে এমনটা করলে অল্প দিনেই দেখবেন আঁচিল খসে পরে গেছে।

৮. স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায়: সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুসারে নিয়মিত কাঁচা পেঁয়াজ খেলে ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে স্মৃতিশক্তির যেমন উন্নতি ঘটে, তেমনি নার্ভাস সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে একাধিক ব্রেন ডিজিজ হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

৯. ক্যান্সারের মতো রোগকে দূরে রাখে: ব্রেন, কোলোন এবং ঘারের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে শূন্যতে এসে দাঁড়ায় যদি প্রতিদিন পেঁয়াজ খাওয়া যায়। কারণ এই সবজিটিতে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান শরীরের অন্দরে ক্যান্সার কোষের জন্ম হতে দেয় না। ফলে এমন ধরনের মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।

১০.কাশির প্রকোপ কমায়: একটা পেঁয়াজকে কেটে নিয়ে তার রস সংগ্রহ করে নিন। তারপর তাতে কয়েক ড্রপ মধু মিশিয়ে এই মিশ্রন দিনে কম করে দুবার পান করলেই কাশি কমে যেতে শুরু করবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ