বগুড়া নিউজ ২৪ঃ ২০১৬ সালে ক্ষমতায়। এরপর টানা চার বছর। একটার পর একটা ‘পাগলামি’ কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তাতে বিব্রত মার্কিনিরা। ক্ষুব্ধ-অতিষ্ঠ পুরো বিশ্ব। গত চার বছরে সবারই একটাই চাওয়া- একটাই প্রশ্ন, এই ‘পাগলা ট্রাম্প’ থেকে কবে মুক্তি মিলবে মানুষের।
অবশেষে তাদের সেই চাওয়া পূর্ণ হয়েছে। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে তাকে। সেই সঙ্গে শেষ হতে যাচ্ছে তার ‘পাগলামি’ কর্মকাণ্ডের।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই জিতে যান ট্রাম্প। প্রথম চেষ্টাতেই অভাবনীয় এই সাফল্যে ধরাকে সরা জ্ঞান করতে লাগলেন তিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণের পরই তা একে একে নিজের কর্মকাণ্ডে বুঝিয়ে দিলেন।
ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিনের মধ্যেই নির্বাহী আদেশ দিয়ে মুসলিম বিশ্বের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিলেন।
এরপর বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক জলবায়ু চুক্তি ‘প্যারিস ক্লাইমেট অ্যাক্ট’ থেকেও নিজ দেশকে প্রত্যাহার করে নিলেন। বাতিল করলেন গুরুত্বপূর্ণ ইরান পরমাণু চুক্তিও।
‘আমেরিকাই প্রথম’ নীতির দোহাই দিয়ে টিটিপি ও নাফটার মতো একাধিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিও ছুড়ে ফেলেছেন। এছাড়া ক্ষমতার মেয়াদের শেষ দিকে এসে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিলও বাতিল করেছেন তিনি।
গত চার বছরে বক্তব্য-বিবৃতির ক্ষেত্রে কখনো প্রথাগত নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেনি ট্রাম্প। ধার ধারেননি দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা কূটনৈতিক প্রটোকল। যখন যা মনে এসেছে, মুখের ওপর বলে দিয়েছেন সরাসরি। টুইট করে অযোগ্যের প্রশংসা ও যোগ্যের নিন্দা করেছেন।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ পরীক্ষিত মিত্রদের ওপর হামলে পড়তেও ছাড়েননি। মার্কিন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে হতবুদ্ধি করে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ রাশিয়ার নেতা ভ্লাদিমির পুতিনকে বিভিন্ন সময় প্রশংসার বানে ভাসিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
২০১৬ সালে নিজের নির্বাচনী প্রচারণার সময় বলেছিলেন পুতিন হচ্ছেন বিশ্বজুড়ে ‘খুবই সম্মানীত’ ব্যক্তি।
২০১৮ সালে হেলসিঙ্কিতে দু’জনের প্রথম সরকারি সাক্ষাতে মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের বিপরীতে গিয়ে পুতিনের পক্ষে অবস্থান নেন ট্রাম্প। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘তিনি এই মাত্র আমাকে বলেছেন রাশিয়া কিছু করেনি।
আজকে প্রেসিডেন্ট পুতিন এ বিষয় খুবই দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করেছেন। উদার গণতন্ত্রের সহযোগী নেতাদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে ট্রাম্প একনায়ক মনোভাবধারী নেতাদের প্রশংসা করেন। তাদের সম্পর্কে বলেন, ‘যত বেশি কঠোর তত বেশি ভালো।’
অনেকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে বিপজ্জনক বলে তার সম্পর্কে সতর্ক করেছেন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যে সম্পর্কগুলো রক্ষা করি সেগুলো খুবই মজার। যত কঠোর ও রুক্ষ তারা হোন, তত ভালোভাবে আমি তাদের সঙ্গে মিশে যেতে পারি।’
ভিন্ন মতাবলম্বী সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি আরব চাপে পড়লে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তাকে রক্ষা করেছি।’
২০১৯ সালে মিসরের জেনারেল থেকে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে স্বাগত জানানোর সময় ট্রাম্প খুশিতে গদগদ হয়ে বলেন, ‘আমার প্রিয় একনায়ক কোথায়?’ পৃথিবীর সবচেয়ে বর্বর স্বৈরশাসক হিসেবে মানবাধিকার কর্মীরা বিবেচনা করেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে।
তার সম্পর্কে কিছু বাগাড়ম্বর করলেও শেষ পর্যন্ত তার সঙ্গে প্রীতি ও ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে বলে জানান ট্রাম্প।
২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন হামলার হুমকি দেন তিনি। তারপর কিমকে ক্ষুদে ‘রকেট বালক (লিটল রকেট ম্যান) বলে বিদ্রূপ করেন। পাল্টা কিমও ‘পাগলা ট্রাম্প’ বলে অভিহিত করেন। কিন্তু ২০১৮ সালে নিজেদের মধ্যে এক ঐতিহাসিক বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন ‘আমরা প্রেমে পড়ে গেছি।
তিনি আমাকে সুন্দর অনেক চিঠি লিখেছেন।’ ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় জড়িয়েছেন চীনের সঙ্গে। বাধিয়ে দিয়েছেন বাণিজ্যযুদ্ধ, যার সমাধান আজও হয়নি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে অনেক মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
কিন্তু চীনে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের পর তিনি টুইট করেন ‘শি ছিলেন তীক্ষ্ম ও শক্তিশালী এবং ভাইরাসটির দিকে ভালোভাবে নজর দিয়েছেন।