প্রত্নতাত্ত্বিক ডক্টর এনামুল হক এর শেষ বিদায়

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ  বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক বগুড়ার প্রথিতযশা প্রত্নতাত্ত্বিক ও গবেষক প্রফেসর ডক্টর এনামুল হক আর নেই। রোববার দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। এনামুল হক বগুড়ার সোনাতলার ভেলুরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীতে বসবাস করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে তার এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছেন। তারা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। প্রায় সাত বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান।

স্বজনরা জানান, ড. এনামুল হক সকালের দিকে ভালো ছিলেন। পরে দুপুরে নিজ বাসভবনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাড়ে তিনটার দিকে তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। পড়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এনামুল হকের মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে। তার বড় মেয়ে আমেরিকা থেকে মঙ্গলবার দেশে আসতে পারেন। তারপর জানাজার সময় নির্ধারণ করা হবে। এরপর এনামুল হকের মরদেহ বগুড়ার ভেলুরপাড়া গ্রামের বাড়িতে আনা হবে বলে জানা গেছে।

প্রফেসর ডক্টর এনামুল হক ১৯৩৭ সালের ১ মার্চ বগুড়ার ভেলুরপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বগুড়া জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক ও ইতিহাস-প্রত্নতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দক্ষিণ এশিয়ার শিল্প নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।

কর্মজীবনে ১৯৬২ সালে এনামুল হক তৎকালীন ঢাকা জাদুঘরে যোগদান করে। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে পদোন্নতি পেয়ে অধ্যক্ষ, ১৯৬৯ সালে পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা জাদুঘরকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রুপান্তর করা হয় এবং এর প্রতিষ্ঠাকালীন মহাপরিচালক হিসেবে এনামুল হক যোগদান করে। মহাপরিচালক হিসেবে তিনি ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে তাকে ১৯৯০ সালে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

২০১৪ সালে গবেষণার ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ এনামুল হক একুশে পদক লাভ করেন। সংস্কৃতিতে অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য ২০১৭ সালে তাকে সংস্কৃতিতে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। সর্বশেষ প্রত্নতত্ত্বে বিশেষ অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে ২০২০ সালে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ