চাহিদার চেয়ে বেশি পেট্রোল-অকটেন দেশে আছে: প্রধানমন্ত্রী

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ দেশে পেট্রোল-অকটেনের ঘাটতি নিয়ে মিথ্যা কথায় বিভ্রান্ত না হতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, ‘চাহিদার চেয়ে বেশি পেট্রোল-অকটেন দেশে আছে। ডিজেল আমাদের কিনতে হয় ঠিক। কিন্তু পেট্রোল-অকটেন কিনতে হয় না। সমালোচকরা অনেক বেশি জ্ঞানী তো, ছোট বিষয়গুলো ভুলে যান!’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ দিয়েছি সত্য, কিন্তু সারা বিশ্বে বর্তমানে কেমন অবস্থা বিরাজ করছে তা আপনারা জানেন। বিপদে যাতে না পড়ি সেজন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা সাশ্রয়ী হবো। তার মানে এই না যে বিদ্যুৎ নেই।

তিনি বলেন, ‘সমগ্র বিশ্ব মুদ্রাস্ফীতির জন্য হিমসিম খাচ্ছে। করোনা মোকাবিলা করতে করতেই আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। পাল্টাপাল্টি স্যাংকশন। ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি খাদ্যের সংকট। সব দেশ বিদ্যুৎ জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী। ইংল্যান্ড, জার্মানি প্রতিটি দেশে দুঃসময় চলছে। বাংলাদেশে যেন তেমন দুঃসময় না আসে সেজন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। তারপরও ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। উৎপাদন যেন অব্যাহত থাকে।’

শেখ হাসিনা বলেন, যারা আমাদের রিজার্ভ নিয়ে কথা বলেন, সেই বিএনপির আমলে ২০০৬ সালে অর্থাৎ এক সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রিজার্ভ কত ছিল? তিন বিলিয়নের কিছু ওপরে, ৩.৮ এরকমই ছিল। আর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি, তার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৫.৬ বিলিয়নের ওপরে রিজার্ভ করেছিল। সেখান থেকে আমরা ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত আমাদের রিজার্ভ বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলাম। করোনার সময়ে আমাদের আমদানি বন্ধ ছিল। এরপর আমদানি করতে হয়েছে। আমদানি করতে গিয়ে এবং উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে আমাদের রিজার্ভ খরচ করতে হয়েছে। আমরা বিনা পয়সার ভ্যাকসিন দিলাম, সেখানে তো আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়েছে। এমনকি একটি ভ্যাকসিন দিতে সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে যা যা দরকার আমরা তো সেগুলো বিদেশ থেকে কিনে এনেছি। সেখানে বিরাট অংকের টাকা আমরা খরচ করেছি পাশাপাশি আমাদের আমদানিতে কোনো কার্পণ্য ছিল না। এটা মাথায় রাখতে হবে, যেসব শিল্প গড়ে উঠবে সেগুলো যখন প্রোডাকশনে যাবে তখন প্রচুর মানুষ লাভবান হবে, করতেই হবে।

তিনি বলেন, আমাদের রিজার্ভ থাকে কেন, কোনো আপদকালীন সময়ে তিন মাসের খাদ্যশস্য কেনার মতো বা আমদানি করার মতো যেন অর্থটা আমাদের হাতে থাকে। আমাদের এখন যে রিজার্ভ আছে তাতে তিন মাস কেন, ৬ মাস, ৯ মাসের খাবার আমরা কিনে আনতে পারবো। কিন্তু আমাদেরকে আবার সেই পদক্ষেপ নিতে হবে যে খাদ্যশস্য কিনতে না হয়। আমরা যাতে নিজে উৎপাদন করতে পারি। আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। আমরা ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি, একটা বাজেট দিতে পেরেছি। এখন মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, এগুলো কেন তাদের চোখে পড়ে না? আমি জানি না।

তিনি বলেন, ‘ষড়ঋতুর দেশ আমাদের। দুইমাস পর পর ঋতু বদলায়, মানুষের মনও বদলায় এবং ভুলেও যায়। কাজেই দুইমাস পর ভুলে যেন না যায়, সেজন্য আমরা কী কাজ করেছি, তা মানুষের কাছে বার বার বলতে হবে, বোঝাতে হবে। কারণ একটা শ্রেণি আছে, যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। এ জ্ঞানপাপীদের কথা শুনে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয়।’

দলীয় নেতাকর্মীদের সরকারের উন্নয়ন দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যাহত করার অনেক ষড়যন্ত্র আছে, চক্রান্ত চলছে। আমি বিশ্বাস করি, যত চক্রান্তই করুক বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। আমরা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য এ গতিকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঝড়-ঝাপটা এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশের কারণে অনেক কিছুই মোকাবিলা করতে হবে। আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে যেমন চলি, তেমনি বৈশ্বিক যে দুর্যোগ সেটাও মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে পারবো। সেই বিশ্বাসও আমার আছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগকে এটাই বলবো, তোমাদের কাজ হবে আমরা যে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, তা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা। যে উন্নতি দেশের হয়েছে, শিক্ষার দ্বার অবারিত হয়েছে, বহুমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি, কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি, সেই সঙ্গে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি, গ্রামে গ্রামে ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় মানুষের ঘরে বসে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, ফ্রিল্যান্সার তৈরি হচ্ছে। বেকারদের ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়েছে, রাস্তাঘাট, সেতু-পুল নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছি, এ উন্নয়নের কথাগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। প্রত্যেকটি অঞ্চলে গিয়ে মানুষের কাছে বার বার বলতে হবে। কে কি বললো সেদিকে কর্ণপাত করার কোনো দরকার নেই। আমরা কী করেছি, তা মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারলে সেটাই হবে আসল জবাব।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘কে কী বললো সেদিকে না গিয়ে আমরা মানুষের জন্য যে উন্নয়ন করেছি, সেই উন্নয়নের কথাগুলো একেবারে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। বার বার বলতে হবে। এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে এবং এই কাজটা করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগ যেভাবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে, সেভাবেই কাজ করে যাবে বলে আশা করি। সংগঠনকে সুসংগঠিত করে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দুঃসময়ে যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তা অব্যাহত রাখবে। একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে আর্তমানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রাখবে এবং নিবেদিতপ্রাণ হয়েই রাজনীতি করবে।’ সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের গত এক বছরের কর্মকাণ্ড এবং সদ্য প্রয়াত দলটির সাবেক সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহের ওপর দুটি পৃথক ভিডিওচিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্বেচ্ছাসেবার এক বছর’ শীর্ষক একটি প্রকাশনার মোড়কও উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ