বগুড়ার আবাসিক এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের গোডাউন ॥ এলাকাবাসী আতংকিত

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় জেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শহরের আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার গোডাউন স্থাপন করে চলছে জমজমাট ব্যবসা। গোডাউন স্থানান্তরে প্রশাসন থেকে বারংবার নির্দেশনা দিলেও মানছে না গোডাউন মালিকদ্বয়। সরজমিনে উক্ত গোডাউন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, গোডাউন সংলগ্ন এলাকায় একাধিক বহুতল ভবন ছাড়াও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি গালর্স স্কুল সহ একাধিক ব্যবসা বিপণন কেন্দ্র রয়েছে। ফলে যেকোন সময় অগ্নিকান্ড জনিত দূর্ঘটনা ঘটলে এলাকায় বড় ধরণের প্রাণহানী ও সম্পদহানীর সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান। আবাসিক এলাকাবাসী, জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া শহরের ৩নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত শিববাটী এলাকায় জনৈক মজিবুর রহমানের পুত্র মোঃ পারভেজ রহমান ও মোঃ পল্লব রহমান আইন অমান্য করে জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাসের গোডাউন স্থাপন করে দেদারছে ব্যবসা পরিচালনা করছে। প্রতিদিন উক্ত গোডাউনে ট্রাকে করে আনা ৮শ-১২শ (ছোট-বড়) গ্যাস সিলিন্ডার লোড-আনলোড করা হয়। এতে করে আবাসিক এলাকার অসুস্থ বাসিন্দাদের শারীরিক সমস্যা সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শব্দদূষণের কারণে পড়াশোনায় বড় ধরণের ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। উক্ত ব্যবসায়ী ভ্রতাদ্বয়ের এহেন কর্মকান্ডে অত্র এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে সার্বক্ষণিক ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ বিষয়ে চলতি বছরের ১৫ মার্চ উক্ত আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা বগুড়া জেলা প্রশাসক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক বরাবর অবৈধ ভাবে স্থাপিত এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের গোডাউন বন্ধে আবেদন করে।উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল নাইম অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে গোডাউন স্থাপনের জন্য ব্যবসায়ী পারভেজ রহমান ও পল্লব রহমানকে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও ৭ দিনের মধ্যে গোডাউন অন্যত্র স্থাপনের নির্দেশনা প্রদান করে। পরবর্তীতে উক্ত ব্যবসায়ীভ্রাতাদ্বয় গোডাউন অন্যত্র স্থানান্তরে এক মাসের সময় চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন থেকে মৌখিকভাবে আবেদন মঞ্জুর করে গোডাউন স্থানান্তরের পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য তাদেরকে নির্দেশনা প্রদান করে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময়সীমা অতিক্রম করলেও উক্ত ব্যবসায়ীদ্বয় গোডাউন স্থানান্তরের ন্যূনতম উদ্যোগ গ্রহণ শুধু তাই নয়, গত ২৭ জুন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বগুড়ার সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল মালেক সরজমিনে উক্ত গোডাউন পরিদর্শন করে গোডাউন মালিক পল্লব রহমানকে জনস্বার্থে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্যত্র গোডাউন স্থানান্তরের নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু অদ্যাবদি প্রশাসনের কোন নির্দেশনা এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বগুড়া অফিসের ইন্সপেক্টর মোঃ ফসির উদ্দীন সর্দার বলেন, উক্ত ব্যবসায়ীদ্বয় নতুন করে উক্ত জায়গায় এলপিজি গোডাউন স্থাপনের আবেদন করলেও আবেদন যথাযথ না হওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে। অবৈধভাবে গোডাউন স্থাপন করে ব্যবসা করার জন্য অচীরেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বগুড়ার সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল মালেক বলেন, ইতিপূর্বে উক্ত গোডাউন পরিদর্শন করে অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছি। তা সত্বেও তারা গোডাউন স্থানান্তর না করায় তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালাউদ্দিন আহমেদ এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ইতিপূর্বে উক্ত ব্যবসায়ীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গোডাউন স্থানান্তরের এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও উক্ত এলপিজি গ্যাস গোডাউন স্থানান্তর না করায় অচীরেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ