ভারতে মূল্যবান ‘সাদা স্বর্ণের’ সন্ধান

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তি ছাড়া এই আধুনিক বিশ্ব একেবারে অচল। সকাল থেকে রাত, প্রযুক্তির ছাতা যেন আগলে রেখেছে সভ্যতাকে। দিন দিন তা আরও এগিয়ে চলেছে। এ প্রযুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ব্যাটারি।

ব্যাটারি বা তড়িৎকোষ প্রায় প্রতিটি বৈদ্যুতিন যন্ত্রেই ব্যবহার করা হয়। গাড়ি থেকে শুরু করে মোবাইল, ক্যামেরা, ল্যাপটপ, সর্বত্র ব্যাটারির বহুল ব্যবহার প্রচলিত। এবার এই ব্যাটারি শিল্পের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হাতে এসেছে ভারতের।

দেশটির জম্মু ও কাশ্মীরে লিথিয়ামের খনির সন্ধান পেয়েছে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (জিএসআই)। বিশ্বের বাজারে এই ধাতুর গুরুত্ব অপরিসীম। মূল্যের বিচারে একে ‘সাদা স্বর্ণও বলে থাকেন কেউ কেউ।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভারতের উত্তর পশ্চিম উপত্যকার নীচে প্রায় ৫৯ লাখ টন লিথিয়াম রয়েছে। এই লিথিয়াম যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিষ্কাশন করে কাজে লাগাতে পারলে দেশটির অর্থনীতিতে আসতে পারে নতুন মোড়।

আশা করা যাচ্ছে, লিথিয়ামের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতে পারে ভারতের ব্যাটারি শিল্প। এত দিন বিদেশ থেকে ব্যাটারি বা তা তৈরির কাঁচামাল আমদানি করতে হত ভারতকে। লিথিয়ামের খনি ক্রিয়াশীল হলে ভারতের উপাদানেই ব্যাটারি তৈরি করা যাবে। এমনকি তা বিদেশে রফতানিও করতে পারবেন উৎপাদকেরা।

বর্তমানে ব্যাটারি শিল্পে ভারতের থেকে অনেকটা এগিয়ে আছে চীন। চীনে লিথিয়ামের খনি রয়েছে। তবে লিথিয়ামের পরিমাণ তাতে বেশি নয়। ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা বিশ্বের লিথিয়াম ভান্ডারের ৭.৯ শতাংশ রয়েছে চীনে।

লিথিয়ামের পরিমাণ বেশি না হলেও চীন এগিয়ে আছে লিথিয়ামের উৎপাদনে। বিশ্বে যত খনিজাত লিথিয়াম পরিশোধন এবং প্রক্রিয়াকরণ হয়, তার ৬০ শতাংশ হয় চীনের মাটিতেই।

খনি থেকে তোলা লিথিয়াম পরিশোধনের প্রক্রিয়া খুব সহজ নয়। ভারতের হাতে সেই প্রযুক্তি এখনও নেই। যেহেতু ভারতে লিথিয়ামের অস্তিত্ব কারও জানা ছিল না, তাই এত দিন লিথিয়াম পরিশোধনের প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ মাথাও ঘামায়নি।

লিথিয়াম একটি অতি বিক্রিয়াশীল, দাহ্য ধাতু। মাটির নীচে খনিতে রুপালি রঙের এই ধাতুর আকরিক পাওয়া যায়। স্পোডুমিন, পেটালাইট এবং লেপিডোলাইটের মতো খনিজ সঞ্চয়ে লিথিয়াম থাকে।

খনি থেকে লিথিয়াম নিষ্কাশনের জন্য খনিজ প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন হয়। প্রথমে আকরিক চূর্ণ করতে হয়। তার পর চৌম্বকীয় পৃথকীকরণ, মাধ্যাকর্ষণ পৃথকীকরণ প্রভৃতি নানা প্রক্রিয়ায় নিষ্কাশিত হয় বহুমূল্য লিথিয়াম।

লোনা পানির হ্রদ থেকেও লিথিয়াম নিষ্কাশন করা যায়। সেক্ষেত্রে লিথিয়াম হাতে পাওয়ার জন্য বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিতে হয়।

লিথিয়াম খনি থেকে তুলে যথার্থভাবে কাজে লাগাতে পারলে ব্যাটারি শিল্পে ভারত চীনকেও টেক্কা দিতে পারবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

যেকোনও রিচার্জেবল ব্যাটারি তৈরির অন্যতম উপাদান লিথিয়াম। লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহৃত মোবাইল, ল্যাপটপ বা অন্যান্য ডিভাইস অপেক্ষাকৃত হালকা হয়। এই ধরনের ডিভাইসে চার্জও অনেক বেশিক্ষণ থাকে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানেও লিথিয়ামের ব্যবহার রয়েছে। মানসিক অবসাদ কিংবা বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো মানসিক রোগের চিকিৎসায় এই ধাতু ব্যবহার করা হয়। মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে শান্তি আনে লিথিয়াম।

কাচের তৈরি জিনিসপত্র শক্তিশালী করতেও লিথিয়াম ব্যবহৃত হয়। এই ধাতুর ভূমিকা রয়েছে মৃৎশিল্পেও। লিথিয়াম প্রয়োগ করলে কাচ বা চিনামাটির দ্রব্যের গলন দ্রুত হয়। এগুলোর গলনাঙ্ক কমাতে সাহায্য করে লিথিয়াম।

লিথিয়ামের খনি মূলত রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকায়। বিশ্বের সমগ্র লিথিয়াম ভান্ডারের ৫০ শতাংশ পাওয়া যায় ওই মহাদেশের তিনটি দেশ থেকে। আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া এবং চিলিতে প্রচুর পরিমাণে লিথিয়াম রয়েছে।
তথ্যসূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, বিজনেস টুডে

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮