বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০২২ সালে মানবাধিকার কেমন ছিল সে বিষয়ে সোমবার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তারা। এতে শুরুতেই ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বার ৫ বছর মেয়াদে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু ওই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না বলে মত দিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা। এর কারণ ব্যালট বাক্স ভরাট করা, বিরোধী দলীয় এজেন্ট ও ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন সহ নানা অনিয়ম।

ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক কারণে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়েছে।এক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি দেখানো হয়েছে।

এই রিপোর্টে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে পর্যবেক্ষকদের তরফ থেকে বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, বেআইনি হত্যা বা খেয়ালখুশিমতো হত্যাকাণ্ড গত বছর অব্যাহত ছিল। নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা বহু নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন । নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের অপরাধ থেকে এবং দুর্নীতি থেকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের মধ্যে আছে পুলিশ, সীমান্ত প্রহরী, সন্ত্রাস বিরোধী ইউনিট, যেমন র‌্যাব।

তারা আভ্যন্তরীণ এবং সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষা করেন। আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর কিছু দায়িত্ব রয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা রিপোর্ট করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আর সেনাবাহিনী রিপোর্ট করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
বেসামরিক কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে । এর মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড , জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা, সরকার দ্বারা অশোভন আচরণ ও শাস্তি দেয়াসহ বেআইনি ও খেয়ালখুশিমতো খুন। জেলখানায় রয়েছে কষ্টকর ও জীবনের প্রতি হুমকির মতো পরিস্থিতি। খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জেলে আটকে রাখা হয়েছে অথবা আটক দেখানো হয়েছে। অন্য দেশে ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে নিষ্পেষণ করা হয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় রয়েছে গুরুত্বর সমস্যা। প্রাইভেসিতে খেয়ালখুশিমতো অথবা বেআইনিভাবে হস্তক্ষেপ করা হয়। কোনো আত্মীয় অপরাধ করেছেন এমন হলে তার পুরো পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দেয়া হয়। মুক্ত মত প্রকাশ এবং মিডিয়ার স্বাধীনতায় রয়েছে গুরুত্বর বিধিনিষেধ। রয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অথবা সহিংসতার হুমকি।

অন্যায়ভাবে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয় অথবা বিচার করা হয়। আছে সেন্সরশিপ। মত প্রকাশকে সীমিত করতে অপরাধ বিষয়ক আইন প্রয়োগ করা হয় অথবা হুমকি দেয়া হয়। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট স্বাধীনতায় রয়েছে গুরুত্বর বিধিনিষেধ। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং স্বাধীন জমায়েতের স্বাধীনতায় ব্যাপকভাবে হস্তক্ষেপ করা হয়। সংগঠনের ওপর, তহবিল অথবা বেসরকারি সংগঠন ও নাগরিক সমাজের সংগঠনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মারাত্মক ও অযৌক্তিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে সরকারে ভয়াবহ দুর্নীতি। আভ্যন্তরীণ অথবা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনের বিরুদ্ধে সরকার মারাত্মকভাবে বিধিনিষেধ দিয়েছে বা হয়রান করছে। তদন্তে ঘাটতি আছে।

ঘাটতি দেখা গেছে লিঙ্গগত সহিংসতার জবাবদিহিতায়। এতে আরও বলা হয়, সম্মতিতে সমকামীতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার আইন আছে। স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিকদের অধিকারের জন্য মুক্তভাবে সমাবেশ করা এবং সম্মিলিতভাবে দর কষাকষি করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের নিয়ম লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি দেয়ার বহু রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়েছে। যেসব কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন বা দুর্নীতিতে যুক্ত হয়েছেন তাদেরকে শনাক্ত করা, তদন্ত করা, বিচারের আওতায় আনা এবং শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকার খুব কমই পদক্ষেপ নিয়েছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ