পীরগঞ্জ বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে লটকন

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি : রংপুরের পীরগঞ্জে এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে লটকন। উৎপাদন খরচ কম ও বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় লটকন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেক কৃষক। উপজেলার মিঠিপুর ইউনিয়নের একবারপুর মধ্যপাড়ায় কৃষক অভিজিৎ শখের বশে এক বিঘা মাটিতে ৬৩টি গাছ লাগিয়ে এ ফল চাষ শুরু করেন।

বর্তমানে তার বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে লটকন। উৎপাদন খরচ কম ও বাজারে দাম বেশি হওয়ায় আশা করছেন এ বছর আয় হবে প্রায় ২ লাখ টাকা। এছাড়া এই লটকন রংপুর বিভাগের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হচ্ছে অন্যান্য এলাকাতেও। আকারে বড়, রং সুন্দর ও সুস্বাদু হওয়ায় এই লটকনের চাহিদা বেশি। সুস্বাধু লটকন ঔষধিগুণ সম্পন্ন হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ায় এর চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ।

এছাড়া অন্যান্য ফসলের তুলনায় কয়েকগুণ লাভ বেশি হওয়ায় লটকন চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। বাজারে আকার ভেদে প্রতি কেজি লটকন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। মিঠিপুর ইউনিয়নের একবারপুর গ্রামের কৃষক সোলাইমান বলেন, লটকন গাছ সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে রোপণের উপযুক্ত সময়। বর্ষার শেষের দিকে অর্থ্যাৎ ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও গাছ লাগানো যায়।

লটকনের গাছ লাল মাটিতে ঝোপের মতো হয়ে থাকে। প্রতি বছর মাঘ-ফালগুনে লটকন গাছে মুকুল আসা শুরু হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে এ ফল পরিপক্বতা পায়। এটি চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। স্ত্রী গাছ লাগিয়ে দিলেই হয়। সময়ে সময়ে একটু পরিচর্যা করতে হয়। গোড়ার চারদিকে জৈব সার দিলে ফলন ভালো হবে। পিঁপড়া বা পোকামাকড়ের হাত থেকে ফল বাঁচাতে ছত্রাকনাশক দিতে হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, উপজেলায় প্রায় ৩ একর জমিতে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩০জন কৃষক লাটকন চাষ করছে। রোপণের ৩বছরের মধ্যে লটকন গাছে ফলন আসে। প্রতিটি গাছ ফল দেয় টানা ২০ থেকে ৩০ বছর। লটকন গাছের রোগবালাই তেমন দেখা যায় না। ফল সংগ্রহের ৬০ দিন আগে গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম পটাশ পানির সাথে মিশিয়ে গাছের গোঁড়ায় দিলে ফলের মিষ্টতা ও আকার বৃদ্ধি পায়।

এ ফল চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বিক্রির জন্য কোন টেনশন করতে হয় না। পাইকারী ব্যবসায়ীরা লটকন কাঁচা থাকা অবস্থায় চাষিদের কাছ থেকে বাগান খরিদ করে নেয়। বাগান খরিদের পদ্ধতিতে রয়েছে ভিন্নতা। প্রথমে বাগানের মালিকের কাছ থেকে একদল পাইকার দাম-দর করে বাগান ক্রয় করেন, পরে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পাকা লটকন বাগান থেকে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন।

প্রকারভেদে পাইকারি মণ প্রতি দাম ওঠে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। যা খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আর এ লটকন চাষে সব ধরনের সহায়তার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে উপজেলার এই কৃষি কর্মকর্তা।

কৃষকরা মনে করেন কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় এলাকায় আরও কিছু লটকন বাগান গড়ে তোলা গেলে একদিকে যেমন লাভবান হবেন বাগান মালিকরা অন্যদিকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হবে এ অঞ্চলটি।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০