কুমিল্লায় নকল এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারে সয়লাব বাজার! প্রতারিত ভোক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক :  খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাচ্ছে বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার! কুমিল্লায় এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকারী হাজারো গ্রাহক ও ভোক্তারা হচ্ছেন প্রতারিত। কতিপয় জালিয়াত ও বাটপার সিন্ডিকেটের প্রতারণা ও জালিয়াতির ফলে একদিকে সাধারণ ভোক্তারা যেমন প্রতারিত হচ্ছে অপরদিকে প্রকৃত ব্যবসায়ী ও আসল এলপিজি কোম্পানিগুলোও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সঠিক ওজনের সিলিন্ডারের মতই হুবহু সীল করে বোতলের মুখ লাগনো বাজারের ১২ কেজি বা সারে ১২ কেজি ওজনের এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকারীরা কোন ভাবেই বোঝার উপায় নেই তিনি ন্যায্য পয়সা দিয়ে নকল গ্যাস সিলিন্ডার কিনছেন। আর এসব নকল সিলিন্ডারগুলোর ওজন ঠিক নেই। আর ওজনে ঠিক থাকলেও তাতে প্রকৃতপক্ষে জ্বালানী গ্যাস রয়েছে ৮ থেকে ৯ কেজি বাকীটা পানি কিংবা বালি। বাসা বাড়িতে আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় এলপিজি গ্যাসের চাহিদাকে পুঁজি করে এক শ্রেনীর অসাধু জালিয়াত চক্র বসুন্ধরা, যমুনা, বিএম, টোটাল সহ বিভিন্ন ব্রান্ডের বোতল ও সীল ব্যবহার করে অবৈধ ও নকল সিলিন্ডার বাজারে বিক্রি করছে দীর্ঘদিন ধরেই। আর অধিক লাভের আশায় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের ঠকিয়ে এসব এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করেছেন বাজার দরে।
সাম্প্রতিক সাধারণ গ্রাহকদের অভিযোগে সরেজমিনে খোঁজ নিলে বেরিয়ে আসে প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য। বেরিয়ে আসে সিলিন্ডার গ্যাস জালিয়াত চক্র কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পূর্নমতি গ্রামের ২ সাইফুল, মোবারক ও মমিন সিন্ডিকেটের জালিয়াতী। অবৈধ ভাবে নকল এলপিজি গ্যাস রিফিলের কারখানা খুলে বসেছেন তারা। কোন প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই গোপনে রাতের অধারে ভেজাল ও নকল গ্যাস রিফিলের কর্মযজ্ঞ চলে কারখানায়। প্রশাসনের অভিযানের ভয়ে দিনে বন্ধ থাকলেও, কোন প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভীতিকর পরিবেশে রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত চলে এসব নকল এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার রিফিলের কাজ। ৪৫ কেজির এক সিলিন্ডার থেকে ১২কেজির ৫ সিলিন্ডারে ঢোকানো হয় গ্যাস। আবার ওজন ঠিক রাখতে সিলিন্ডারের ভেতরে ঢোকানো হয় বালি বা পানি। বিভিন্ন কোম্পানির ডিলার বা পরিবেশকরা ১১শ টাকায় যেসব সিলিন্ডার খুচরা দোকানে দিচ্ছেন। সেখানে প্রায় সকল কোম্পানির হবহু গ্যাস সিলিন্ডারের বোতল, এই চক্রটি দিচ্ছে ৮শ ৯শ বা হাজার টাকায়। তিন চারশ টাকা অধিক মুনাফার লোভে ওজনে কম, নকল বা ভেজাল এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করেছেন দোকানীরা। ফলে সঠিক টাকা দিয়ে কিনেও প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা।
সত্যতা প্রমাণে বুড়িচংয়ের পূর্ণমতি এলাকায় সাইফুল সিন্ডিকেটের অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার রিফিল কারখানায় গেলে জালিয়াত চক্রের সদস্যরা প্রথমেই প্রশাসনের লোকজন ভেবে পালিয়ে গেলেও পরে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে অনুসন্ধানী টিমের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নাম ভাঙ্গিয়ে হুমকি ধমকিতে ব্যর্থ হয়ে, এক পর্যায়ে সংবাদ প্রচার না করার শর্তে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন তারা। জালিয়াত চক্রের দাবী, স্থানীয় প্রশাসন ও নেতাদের ম্যানেজ করেই এসব করছেন তারা। শুধু ভেজাল বা গ্রাহক প্রতারণা নয়। এলপিজি গ্যাস একটি দহ্য পদার্থ, সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাতের আধারে নূন্যতম নিরাপত্তা ছাড়া যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ কারখানায় সিলিন্ডার রিফিল করা হচ্ছে, এতে করে যে কোন সময় ঘটতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা, হতে পারে প্রাণহানী এবং অগ্নিকাণ্ড। এসব বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলপিজি ডিলার ও ব্যবসায়ীগণ স্থানীয় থানা পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পুলিশ সুপার সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে প্রকাশ্যেই প্রতারক চক্র সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
নিষিদ্ধ এবং অবৈধ হলেও এ উপজেলার এলপিজি অটো গ্যাস ফিলিং স্টেশন থেকেও রাতের আধারে রিফিল করা হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার। বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া সড়ক সংলগ্ন পূর্ণমতি এলাকার শান্তা অটো গ্যাস ফিলিং স্টেশন থেকে প্রতি রাতেই স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীরা ১২ কেজি গ্যাসের সিলিন্ডারে ৮ থেকে ১০ কেজি গ্যাস রিফিল করে ন্যায্য মূল্য বিক্রি করছে বলেও অনুসন্ধানে জানা যায়। এতে করেও প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ভোক্তাগণ।
উপজেলার বেশ কয়েকটি এলপিজি গ্যাস কোম্পানির ডিলার ময়নামতি বাজার এলাকার ব্যবসায়ী কাইয়ুম জানান এতে করে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ভোক্তাগন। রিতিমত জালিয়াতি করা হচ্ছে গ্রাহকদের সাথে। আমরাও ব্যবসায়ীক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এবিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে।
বসুন্ধরা এলপিজি গ্যাস কোম্পানির এরিয়া অফিসার তুহিন আহম্মেদ বলেন, এটি সম্পূর্ণ অবৈধ ও বিপদজনক। কোম্পানির তরফ থেকে উর্ধতন কর্মকর্তাগণ ব্যবস্থা নেবেন। দেখে শুনে সঠিক পরিবেশদের কাছ থেকে সিলিন্ডার নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। অন্যথায় তা ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা করার সামিল।
এবিষয়ে বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তদন্ত করে শীঘ্রই আইনগন পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার জালিয়াতি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জ্বালানি অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট মহলের কর্তাব্যক্তিদের সঠিক নজরদারি, জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা ও সাধারণ ভোক্তাদের সচেতনতার বিকল্প নেই।কুমিল্লায় নকল এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারে সয়লাব বাজার! প্রতারিত ভোক্তারা
Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০