ভারতের সঙ্গে ১১ জুলাই থেকে রুপিতে লেনদেন

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ রুপিতে লেনদেন শুরু করতে প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এরই মধ্যে সোনালী ও ইষ্টার্ণ ব্যাংক রুপি লেনদেনে বিশেষ অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক থেকে অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা ১১ জুলাই থেকে রুপিতে রপ্তানি আয় পেতে সক্ষম হবেন এবং এর সমমূল্যের অর্থ আমদানি বিল নিষ্পত্তির জন্য ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র। এতে দুই দেশের লেনদেনের অংশবিশেষে ডলারের ওপর চাপ কমবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ১১ জুলাই ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ইষ্টার্ণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার জানিয়েছেন, তাঁরা রুপি ও টাকা উভয় মাধ্যমেই লেনদেনের জন্য আবেদন করেছিলেন এবং রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া তা অনুমোদনও করেছে। প্রাথমিকভাবে অল্প পরিমাণে রুপিতে লেনদেন হবে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়বে।

এ ছাড়া টাকায় লেনদেন পরবর্তী সময়ে চালু করা হবে। তবে ডলারে বাণিজ্য হওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত থাকছে আগের মতোই।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ এবং প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। খাদ্যপণ্যসহ অতি প্রয়োজনীয় পণ্য রুপিতে আমদানি করতে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানতে চাইলে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) সভাপতি ও নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা যদি দুই বিলিয়ন ডলার রুপিতে লেনদেন করতে পারি, তাহলে আমাদের কিছুটা সাশ্রয় হবে। আবার সরকারও এই দুই বিলিয়ন ডলার অন্য খাতে ব্যবহার করতে পারবে।’

এই পদ্ধতি চালু করা গেলে ভারতকে বাণিজ্যিক লেনদেনে যে পরিমাণ অর্থ দিতে হতো, তার একটি অংশ আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে দিতে হবে না। ফলে রিজার্ভের ওপর কিছুটা হলেও চাপ কমবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রুপিতে লেনদেনের উদ্যোগটি ভালো।

এখান থেকে স্বল্প মেয়াদে সুফল আশা করা ঠিক হবে না। কারণ তাদের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি বেশি। আমরা যতটুকু ভারতে রপ্তানি করে রুপি পাব, ততটুকুই লেনদেন করতে পারব। বেসরকারি খাতে এটি জনপ্রিয় করতে সময় লাগবে। তবে জিটুজি পদ্ধতিতে দুই দেশের মধ্যে ঋণ বা অন্য যেসব লেনদেন হয়, সেগুলো খুব দ্রুত করা যাবে। শুরুর দিকে খাদ্যপণ্যসহ অতি প্রয়োজনীয় পণ্য রুপিতে আমদানি করতে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে।’

২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্যের উদ্যোগ নিয়েছিল ভারত। তখন উদ্যোগটি এগোয়নি। গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ভারত উভয় দেশের জন্য বাণিজ্যের মাধ্যম হিসেবে রুপি চালু করার প্রস্তাব দেয়। সেই ধারাবাহিকতায় গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বেঙ্গালুরুতে এক বিশেষ বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এবং আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস ডলারের পরিবর্তে রুপির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি থাকায় রুপিতে লেনদেনে ঝুঁকিও আছে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি শুরু হলে পণ্য বাণিজ্যেই তা সীমাবদ্ধ থাকবে না; ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে ঝুঁকির বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে ২০০ কোটি ডলার রপ্তানির সমপরিমাণ ভারতীয় রুপি দিয়ে বাণিজ্য শুরু হতেই পারে। আর রুপিতে লেনদেন হলে বৈদেশিক বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আসবে।’

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১