মঈন উদ্দীন: তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান শিক্ষা ও মহাকাশ গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে রাজশাহীতে নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবর রহমান নভোথিয়েটারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দেশের প্রতিটি বিভাগে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত নভোথিয়েটার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ভেতরে দুই দশমিক তিন শূন্য একর জায়গাজুড়ে ২২২ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরে গড়ে উঠছে এটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগ।
প্রকল্পটি শুরু হবার পর থেকেই করোনা মহামারী এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্তিরতাকে মোকাবেলা করে দ্রুত গতিতে কাজ করার ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার রাজশাহীর কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পের কারিগরি দিক এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নির্ধারন ও যাচাই-বাছাইকরণে কাজ করছে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ দেশী-বিদেশী কনসাল্ট্যান্ট এবং কারিগরি কমিটি। বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং গুণগত মান নিশ্চিতকরণে একসঙ্গে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত বিভাগ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী নভোথিয়েটারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো এখানে স্থাপন করা হচ্ছে ১৫০ আসন বিশিষ্ট প্ল্যানেটারিয়াম থিয়েটার এবং বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ৪ক ডিজিটাল প্রজেকশন সিস্টেম। ৪ক ডিজিটাল প্ল্যানেটারিয়াম প্রজেকশন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের সিওএসএম গ্রুপের ইভান্স এন্ড সাদারল্যান্ড স্থাপন করছে এই অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রজেকশন সিস্টেম। এ ধরনের অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্ল্যানেটারিয়াম প্রজেকশনের জন্য উন্নতমানের প্রজেকশন সার্ফেস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিশ্বের সর্বাধুনিক প্লানেটারিয়াম প্রজেকশন সিস্টেম প্রস্তুতকারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান স্পিটজের তৈরি ন্যানোসিম প্যানেলের ইনার ডোম স্থাপন করা হচ্ছে রাজশাহী নভোথিয়েটারে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ন্যানোসিম টেকনোলজি একটি সর্বাধুনিক প্রজেকশন প্যানেল সিস্টেম যেখানে প্রতিটি ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক্যালি পাউডার-কোটেড সমতল ও মসৃণ প্যানেল একটি আরেকটির সঙ্গে মুখোমুখি জয়েন্টের মাধ্যমে একটি অনবদ্য সিমলেস (দাগবিহীন) প্রজেকশন সার্ফেস সৃষ্টি করে। এই প্যানেলগুলো এক ধরনের বিশেষ কাউন্টারসাঙ্ক রিভেটের মাধ্যমে ফ্রেমের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এই রিভেটগুলো ন্যানোসিম প্যানেলের ছিদ্রের সঙ্গে একেবারেই মিশে যায় এবং আপাতদৃষ্টিতে কোন রিভেটের অস্তিত্বই টের পাওয়া যায় না, যা একটি প্রজেকশন সার্ফেসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ডিজিটাল প্ল্যানেটারিয়ামে বিশ্বব্যাপী মহাকাশ গবেষণার সর্বশেষ তথ্য এবং গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান ও গ্রহমন্ডল গবেষণা সংক্রান্ত নানারকম তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে যা তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মহাকাশ গবেষণা এবং বিজ্ঞান চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
রাজশাহী নভোথিয়েটারে সাধারণ মানুষ, শিশু-কিশোর ও তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান শিক্ষামূলক বিনোদনের জন্য আরও স্থাপন করা হচ্ছে অত্যাধুনিক ইউরোপিয়ান প্রযুক্তির একটি ৪৮ আসন বিশিষ্ট ৫ডি সিমুলেশন থিয়েটার, একটি ১৬ আসন বিশিষ্ট ইমারসিভ রাইড সিমুলেটর এবং ২০টি ডিজিটাল সায়েন্টিফিক এক্সিবিট ও রোবট। ইতিমধ্যে এই নভোথিয়েটারে মহাকাশ গবেষণার লক্ষ্যে সফলভাবে স্থাপন করা হয়েছে পয়েন্ট ৫ মিলিমিটার অবজারভেটরি টেলিস্কোপ এবং ২টি সোলার টেলিস্কোপসহ প্রায় ১৪টির মতো নানারকম গবেষণাধর্মী টেলিস্কোপ।
আপডেট টাইম : বুধবার, জুলাই ১২, ২০২৩, ১৩০ বার পঠিত
Please follow and like us: