সুষ্ঠু ভোট চেয়েছিলাম কিন্তু এসে মার খেলাম : ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে হিরো আলম

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে যাবেন না বলে জানিয়েছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে হামলার শিকার স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। তিনি বলেছেন, এই সরকারের আমলে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনবার নির্বাচন করে মার খেয়েছি। প্রথমে ২০১৮ সালে, এরপর বগুড়ায় উপনির্বাচনে জিতেও ফল দেয়নি। আবার ঢাকায় উপনির্বাচন করতে এসে মার খেলাম। আমি চেষ্টা করেছি, সুষ্ঠু ভোট হোক, ভোটাররা ভোট দিতে আসুক। কিন্তু মার খেলাম। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে যাবো না।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বিকেলে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের দিন হামলাকারীদের শনাক্তে ডিবি পুলিশ প্রধানের সাথে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় তিনি ডিবি কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।

হিরো আলম ডিবি কার্যালয়ের ভেতরে সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলাম। সেখানে ভোটের শেষ মুহুর্তে আমার ওপর হামলা হয়। সেখানে হামলায় কারা কারা ছিল তাদের শনাক্তের জন্য আমাকে ডাকা হয়েছিল। আমি ডিবির প্রতি কৃতজ্ঞ তারা দ্রুত হামলাকারীদের ধরেছে, যা ভাবতেও পারিনি। আমি ভেবেছিলাম হামলাকারীরা ক্ষমতাশালী দলের লোক। তাদের হয়তো ধরবে না।

হিরো আলম বলেন, এই নির্বাচনে হামলায় আমি মারাও যেতে পারতাম। নির্বাচন নির্বাচন করে অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে। বউ স্বামী হারিয়েছে। যারা ক্ষমতাশালী দলের লোক তারা ঠিকই ক্ষমতা দেখায় ক্ষমতা আদায় করে। নির্বাচন করতে এসে যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। যারা হামলা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

হিরো আলম বলেন, আমাকে পছন্দ না হলে আমাকে ভোট দিয়েন না, এড়িয়ে যান। কিন্তু আমাকে মারার অধিকার দেয়া হয় নাই। সেদিন যেভাবে আমাকে মারা হয়েছে একমাত্র ওপর আল্লাহর জন্য আমি বেঁচে আছি। হামলাকারীরা আমাকে পাষণ্ডের মতো মেরেছে, তাদের বিবেকে বাধেনি। মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরও তারা আমাকে মেরেছে।

জড়িত হামলাকারীদের গ্রেফতারে ডিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেও ঘটনার সময় বিজিবির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হিরো আলম। তিনি বলেন, আমাকে যখন মারে তখন আমি কেন্দ্রের সামনে থাকা বিজিবির গাড়ির কাছে গিয়েছিলাম। তারা কিন্তু গাড়ি থেকেই নামেনি। কেন্দ্রের ভেতরে থাকা পুলিশ সদস্যরা যখন জানলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমকে মারা হচ্ছে এটা শুনেও তারা কেন বের হননি? বরং তারা আমাকে মারার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। এগুলোর তদন্ত হওয়া দরকার।

হামলার ঘটনা জড়িতরা কারা? তাদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, হামলা কারীদের গায়ে নৌকার সিল দেখেছিলাম। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কিছু লোকজন ছিল, কিছু ভাড়া করা লোক ছিল। কিছু আওয়ামী লীগের ব্যাচ পরা ছিল। প্রকৃত আওয়ামী লীগের কয়জন তা জানি না।

হামলার ঘটনা সাজানো এমনও শোনা গেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, হামলায় যদি আমার লোকই থাকে তবে তো আমার লোকই ধরতো। যাদের ধরে আনা হয়েছে তাদেরকে তো রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রিমান্ডে তারা যদি বলে ওরা আমার লোক, তাহলে আমি মাথা পেতে নেব।

স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে আপনি সাড়ে ৫ হাজারের মতো ভোট পেয়েছেন। অন্যরা অনেকে জামানত হারিয়েছেন, আপনার কী মনে হয়, একজন প্রার্থী যখন আক্রমণের শিকার হন, তখন এরকম ক্ষমতাসীন দলের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব?

এমন প্রশ্নের উত্তরে হিরো আলম বলেন, না এরকম নির্বাচন হলে…আমার মনে হয় কোনো দল যেহেতু নির্বাচনে আসতেছে না, সাধারণ মানুষ হয়তো মনে করেছিল আমরা কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করব। তারা আর কেউ নির্বাচনে আসবে না।

কারণ হিসেবে হিরো আলম উল্লেখ করে বলেন, কারো নির্বাচনের মাঠে একদিকে মার খেতে হচ্ছে, টাকা পয়সা যাইতেছে। তাদেরকে আবার মামলারও শিকার হতে হচ্ছে। মানুষ যদি এতো কিছু শিকার হয় তারা তো নির্বাচনে যাবে না। আমার মনে হয় না, আর কখনো কেউ নির্বাচনে আসতে পারে।

পুলিশ কি সেদিন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছিল জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, আমার ওপর যখন হামলা হয় তখন পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে সত্যি ব্যর্থ হয়েছিল। পুলিশ ইচ্ছা করলে তাদের কর্তব্য পালন করতে পারতো। প্রথমে একটা ছেলে আমাকে ঘুষি মারে। আমি কিন্তু দৌড়ে গিয়ে তাকে বলেছি এই ঘুসি মারলি কেন? আমি পুলিশকে বলছি, এই লোকটি আমাকে ঘুসি মেরেছে। পুলিশ কিন্তু তাকে ধরেনি। উল্টো আমাকে ধরে রেখেছিল। পুলিশের উচিত ছিল তাকে ধরা। তাহলে আর কেউ আমার উপরে হাত দিতে পারত না। সেদিন ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরা কেন নীরবতা পালন করেছিল সেটি আমি জানতে চেয়েছি ডিবি প্রধান হারুন সাহেবের কাছে।

জাল ভোট সম্পর্কে তিনি বলেন, হ্যাঁ সেদিন জাল ভোট পড়েছিল। আমার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে। একহাজার করে টাকা ভোট কেন্দ্রে দেয়া হয়েছে। একজন ৫০টা করে ভোট দিছে। ১২ বছর ১৩ বছরের ছেলে-মেয়েকে তারা ভোট দিতে পাঠাইছে, সিল মারতে পাঠাইছে। তারা ভোটারও না ভোটার তালিকায় তাদের নামও নেই।

১৩টি অ্যাম্বেসি ও মিশন আপনার পাশে দাঁড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যাতে সফল হয় সেটিকে ত্বরান্বিত করার জন্য তারা আপনাকে সমর্থন জানিয়েছে। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন- জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, এটাকে আমি সমর্থন করি এবং খুবই ভালোভাবে দেখি। এই যে অন্যায় অত্যাচার হচ্ছে, মায়ের বুক খালি হচ্ছে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনার হয়তো চুপচাপ সহ্য করতে পারে, কিন্তু বাইরের দেশ এমন না, একটা লোককে কুত্তার মতো পেটানো হয়েছে, ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে, সবাই তো আর এক না যে নীরবতা পালন করবে। তারা দেখছে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাই তারা (বিদেশীরা) কথাবার্তা বলছে।

আপনি আবারো নির্বাচন করবেন কিনা জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ‘না, এই সরকারের অধীনে আর আমি নির্বাচন করব না।’

উল্লেখ্য, উপনির্বাচনের দিন সোমবার (১৭ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের বাইরে একদল লোক হিরো আলমকে মারধর করেন। মারধরের হাত থেকে বাঁচতে হিরো আলম দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়েন। পরে তিনি রামপুরার বেটার লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ১৫-২০ জনকে আসামি করে বনানী থানায় মামলা করেন হিরো আলমের ব্যক্তিগত সহকারী মো: সুজন রহমান শুভ।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১