ড. ইউনূসের পক্ষে চি‌ঠি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অবমাননা

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশ্বনেতাদের খোলা চিঠি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার প্রতি অবমাননা হি‌সে‌বে দেখ‌ছে সরকার। একইস‌ঙ্গে বিশ্ব নেতা‌দের চি‌ঠি ত‌থ্যের ঘাট‌তির কার‌ণে হ‌য়ে‌ছে ব‌লেও ম‌নে করা হ‌চ্ছে।

শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ড. ইউনূস‌কে নি‌য়ে বিশ্ব নেতা‌দের খোলা চি‌ঠির জবা‌বে এক বিবৃ‌তি প্রকাশ ক‌রে‌ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে এসব বলা হয়েছে।

বিবৃ‌তিতে বলা হয়, একদল আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব এবং কিছু বাংলাদেশি নাগরিক ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রমের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। সেটি বাংলাদেশ সরকারের নজরে এসেছে। এটি তথ্যের ঘাট‌তির কারণে হয়েছে। এ খোলা চিঠি দেওয়ার অর্থ- বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার প্রতি অবমাননা করা। এটি সরকারের কাছে বিস্ময়কর যে, চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা ইতোমধ্যে সাব-জুডিশিয়া‌রি মামলার বিচারিক কার্যক্রমের ফলাফল সম্পর্কে তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।

এতে উল্লেখ করা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাংলাদেশ দণ্ডবিধি এবং মানি লন্ডারিং বিরোধী আইন, ২০১২ সুনির্দিষ্ট বিধানের অধীনে এমন একটি মামলা দায়ের করেছে। গ্রামীণ টেলিকম লিমিটেডের শ্রমিক ও কর্মচারীদের কারণে লাভের অপব্যবহার সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তের ভিত্তিতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। দুদকের তদন্ত দল দেখতে পেয়েছে যে, গ্রামীণ টেলিকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অন্যান্য বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে চুক্তি জাল করে অবৈধভাবে ২৫২ মিলিয়ন টাকা হস্তান্তর করেছেন।

আর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ঢাকা বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন না করা এবং সেখানে মুনাফার ৫ শতাংশ টাকা জমা না দেওয়াসহ একাধিক অভিযোগের জন্য মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। এছাড়া কর ফাঁকির মামলায় ড. ইউনূস সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে হেরে যাওয়ায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগে আবেদন করেন।

বিবৃ‌তি‌তে বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে আপিল বিভাগ কোনো দুর্বলতা ও বেআইনি খুঁজে না পেয়ে আবেদনটি খারিজ করে দেন। যার ফলে ড. ইউনূস জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বকেয়া কর পরিশোধ করেন। তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে।

শ্রমিকদের ন্যায্য লাভ থেকে বঞ্চিত করার মামলায় ড. ইউনূস দুই দফায় সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন। তার আইনজীবীদের শুনানি করে সর্বোচ্চ আদালত প্রথম মামলাটি সঠিকভাবে শুরু হয়েছে বলে রায় দেন। পাশাপাশি অন্যটিতে অভিযোগ গঠনকে আইনি, সঠিক ও সঠিক বলে ঘোষণা করেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এটি দুঃখজনক যে, চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা সাব-জুডিস মামলাগুলো স্থগিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বিচার বহির্ভূত কর্তৃত্ব প্রয়োগ করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তারা ড. ইউনূস এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পর্যালোচনার একটি বিকল্প প্রক্রিয়ার সুপারিশ করেছেন, যেটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

ইউনূস এবং তার সহযোগীদের আইনি পরিণতির মুখে আন্তর্জাতিক লবিংয়ের আশ্রয় নেওয়া প্রথমবার নয়। গ্রামীণ ব্যাংক সার্ভিস রুলস, ১৯৯৩ অনুযায়ী নির্ধারিত অবসরের বয়সসীমা অতিক্রম করে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে চুক্তি বাতিল করার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত ছিল তার। একটি সার্বভৌম দেশের নাগরিকের জন্য বারবার বহিরাগত হস্তক্ষেপ চাওয়াটা অগ্রহণযোগ্য।

বিবৃ‌তি‌তে বলা হ‌য়ে‌ছে, বাংলাদেশের জনগণের কাছে এটি এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, কর্পোরেট ও আয়কর ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর ধরে কর্মীদের বঞ্চিত করে ড. ইউনূস পাচারকৃত অর্থের একটি বড় অঙ্ক বিনিয়োগ করেছিলেন। নিপীড়ন বা হয়রানির অভিযোগগুলো এমন একটি প্যাটার্ন অনুসরণ করে, যা মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রকে একটি সমীচীন আবরণ হিসেবে ব্যবহারের শিকারের মানসিকতা থেকে উদ্ভূত বলে মনে হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হ‌য়ে‌ছে, চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে অযৌক্তিক ইঙ্গিত দেওয়ার পরিবর্তে আইনের সীমার মধ্যে কাজ করার জন্য ড. ইউনূসকে পরামর্শ দেওয়া উচিত। সরকার পুনর্ব্যক্ত করতে চায় যে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রচারের অজুহাতে কোনো প্রকার হুমকি বাংলাদেশের জনগণকে আইনের শাসন বজায় রাখা থেকে বিরত রাখ‌তে পার‌বে না।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০