সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর বাড়ির চলতি বিদ্যুৎ বিল ৩২ টাকা, বকেয়া বিল ৯ লাখ

লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বাড়ির বিদ্যুতের মাসিক বিল ৩২, ৫২, ৭২, ৬৫ টাকা করে দেখিয়েছে নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)।তার পুরো পরিবারের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে ৯ লাখ টাকার বেশি। মাসের পর মাস বিল পরিশোধ না করা হলেও তা আদায়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না নেসকো।

নেসকো থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ উপজেলা) আসনে টানা দুই বারের আওয়ামী লীগের এমপি এবং কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিরাম গ্রামের প্রয়াত এমপি করিম উদ্দিন আহমেদের ছেলে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নামে একটি সেচ সংযোগ রয়েছে। যার ডিজিটাল কনজুমার নম্বর ২৮০০৪৮৯৪; মিটার নম্বর ৫১৫৬২৫১৩। এ মিটারে প্রায় চার বছরে ৬১ হাজার ৩৪৪ টাকা বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে। এখনো তা বকেয়া রয়েছে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত গড়ে প্রতিমাসে সাড়ে ৯ হাজার টাকার বিল দেখানো হলেও জুন ও জুলাই মাসে শূন্য বিল দেখানো হয়েছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ১৭ হাজার ২৩৬ টাকা বিল দেখানো হলেও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে শূন্য বিল দেখানো হয়েছে। গত বছর এপ্রিল মাস বিল দেখানো হয়েছে ৮০৪ টাকা এবং মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিমাসে বিল দেখানো হয়েছে ১৮০ টাকা।

মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নামে আরও একটি আবাসিক সংযোগ রয়েছে। সেখানেও একই অবস্থা। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে ৩২ টাকা। এছাড়া কোনো মাসে ৭২ টাকা আবার কোনো মাসে ৫২ টাকা, ৬৫ টাকা, ১১১ টাকা বিল দেখানো হয়েছে। সর্বোচ্চ একটি বিল ২৪০৮ টাকা দেখানো হয়েছে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে। এ সংযোগেও গত প্রায় চার বছরে বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে ১১ হাজার ৬২০ টাকা, যা এখনো বকেয়া রয়েছে।

মন্ত্রীর একমাত্র ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ একজন কলেজশিক্ষক ও লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি নেসকোর একজন আবাসিক গ্রাহক। তার বাড়িতে ব্যবহৃত মাসিক বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে ৭২ টাকা, ১১১ টাকা, ১৫১ টাকা, ১৮৯ টাকা, ২২৯ টাকা ও ৫১২ টাকা। শুধু চলতি বছর জুলাই মাসে সর্বোচ্চ বিল ১৩,৫৬১ টাকা প্রস্তুত করা হয়েছে। গেল প্রায় চার বছরে বিল দেখানো হয়েছে ৭৯ হাজার ৯৯৫ টাকা, যা এখনো বকেয়া রয়েছে।

মন্ত্রীর ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুর একটি বাণিজ্যিক সংযোগে গেল প্রায় চার বছরে বিল বকেয়া রয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ১১৩ টাকা। তার নামে একটি সেচ পাম্পের সংযোগও রয়েছে। গেল চার বছর ধরে বিল বকেয়া রয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১১ টাকা। তার বাবা প্রয়াত এমপি করিম উদ্দিন আহমেদের নামে একটি আবাসিক সংযোগ রয়েছে। এ সংযোগটিও ব্যবহার করছেন তিনি। এ সংযোগে মাসিক বিল দেখানো হয়েছে ৬৩ টাকা, ১৭২ টাকা, ২৯৪ টাকা, ২৮০ টাকা। সর্বোচ্চ বিল ৪৯৬ টাকা দেখানো হয়েছে ২০২২ সালের আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে। গেল চার বছরে বিল দেখানো হয়েছে ১৮ হাজার ৫৭৭ টাকা। এখনো বকয়ো রয়েছে এসব বিল।

স্থানীয়রা জানান, এসি, ফ্রিজ, ফ্যানসহ সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক পণ্য ব্যবহৃত হয় মন্ত্রী, তার ছেলে ও তার ছোট ভাইয়ের বাড়িতে। তাদের সেচ পাম্প থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে জমিতে ধান ও ভুট্টা চাষ করতে পানি সরবরাহ করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা হাসান আব্দুল মালেক বলেন, ১৭ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় নেসকো কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। নেসকো কর্তৃপক্ষ শুধু সাধারণ গ্রাহকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে, কিন্তু তারা প্রভাবশালী গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে নিশ্চুপ থাকে।

মন্ত্রীর ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ বুধবার গণমাধ্যমকে জানান, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে কি না তিনি তা জানেন না। এ বিষয়ে তাদের ম্যানেজার বলতে পারবেন।

রংপুর নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, অনেক গ্রাহকের বিল বকেয়া রয়েছে। বকেয়া বিল আদায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করতে কোনো গাফিলতি করা হয়েছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করতে কোনো অসঙ্গতি হয়েছে কি না খতিয়ে দেখা হবে। এজন্য আগামী সপ্তাহে আমি নিজেই কালীগঞ্জ অফিস পরিদর্শনে যাব। অনিয়ম হলে অবশ্যই বিদ্যুৎ আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০