যশোর-খুলনা মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলে বেহালদশা

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ যশোর-খুলনা মহাসড়কের যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলা ও বসুন্দিয়া অংশে উচুঁনিচু। যে কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এই সড়কে সম্প্রতি কয়েক জন দুর্ঘটনায় প্রাণও হারিয়েছেন। অনেকেই আবার আহত হয়ে হাসপাতালের বেডে রয়েছেন। এখানে দূর্ঘটনা হরহামেশা ঘটেই থাকে। কেউ বলছেন সড়কে অতিরিক্ত মালামাল বোঝাইকৃত অংসখ্য গাড়ি চলাচলে রাস্তা দ্রুত নষ্ট হয়। আবার কেউ কেউ বলেছেন ঠিকাদারি অনিয়মে রাস্তা যথাযথ হয়নি। রাস্তা নষ্টের জন্য এই অনিয়মই দায়ি।

সূত্র জানায়, যশোর-খুলনা মহাসড়কের অভয়নগর অংশে ৮ কিঃমিঃ ফের খানা-খন্দের সৃষ্টি হয় কিছু দিন আগে। ৩২১ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর-খুলনা মহাসড়কের ৩৮ কিলোমিটারের নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই ৮ কিলোমিটার অংশ জুড়ে ফুলে ফেঁপে ওঠে। সেই থেকে সড়কের নির্মাণ কাজ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সড়কের নির্মাণ কাজের এ অনিয়ম নিয়ে তোলপাড় হয় সড়ক বিভাগে। ক্ষুব্ধ হন সড়ক পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপর। পরবর্তীতে সড়কের এ অনিয়ম ঢাকতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের ফুলে ফেঁপে ওঠা ৮ কিলোমিটার জুড়ে শুরু করে জোড়াতালির কাজ। নতুন নির্মিত সড়কটিতে একের পর এক চলতে থাকে সংস্কার কাজ। এর পর আরো ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা সংস্কার ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়।

কিন্তু বিভিন্ন ভাবে জোড়াতালি দিয়েও অনিয়ম ঢাকতে পারেনি ঢাকার অন্যতম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন। বৃষ্টিতে সকল জোড়াতালি উঠে সড়কে বড় বড় খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সড়কটিতে চলাচল রীতিমত বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে সড়কটির নির্মাণ ব্যয় ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। পরামর্শকের সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সওজ।

স্থানীয়রা জানান, ৮ কিলোমিটার সড়কে সৃষ্টি হয়েছিল উঁচুনিচু অবস্থা। সেই জায়গা গুলো জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করলেও বর্ষায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে অভয়নগর ও যশোর সদরের সীমান্তবর্তী প্রেমবাগ স্কুল গেট থেকে শুরু করে বেঙ্গল রেলগেট পর্যন্ত এসকল খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। তবে আলীপুর এলাকার মজুমদার মিলের সামনে, বেঙ্গলগেট এলাকা, চেঙ্গুটিয়া বাজার, রাজটেক্সটাইল মিলের সামনে, ভাঙ্গাগেট রেল ক্রসিং, নওয়াপাড়া বেতারের সামনে ও প্রেমবাগ গেট, মহাকালের আগে গর্তগুলো বিপজ্জনক অবস্থা সৃষ্টি করেছে। একের পর এক ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। এ দুর্ঘটনায় কয়েক দিন আগে কয়েকজন প্রাণও হারিয়েছেন। এবং অনেকেই আহত হয়ে হাসপাতালের বেডে পড়ে আছেন।
ট্রাক চালক মোঃ আলামিন হোসেন, আলম হোসেন, ইকবাল, ইবাদুল ইসলাম বলেন, যশোর-খুলনা মহাসড়কটি নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সড়কের মূলচিত্র ধরা পড়েছে। যে অবস্থা অচিরে সড়কের কাজ ঠিক না করলে যানবাহন চালানো দুস্কর হয়ে পড়বে।সচেতন মহল জানান, এই সড়ককে ঘিরে অনেক অনিয়মনের তথ্য চিত্র বিভিন্ন পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে।সূত্র আরো জানায় , ২০১৮ সালের মে মাসে এ সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০২০ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু কাজের শুরুতেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। পরে ২০২২ সালে সড়কের কাজ শেষ হয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়ক উন্নয়নের এ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রের কোন নিয়মনীতি মানেনি। তারা গোজামিল দিয়ে ইচ্ছামত কাজ চালিয়ে যায়। অভিযোগে বলা হয়েছিল, ঠিকাদাররা সড়কের পুরনো বৃটিশ আমলের লোনা ধরা ইট ও খোয়া তুলে সেটা আবার ভেঙ্গে গর্তে ব্যবহার করেছেন। যা দরপত্রে বলা হয়নি। এছাড়া, সড়কটি ৫ ফুট গর্ত করে ভিত তৈরির নির্দেশনা থাকলেও সেই নিয়ম মানেনি। সড়কে নতুন ইট বালি, খোয়া ব্যবহার না করে খুঁড়ে উঠানো মালামালই ফের ভরাট করা হয়েছে। তাছাড়া ভৈরব নদ থেকে উত্তোলিত নি¤œমানের কাঁদাযুক্তবালি সড়কে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। ফলে সড়কের নির্মাণ কাজ চলমান থাকাবস্থায় ৮ কিলোমিটারসহ সদরের সড়ক ফুলে ফেঁপে ওঠে।
ওই সময় সরকার বুয়েটের একজন শিক্ষককে পরামর্শক নিয়োগ করেন। তিনি সরেজমিন ঘুরে সড়কের দুই পাশে ওয়ারিং করার সুপারিশ করেন। সেই সুপারিশের আলোকে সরকার পুনরায় সড়কটি নির্মাণে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করে আরও ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ করে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফ মাহমুদ জানান, পরামর্শকের সুপারিশ অনুযায়ী সড়কের দুই পাশে হার্ডসোল্ডার ওয়ারিং করা হবে। কেননা রাস্তার পাশে দেড় মিটার নিচু থাকার কারণে গাড়ির চাপ পড়ছিল রাস্তার মাঝখানে। যে কারণে সড়কের নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। একনেক সভায় সরকার এই টাকা বরাদ্দ করে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়ক উন্নয়নের এই কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রের কোনো নিয়মনীতি মানেনি। তারা গোঁজামিল দিয়ে কাজ করেছেন। ঠিকাদারেরা সড়কের পুরোনো ইট ও খোয়া তুলে সেটাই আবার ব্যবহার করেছেন। সড়কটি ৫ ফুট গর্ত করে ভিত তৈরির নির্দেশনা থাকলেও তা মানেননি। তা ছাড়া ভৈরব নদ থেকে উত্তোলিত নি¤œমানের কাদাযুক্ত বালু ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে সড়কের নির্মাণকাজ চলা অবস্থায় ৮ কিলোমিটার ফুলে ওঠে।

যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক নিয়ে ইজিবাইকচালকরা জানান, চূড়ামনকাটি বাজার ও শানতলা ফিলিং স্টেশনের সামনের রাস্তাটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাতে চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। প্রায়ই রাস্তার পাশে পড়ে গিয়ে কাদা-পানি মেখে বাড়ি ফিরতে হয়।
অটোরিকশাচালক আব্দুল হোসেন জানান, রাস্তার অবস্থা এ কদিনের বৃষ্টিতে খুবই খারাপ হয়েছে। সড়কে চলাচলই কঠিন হয়ে পড়েছে।

সড়কের অবস্থা খারাপ, বিষয়টি নিশ্চিত করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ যশোরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফ মাহমুদ জানান, সম্প্রতি বুয়েটের একটি পরামর্শক দল যশোর-খুলনা মহাসড়ক পরিদর্শন করেছে। এবার তাঁদের সুপারিশ অনুযায়ি কাজ করা হচ্ছে।
যশোর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, যশোর-খুলনা, যশোর-ঝিনাইদহ সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত মেরামতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০