বগুড়ায় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী ‘ভাসু বিহার’

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ইউনিয়নে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে ‘ভাসু বিহার’। ভাসু বিহার বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর মধ্য একটি। উপজেলার এই স্থানটি স্থানীয়দের কাছে নরপতির ধাপ নামে বেশ পরিচিত। ভাসুবিহার শিবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার এবং বগুড়া সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে ও মহাস্থানগড় থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে বিহার বন্দরের কাছে নাগর নদীর তীরে অবস্থিত।

বিখ্যাত চীনা পর্যটক হিউন সাঙ (সপ্তম শতাব্দীর মধ্যভাগ) তার ভ্রমণ বিবরণীতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি মহাস্থানগড় থেকে ৪ মাইল দূরে একটি মঠ দেখেছিলেন।

তিনি ভাসু বিহার কে ‘পো- শি- পো’ মন্দিরের অবশেষ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। হিউন সাঙ এই মন্দিরটিকে তার অঞ্চল হাইট এ বিখ্যাত মন্দির হিসাবে বর্ণনা করেন। কমপক্ষে সাত শতাধিক ভিক্ষু সন্ন্যাসীরা এই বিহারে অবস্থান করছিলেন এবং বহু বিদ্বান ভিক্ষু ও বুদ্ধিজীবী একত্রিত হত।

বিহারটিতে মূল তিনটি মূল স্থাপত্য রয়েছে। এর মধ্য দুটি বৌদ্ধদের ধ্যানের জন্য ব্যবহার করছিলেন ও এটি বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত ছিল। আর অন্যটি ছিল প্রার্থনার জন্য।

এখানে আরও একটি জায়গা রয়েছে যার নাম ‘টুটা রাম পণ্ডিতার ধাপ’ বা ‘পণ্ডিত ভিটা’ জায়গাটার আরেক নাম ‘ভাসু বাজার’। এছাড়া এর পাশে একটি দীঘি (বড় পুকুর) রয়েছে। এই জায়গাটি বৌদ্ধদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র।

জানা গেছে, তৎকালীন শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনারের মেয়ের বিবাহ এই বিহারে হয়েছিল। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সালে এখানে খনন কাজ শুরু হয় এবং পরপর দুটি অধিবেশনে এটি পুনরায় চালু করা হয়।

খননকালে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ কর্তৃক বেশির ভাগ পাল বংশের প্রাচীন ১৮টি সিলমহর এবং দুটি ইট নির্মিত কাঠামো আবিষ্কার করা হয়েছিল। এই অবকাঠামোটি ৪৯ মিটার উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৪৬ মিটার রং এর চার বাহুতে ভিক্ষুদের ছয়টি কক্ষ রয়েছে। কতোগুলোর সামনের দিকটি বারান্দা দ্বারা বেষ্টিত এবং পূর্ব পার্শ্বের মাঝখানে একটি প্রবেশ দ্বার রয়েছে।

বড় মঠটি দেখতে ছোট বিহারের মত লাগে তবে ক্ষেত্র ফলে বৃহত্তর এবং আরও কক্ষ রয়েছে। সন্ন্যাসীদের ছোট কক্ষগুলির চারপাশে একটি খোলা যায়গা রয়েছে। মনে করা হয় খোলা যায়গা একটি মিলয়াতন ছিল।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ