কুড়িগ্রাম-৩ সংসদীয় আসনে প্রার্থিতার লড়াইয়ে বহুমুখ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাকের পার্টির মধ্যে তোড়জোড় থাকলেও তৎপরতা নেই বিএনপি।

ভোটের হিসাব-নিকাশ মিলানোর জন্য ঘর গোছাতে ব্যস্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি বর্তমানে আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত। ফলে আপাতত প্রার্থী নিয়ে তাদের কোনো আলোচনা নেই।

১টি পৌরসভাসহ ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) সংসদীয় আসনে চলতি বছরের ৩১ মার্চের হালনাগাদ তালিকায় মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭৪০জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৪১ এবং নারী ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৯৯।

এই আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে তিনবার ১৯৭৩, ১৯৯১ ও ২০১৮ সালে। এ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখনও জয়ের মুখ দেখেনি। তবে সামান্য ব্যবধানে বারবার হেরে গেছে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী।

১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) সংসদীয় আসন হাতছাড়া করেনি জাতীয় পার্টি (জাপা)। বিপুলসংখ্যক ‘ভোটব্যাংক থাকায় দলটির প্রার্থীর বিপরীতে সুবিধা করতে পারেননি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তবে সাংগঠনিকভাবে জাপা আর আগের জায়গায় নেই। বর্তমানে এ দলটিতেও আধিপত্য নিয়ে কোন্দল চলছে।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক এমএ মতিন। অন্যদের মধ্যে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহসান হাবীব রানা, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাজাদুর রহমান তালুকদার সাজু, সংগঠনের সাবেক সভাপতি মতি শিউলি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় জাতীয় পরিষদের সদস্য সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে গবা প্রমুখ।

এদিকে জাপার সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন সংগঠনের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা জেবুন্নেসা রহমান টুম্পা, উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন প্রমুখ। তারা উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের সাথে কমবেশি যোগাযোগ রাখছেন। তবে জাপার তৃণমূলের নেতৃবৃন্দের দাবি তারা স্থানীয় ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় আছেন জেলা বিএনপির সভাপতি তাসভীর-উল ইসলাম ও রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক। মাঝে মধ্যেই এলাকায় এসে তারা জনসংযোগ করছেন।

এদিকে এবার জাপায় না থাকলেও আলোচনায় আছেন সাবেক এমপি ডা. আক্কাছ আলী সরকার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগ দেওয়া এ নেতা দলটির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভাগাভাগি হতে পারে জাপার ভোটব্যাংক।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাকের পার্টি গত ২০ জুন উলিপুর বণিক সমিতি কার্যালয়ে কুড়িগ্রাম-৩ আসনে জাকের পার্টির এমপি প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যে জাকের পার্টি, সহযোগী সংগঠন, মহিলা ফ্রন্ট, ছাত্রী ফ্রন্টের স্থানীয় নেতাকর্মী, সমর্থক, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের স্বত:স্ফূর্ত উপস্থিতি, কলরব, উচ্ছাস, উৎসবমুখর পরিবেশে নিজের পছন্দের প্রার্থী বাছাইকল্পে ভোটদান-সবই ছিল অত্যন্ত ব্যতিক্রমী।

এতে জাকের পার্টি, যুবফ্রন্ট উলিপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাজাদুল ইসলাম সাজু ১৩৬ ভোট ও জেলা জাকের পার্টির সভাপতি সাহেব মিয়া-১০৯ ভোট পান। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এই কাউন্সিলে সাজুকে বিজয়ী ঘোষণা করে জাকের পার্টির প্রার্থী নির্বাচন করেন।

কাউন্সিলের পর থেকে জাকের পার্টি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীদের নিয়ে  উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার অনুষ্ঠান করে কল্যাণ রাষ্ট্রের রুপরেখা বাস্তবায়নের জন্য সমর্থন চেয়ে গণসংযোগ করছে।

অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদের সাঈদ আখতার আমীন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি দেলোয়ার হোসেন ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হাবিবুর রহমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ