রাবি শাখা ছাত্রলীগের কোন্দল মিটালেন লিটন

রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব ও বিতর্কের অবসান ঘটালেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।

আজ মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাতে রাবি ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ ও আন্দোলনরত পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে তিনি কোন্দল নিরসন করেন।

নগর ভবনে আয়োজিত বৈঠকে রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে রাবি ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ ও আন্দোলনরত পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও রাসিক এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু সেটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে অন্তকোন্দলে জড়িয়ে পড়লে চলবে না।

রাবি ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত ও সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচনকে মাথায় রেখে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. আসলাম সরকার, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জিয়া হাসান আজাদ হিমেল, শ্রম সম্পাদক আব্দুস সোহেল, মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন, রাজপাড়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান বাবু, রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিয়াম, সাধারণ সম্পাদক ডা. সিরাজুম মুবিন সবুজ।

এছাড়া বৈঠকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিব উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, বর্তমান সহ-সভাপতি শাহীনুল ইসলাম সরকার ডন ও তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয়, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ, ছাত্রলীগ নেতা অনিক মাহমুদ বনি ও সাকিবুল হাসান বাকি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এরআগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিকে ঘিরে তৃতীয় দিন মঙ্গলবারের উত্তেজনা ছিল ক্যাম্পাসজুড়ে। সকাল থেকেই দলীয় টেন্টে কাঙ্খিত পদবঞ্চিতদের অবস্থান, শোডাউন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশ গেট এবং কাজলা গেটে তালা দেওয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত ছিল ক্যাম্পাস।

এছাড়া প্রথমদিনে মারধরের ঘটনায় আন্দোলনকারী ৪০জন কাঙ্খিত পদবঞ্চিতদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগী শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক আরব হোসেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ মার্কেটের শিমুল কম্পিউটার দোকানের সামনে অতর্কিত হামলার শিকার হন আরব হোসেন।

এসময় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে জিআই পাইপ ও লোহার রড দ্বারা মারধর করা হয় এবং একজন তার স্বর্ণের চেইন কৌশলে নিয়ে নেয়। এতে তিনি শারীরিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এ ঘটনায় তিনি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, সদ্য ঘোষিত কমিটির সহ-সভাপতি শাহীনুল সরকার ডন ও তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয়, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ ও শামীম হোসেন, শাহ মখদুম হল শাখা ছাত্রলীগের তানজিল হোসেন, আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স বিভাগের শামিম মাহবুব সজীব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মইনুল ইসলাম তপু সহ অজ্ঞাত ৪০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলার আবেদন করেছেন।

এ বিষয়ে নগরীর মতিহার থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, একটি মামলার আবেদন পেয়েছি। সেটি যাচাই-বাছাই করে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এদিকে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রাজশাহীতে অবস্থানরত নতুন নেতৃবৃন্দের ক্যাম্পাসে প্রবেশ ঠেকাতে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটে ও পরে মেইন গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় কাঙ্খিত পদবঞ্চিতরা। এবিষয়ে আন্দোলনকারীদের একজন ও নবগঠিত কমিটির সহসভাপতি শাহিনুর ইসলাম বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মহানগর ছাত্রলীগসহ বহিরাগতদের নিয়ে নগরের রানীবাজার এলাকায় জড়ো হয়েছেন।

তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেন এ কারণে তারা বহিরাগত ঠেকাতে তালা ঝুলিয়ে দেন। তালা লাগানোর কারণে দুই গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অন্যরা ভোগান্তিতে পড়েন। পরবর্তীতে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর তাদের কাছে চাবি নিয়ে দুই গেটেরই তালা খুলে দেন।

এরপর থেকে দুই গেট দিয়ে পরিচয়পত্র দেখিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা। এসময় দর্শনার্থী কিংবা বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধ করা হয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, পদবঞ্চিতরা গত দুইদিন যাবত ক্যাম্পাসে আন্দোলন করে চলেছে।

তারই ধারাবাহিকতায় তারা গেইট বন্ধ রাখবে বলে আমাদের জানিয়েছিল। তখন আমরা গেট বন্ধ না করে স্বাভাবিকভাবে তাদের বক্তব্য যেখানে জানানো দরকার সেখানে জানাতে বলেছিলাম। এর প্রেক্ষিতে তারা গেটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখার অনুরোধ করেছিল এবং সে দায়িত্ব আমি নিই।

এরপরও তারা গেটে তালা দেয়। এরপরে আমি ফোন দিলে তারা চাবি পাঠিয়ে দেয়। তারপর আমি গেটে তালা খুলে দিয়েছি। ক্যাম্পাসে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, এটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমরা তাদেরকে বলে দিয়েছি এখানে কোনো বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। এ বিষয়ে আমরা শক্ত অবস্থানে রয়েছি।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ