গবেষণাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল নেতৃত্ব দিবে: শেখ হাসিনা

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা প্রদান করার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘চিকিৎসা গবেষণাতেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দিবে। কেননা নিজস্ব গবেষণা ব্যতীত পরীক্ষিত, গ্রহণযোগ্য ও দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা দুরূহ ব্যাপার।’

আগামীকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দিবস উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ৫ম বারের মত ‘গবেষণা দিবস’ উদযাপন করতে যাচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এই দিবস উপলক্ষ্যে আমি বিশ্ববিদ্যালয়টির সকল শিক্ষক, চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।”

তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মৌলিক অবকাঠামো পুনর্গঠনের পাশাপাশি দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা গবেষণাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে, যার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গবেষণার বুনিয়াদ সৃষ্টি করা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব নেবার পর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় দৈনন্দিন চিকিৎসাসেবা প্রদানের পাশাপাশি গবেষণা ও শিক্ষা কর্মকান্ডকে অগ্রাধিকার দিয়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে চলছে। আমরাই প্রথম ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে গবেষণার জন্য ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করি, যা পরবর্তীতে ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করি। তাছাড়া, চলতি অর্থবছরেও তরুণদের গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি।’

তিনি বলেন, সরকার দেশের সকল মানুষের জন্য গণমুখী স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালু করেছে। হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি, সাধারণ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এবং বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা বিস্তৃত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে মেডিক্যাল শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক সম্প্রসারণ করা হয়েছে। একই সাথে চিকিৎসা গবেষণার গুরুত্ব আরো বেড়ে গেছে। সরকার প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনায় মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হলো দেশে রোগীরা যাতে স্বল্পমূল্যে সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা দেশেই পায় এবং চিকিৎসার জন্য রোগীদেরকে বিদেশে যেতে না হয়। সর্বোপরি, চিকিৎসাসেবা খাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে গবেষণা বেগবান করার জন্য এ্যামেরিটাস অধ্যাপক নিয়োগ করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়ে গবেষণা খাতে ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আবাসিক চিকিৎসকদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে ‘উপাচার্য গবেষণা পুরস্কার’ সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, গত বছর অধিকতর জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ২৪ জন গবেষক, শিক্ষক ও চিকিৎসককে পিএইচডি কোর্সে এনরোলমেন্ট করেছে। এ বছর ৩০ জন গবেষক, শিক্ষক ও চিকিৎসককে পিএইচডি কোর্সে এনরোলমেন্ট করেছে। তাছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও চিকিৎসকদের গবেষণার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা পরিচালনা এবং জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য এআইআইএমএস, ব্রাউন ও শিকাগো এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল নিয়মিত প্রকাশ করেছে, যা আমাকে আশান্বিত করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘গবেষণা দিবস ২০২৩’ উদযাপন খুবই সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত গবেষক, চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট সকলে তাঁদের শ্রম, মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে উন্নীত করতে সদা সচেষ্ট হবেন। আমরা দেশে সমন্বিত উন্নয়নের অগ্রযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম জাতি গঠনে সমর্থ হব, ইনশাল্লাহ্।’

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘গবেষণা দিবস-২০২৩’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

সূত্র: বাসস।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ