বগুড়া পৌর এডওয়ার্ড পার্ক

ষ্টাফ রিপোর্টার: বগুড়া জেলায় সরকারের প্রচেষ্টায় ১৯০১-১৯০৫ খ্রি: জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কুমার রমেন্দ্র কৃষ্ণ দেব রায় বাহাদুর তার একচেটিয়া প্রচেষ্টায় “এডওয়ার্ড পার্ক”প্রতিষ্ঠিত। মহারাণী ভিক্টোরিয়া এর পুত্র (ভারতের সম্রাট ৭ম এডওয়ার্ড) আলব্রেট এডওয়ার্ড (১৮৪২-১৯১০) এর নামানুসারে “বগুড়া এডওয়ার্ড পার্ক ” নামকরণ করা হয়।

পরবর্তী সময়ে তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জে. এন গুপ্তের বলিষ্ঠ সম্পাদনায় ইহার ব্যাপক সম্প্রসারণ কার্য সংগঠিত হয়। পার্ক মধ্যস্থ “আনন্দ সরোবর”টি কাজলার সেন বংশীয় জমিদার আনন্দ চন্দ্র সেনের অর্থানুকূল্যে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে খনিত হয়। পার্ক মধ্যস্থ (ভারতের সম্রাট ৭ম এডওয়ার্ড) আলব্রেট এডওয়ার্ড আবক্ষ মুর্তি”টি বগুড়ার মরহুম নবাবজাদা সৈয়দ আলতাফ হোসেন কর্তৃক স্থাপিত হয়। পার্ক মধ্যস্থ কৃত্রিম ফোয়ারা”টি তদানীন্তন আদমদিঘীর জমিদার সতীশচন্দ্র নিয়াগী মহাশয় প্রতিষ্ঠা করেন। পার্কের পশ্চিম পাশ্বস্থ গ্রীন হাউস এবং কৃত্রিম পাহাড়টি ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া জেলার তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এন. এল বাগচী কর্তৃক স্থাপিত হয়। তৎকালীন সময়ে গ্রীন হাউসে বিদেশি গাছ-গাছলা টবে সুসজ্জিত অবস্থায় রক্ষিত ছিল। বর্তমানে গ্রীন হাউসটি (ব্যায়ামগার সংলগ্ন) অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে।

পাক-ভারত বিভাগের পূর্ব কালে এখানে একটি বৃহৎ বাগান ছিল। ইহাতে দেশ-বিদেশের বিবিধ প্রজাতি ও রঙ্গের ফুল এবং চারাগাছ বিদ্যমান থাকিয়া ইহা জনসাধারনের দৃষ্টি আকর্ষন করিত। উত্তর বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্থানের মধ্য ইহা একটি অপূর্ব সৌন্দর্য নিকেতন ছিল এবং বিদেশী পর্যটক মাত্রই ইহার সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হইতেন। এখানে একটি টেনিস গ্রাউন্ড, ফুটবল গ্রাউন্ড, পেয়ারা, আম্র, লেবু প্রভৃতির বাগান দ্বারা সুসজ্জিত ছিল।

এই পার্কের বিশেষ আকর্ষনীয় স্থাপনা উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরী এবং ড্রামাটিক এডওয়ার্ড হল (বর্তমানে এটি শহীদ টিটু মিলনায়তন নামে পরিচিত)। সেই সময়ে এই হলটি শহরের “টাউন হল” (বাক্যশালা) হিসাবে ব্যবহৃত হত। তাছাড়া পার্কে রয়েছে আধুনিক জিম।

কিছুকাল পূর্বে পার্কটি বগুড়া সদর পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন করা হলে বগুড়া পৌর এডওয়ার্ড পার্ক নামে নামকরন করা হয়। বগুড়া সদর পৌরসভার উদ্যোগে পার্কটির সংস্কার করা ও শ্রীবৃদ্ধি করা হয়। শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য খেলাধুলার উপকরণ সামগ্রী স্হাপন করা হয়। বর্তমান সময়ে পার্কটি বগুড়া শহরের অন্যতম প্রমদ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

ঐতিহ্য ঘেরা বগুড়া এডওয়ার্ড পৌর পার্ক, বিকেল বেলা বগুড়া এডওয়ার্ড পার্কে শিশুদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে আনন্দ খেলায় মেতে ওঠে দুষ্টু মিস্টি শিশুরা। বগুড়া শহরে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে শিশুদের খেলাধুলার জায়গা, বগুড়া এডওয়ার্ড পার্কের এই জায়গাটি যেন শিশুদের প্রাণ ফিরিয়ে দেয়।প্রায় ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বগুড়া পৌর পার্কে ‘পৌর স্বাধীনতা চত্বর’ নির্মাণ করা হচ্ছে। বগুড়া পৌর এ্যাডওয়ার্ড পার্কের ওস্তাদ আলাউদ্দিন মঞ্চের স্থলে এ বছরের মধ্যেই এর নির্মান কাজ শেষ হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বগুড়াবাসীর অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে এই স্বাধীনতা চত্বরটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

এটি পৌরসভার অর্থায়নে নির্মিত হলে বগুড়ার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পৌরসভার অনুমতি সাপেক্ষে এটি একটি মুক্ত মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা বেশি ব্যায়ে এই চত্বর নির্মাণ করা হচ্ছে। মেসার্স ইয়াছিন ট্রেডার্স এই নির্মাণ কাজ করছেন। প্রাথমিক কাজ শেষের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ আগস্ট।

পৌরসভার প্যানেল মেয়র পরিমল চন্দ্র দাস জানান, বগুড়া পৌর এলাকায় স্বাধীনতার চত্বর নেই। মুক্তির যুদ্ধের ৫০ বছর পর পৌরসভার বর্তমান পরিষদ এটি করছে। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণ করা হবে।
পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, এটি তার নির্বাচনী ইস্তিহার ছিলো। এই চত্বর নির্মানের মূল উদেশ্য হলো মহান স্বাধীনতার যুদ্ধে শহীদ বীর সেনানীদের স্মরণে পৌর স্বাধীনতা চত্বর নির্মাণ করা হচ্ছে। লাখো শহীদের রক্তে ভেজা এই মাটির সন্তানদের স্মরণ করতেই এই চত্বর।

তিনি আরও জানান, পৌরসভার অনুমতি সাপেক্ষে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এই চত্বরে অনুষ্ঠান করার অনুমতি পাবেন। তিনি স্থাপনা সম্পর্কে বলেন, অনেক শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার উদিত সূর্য বোঝানো হয়েছে এই স্থপনায়। সূর্য যেমন সকলকে সমান আলো দেয় তেমনি এই স্থাপনা সকল মানুষের জন্য একটা চত্বর হয়ে থাকবে।

এদিকে আজ (১৪ জুন) বুধবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই স্থাপনা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। পৌরসভার মেয়র এই নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।

এদিকে পৌর স্বাধীনতা চত্বরের স্থপতি প্রকৌশলী হাবীবুর রহমান জানান, পৌর স্বাধীনতা চত্বর বিশেষ একটি কনসেপ্ট থেকে করা হয়েছে। এখানে ৭ টি স্তম্ভ রয়েছে। পিছনে তিনটি স্তম্ভ রয়েছে যে গুলো ৭ টি বার দিয়ে যুক্ত করা। আবার দুই পাশে দুটি করে স্তম্ভ রয়েছে সেই স্তম্ভ গুলোও ৭টি বার দিয়ে যুক্ত করা। ৭ টি স্তম্ভ এবং ৭টি বার দিয়ে যুক্ত করার অর্থ হচ্ছে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন বগুড়া ছিল ৭ নম্বর সেক্টরে। তিন ৭ এর সমন্বয় করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন স্বাধীনতার ভোরের সূর্য বোঝানো হয়েছে আর স্তম্ভের ভিতরে একটি স্থান মানে স্বাধীনতার আলো চারদিক থেকে আসবে।

অবস্থানঃ গোহাইল রোড বগুড়া সদর, সাতমাথা সংলগ্ন, বগুড়া।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ