পণ্যমূল্যের সাথে পেরে উঠছে না সাধারণ মানুষ

বগুা নিউজ ২৪: অনেক দিন ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে চিড়েচ্যাপ্টা স্বল্পআয়ের মানুষ। ভোগ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরেই অবস্থান করছে। এর মধ্যেই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাদের অতি মুনাফা করার এ প্রবণতার মাসুল গুনছে সাধারণ মানুষ; ক্রমেই আরও কষ্টকর হয়ে পড়ছে জীবনযাপন।পণ্যমূল্যের সাথে পেরে উঠছে না সাধারণ মানুষ। পণ্যমূল্যে স্বস্তি ফেরাতে সরকার পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি আমদানির অনুমতি ও নিয়মিত তদারকি অভিযান চালালেও এ থেকে পরিত্রাণ মিলছে না।

সরকারি তথ্যেই গত সেপ্টেম্বরে গ্রাম-শহর নির্বিশেষে পুরো দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা উদ্বেগজনক। পাশাপাশি আমদানিতে কড়াকড়ি ও ডলার সংকটের কারণে বিভিন্ন পণ্যের আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমেছে। ব্যবসায়ীদের একটি অংশ এমন সংকটকালে মওকা বুঝে হঠাৎ-হঠাৎ সরবরাহ-সংকট সৃষ্টি করে বিভিন্ন পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমেনি, কিন্তু ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানান সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অস্বাভাবিক মূল্যে পণ্য কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এ ক্ষেত্রে সামগ্রিক বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকার ফাঁকে চলছে একের পর এক কারসাজি। পর্যাপ্ত উৎপাদন সত্ত্বেও দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে। অথচ, বাজার অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেসবের সুফল বাস্তবে মিলছে না।

বর্তমানে বাজারে ভোক্তার গলায় কাঁটা বিঁধিয়ে দিচ্ছে পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দর। সরকার প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা বেঁধে দেওয়ার পরও বাজারে এর চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ভারতের পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বৃদ্ধির খবরে পণ্যটির দাম রাতারাতি আরও বেড়ে গেছে; বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫০ টাকা পর্যন্ত। একইভাবে আলুর ভালো ফলন হওয়ার পরও সরবরাহ কম দেখিয়ে অতিরিক্ত দামে আলু বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষকের কাছ থেকে ১৫ টাকায় কেনা আলু বর্তমানে খুচরায় ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারের নির্ধারিত দাম ৩৫-৩৬ টাকা শ্রেফ  ঘোষণাতেই রয়ে গেছে। শেষমেশ আলুও আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তে বাজারে স্বস্তির আভাস মিলছে না। অন্যদিকে সরকার প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা বেঁধে দিলেও বাজারে কিন্তু ১৫ টাকা দরেই বিক্রি হচ্ছে। ডিমও আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি।

বাজারে আমিষের দাম অনেক আগেই ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে গেছে। বর্তমান বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা এবং সোনালি মুরগির দাম ৩১০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। গরুর মাংস কেজি ৭৮০ টাকা, খাসি ১১০০ টাকা। সস্তার পাঙাশের কেজি এখন ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্বল্প দামের সবজিও এখন দামি পণ্য।

বাজারের এমন দশায় স্বল্পআয়ের, বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। ব্যয়ের চাপে পিষ্ট ক্রেতারাও এখন তিন ভাগে বিভক্ত। কেউ অনায়াসে কিনছেন দামি সবজি। কেউ কিনছেন একটি করলা, একটি বেগুন কিংবা ২৫০ গ্রাম করে তরিতরকারি। কেউ আবার বাজারে না ঢুকে এর আশপাশে টুকরি নিয়ে বসা পুরনো, বাসি-নষ্ট সবজির দোকানে ভিড় করছেন।

অগ্নিমূল্যের বাজারে দরিদ্রের শেষ ভরসা শাক। সেই শাকও চলে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। একদিকে শাকের আঁটি সরু হচ্ছে, অন্যদিকে পুরু হচ্ছে দাম। এক আঁটি লালশাকও এখন অন্তত ৩০ টাকা, লাউশাক ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর কদমতলী বাজারে আক্ষেপ করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় অটোরিকশাচালক শাহিন মোল্লা  বলছিলেন, শাকপাতা কিনতেও এখন হিসাব করতে হচ্ছে। সামান্য কলমিশাকের আঁটিও ১৫ টাকা। আঁটির সাইজ হয়ে গেছে ধনেপাতার আঁটির মতো। পাঙাশ মাছ কিনতেও এখন কষ্ট করতে হয়। এমনিতেই আয়ের টাকা দিয়ে খরচ পোষায় না। এর মধ্যে বাজারে ঢুকলে কষ্টটা আরও বাইড়া যায়।

এদিকে বাজারে নতুন করে আটার দাম বেড়েছে। ১১০ টাকায় বিক্রি হওয়া ২ কেজির আটার প্যাকেট এখন ১২০ টাকা হয়েছে। মোটা দানার মসুর ডালের পাশাপাশি চালের দামও বেড়েছে। চিকন চালের দাম অনেকটা অপরিবর্তিত থাকলেও মাঝারি চালের কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা এবং মোটা চালে ২ টাকা বেড়েছে। কোথাও কোথাও মোটা চালে ৪ টাকাও বেড়েছে। সরকার চিনি আমদানিতে শুল্ক অর্ধেক কমানোর পর রাজধানীর পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম নিম্নমুখী হওয়ার বদলে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এতদিন পাইকারিতে ১২৯ টাকা দরে চিনি মিললেও সম্প্রতি ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়তি রয়েছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ