ব্যস্ত সময় পার করছেন মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গল কারিগররা

মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: অতি প্রাচীনকাল থেকেই কৃষিকাজে গরুর লাঙ্গল ব্যবহার হয়ে আসছে। জমি চাষ করার জন্য গরুর লাঙ্গলই বেশি ব্যবহার করা হতো। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার আবিস্কৃত হওয়ায় লাঙ্গলের কদর কমে গেছে।

তবে আলু, পিয়াজ ও রসুন বপনের জন্য লাঙ্গলের ব্যবহার বাধ্যতামুলক। যদিও সেটি কাঠের লাঙ্গল কিংবা লোহার লাঙ্গল হোক। মুন্সীগঞ্জে আলু বপনকে কেন্দ্র করে এ লাঙ্গলের চাহিদাও রয়েছে বেশ। বিশেষ করে আলু বপনের জন্য নালা তৈরী করার কাজে হাতে টানা লাঙ্গলের ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই কার্তিক মাসের শুরু থেকে অগ্রাহায়ন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত হাতে টানা লাঙ্গলের বেশ চাহিদা থাকে। ফলে লাঙ্গল তৈরীর কারিগররা এ সময়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেন।

মুন্সীগঞ্জ গজারিয়া উপজেলার ফুলদি এলাকার কারিগররা বংশ পরম্পরায় এ কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন। তারা জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে তাদের হাতে তৈরী লাঙ্গল বিক্রি করে থাকেন।

কথা হয় রঞ্জিত রায় (৬১), নিরঞ্জন মিস্ত্রি (৫৮), নরেশ মিস্ত্রি (৬৫), হারাধন (৬০), শুভাস (৫১) ও বিষ্ণু পদ (৭০) এর সাথে।

তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ পেশার সাথে তাদের বাবা ও দাদারা জড়িত ছিলেন। এই মৌসুমে তারা এ কাজে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেন। আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এ ব্যবসা প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে আলু চাষে নালা তৈরী করার জন্য লাঙ্গলের ব্যবহার করতেই হয়। যার কারণে এখনো এর চাহিদা রয়েছে। তারা আরো বলেন, তারা বংশ পরম্পরায় এ কাজের সাথে জড়িত। আর আলু মৌসুমকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে লাঙ্গল বিক্রি করা হয়। প্রতিটি লাঙ্গল তৈরী করতে বেশ পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। ৫’শ থেকে ৬’শত টাকা খরচ হয়ে যায়। অন্যদিকে বিভিন্ন বাজারে যাতায়াতের জন্যও খরচ হয়। হাটের খাজনা পরিশোধ করতে হয়। সব মিলে তেমন লাভ হয় না। যেহেতু বাবা ও দাদারা এ পেশার সাথে জড়িত ছিলেন এবং মৌসুমে এর চাহিদা রয়েছে। তাই এ পেশা ছাড়তে পারছেন না তারা। তবে বাজারে চাহিদা থাকলে এক একটি লাঙ্গল ৮’শ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

অন্যএক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, এ লাঙ্গলগুলো তৈরী করার জন্য বরই, আম মেহগনি ও রেন্ডি কড়ই কাঠ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রথমে কাঠগুলোকে স’মিলে সাইজ মতো চেরাই করা হয়। পরে বাইশ এর মাধ্যমে কুপিয়ে বাঁকা করা হয়। তবে এ কাজের জন্য অবশ্যই দক্ষ কারিগর হতে হয়। অন্যথায় কাঠগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

লাঙ্গল কারীগরদের দাবী, এ পেশার কারিগরদেরকে বা ফুলদি গ্রামের লাঙ্গলকারীগরদেরকে যেন ঐতিহ্যবাহী পেশা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ