ঠাকুরগাঁও ও কোটালীপাড়া মুক্ত দিবস আজ

বগুড়া নিউজ ২৪: আজ ৩ ডিসেম্বর। একাত্তরের এই দিনে ঠাকুরগাঁও পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। অত্র অঞ্চলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই পিছু হটতে শুরু করে পাকিস্তানি সৈন্যরা। তাদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে আজকের এই দিনে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের পর সারা দেশের মতো ঠাকুরগাঁয়েও পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণ করে। নিরস্ত্র বাঙালির ওপর চালায় নির্যাতন। গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠণে তারা মেতে ওঠে। একইসঙ্গে চলতে থাকে অমানুসিক অগ্নিসংযোগ। এরপর ১৫ এপ্রিল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকবাহিনীর দখলে চলে যায় ঠাকুরগাঁও।

এরই মধ্যে সংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামী মানুষ। তারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে তুলে দুর্বার প্রতিরোধ। ঠাকুরগাঁও তখন ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার এম. খাদেমুল বাশার। এ সেক্টরে প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল। ২৯ নভেম্বর এই মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শত্রুমুক্ত হয়। পঞ্চগড় হাতছাড়া হওয়ার পর পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। এরপর তারা শক্তি বৃদ্ধি করে সদলবলে প্রবেশ করে ঠাকুরগাঁয়ে।

২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁয়ে প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনপণ লড়াইয়ে সে রাতেই শত্রুবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে ২৫ মাইল নামক স্থানে অবস্থান নেয় ৩ ডিসেম্বর ভোররাতে ঠাকুরগাঁও শহর শত্রুমুক্ত হয়।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ড আব্দুল মান্নান বলেন, ঠাকুরগাঁও তখন ছিল মহকুমা। বর্তমান ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার ১০টি থানা ছিল এই মহকুমার অন্তর্গত। ৩ ডিসেম্বর সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁও শহরে মানুষ জড়ো হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বের হয় আনন্দ মিছিল। জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এ অঞ্চলের জনপদ। হাজার হাজার মানুষ উদ্বেলিত কন্ঠে ‘জয়বাংলা’ বলতে বলতে মুক্ত শহরের রাস্তায় বের হয়ে আসে। এ সময় অনেকের হাতে ছিল প্রিয় স্বদেশের পতাকা।

মুক্তিযোদ্ধা প্রত্যক্ষদর্শী রাজাগাঁও ইউনিয়নের বিমলা রাণী বলেন, পাকিস্থানি বাহিনী আগে খরিলুপের বাড়িত আইছিল। খরিলুপের বাড়ি থেকে আসিল হামার বাড়ি। হামরা সবাই দৌড়া দৌড়ি করে পালানো। কিন্তু হামাক সবাকে ধরে নিয়ে আসিল হামার বস্তির তামাক লোকলাকে ধরে নিয়ে আসিছিল। সবাকে লাইন করে মারিক ৩১ জন ছিল। হামাক লাইক করে দাড়ায় থুইল কাহার নাক, নাখ, কাহার লাগের গোস্তগেলা ছিড়ায় নিছে। ওই সময় মুই গর্বপতি ছিনু মিলিটারিলঅ বন্দুনটা দিয়ে মোর পেটটাত গুতা দিছে আর মুই কিছু কহিবা পারু না।

সাবেক ঠাকুরগাঁও জেলা ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তি যোদ্ধা বদরুদ্দোজা (বদর) বলেন, আজ থেকে ৫১ বছর আগে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করি ফলে তারা পালিয়ে যায় ও ৩ ডিসেম্বর ভোরে শতশত মুক্তিযোদ্ধা ফায়ার করতে করতে শহরে ঢুকে পড়ি তখন জনশূন্য হয়েছিল ঠাকুরগাঁও। পরে বিজয়ের উল্লাসে শত শত মানুষ জয়বাংলা শ্লোগানে জনমুখরিত করে ও তারা আমাদের নিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেন। আমাদেরকে সেই দিন তারা যেভাবে মূল্যায়ন ও সম্মান করেছিল সেটি ভুলার নয় এবং আজও মনে পড়ে সেই দিনে সেই স্মৃতি যা আজ থেকে ৫১ বছর আগে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। আমাদের ঠাকুরগাঁও পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল ৩ ডিসেম্বর কিন্তু সমগ্র বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও পাকিস্তান হানাদার মুক্ত দিবস। এটি ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যের একটি অংশ ও গৌর্বের দিন। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিবসটি উদযাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা সবাইকে নিয়ে জাগজমকভাবে দিবসটি উদযাপন করবো। আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে এর ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরতে চাই। তারা যেন ঠাকুরগাঁওসহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে যেনে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ