সারিয়াকান্দির যমুনার বিস্তীর্ণ চারণভূমিতে মহিষের খামার

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বগুড়া সারিয়াকান্দির যমুনাচরের বিস্তীর্ন চারণভূমিতে মহিষের খামার করে ভাগ্য ফিরিয়েছে অনেকেই। তবে বর্তমানে হরতাল অবরোধে পানির দরে দুধ বিক্রি করে লোকসান গুণছেন খামারীরা।

উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬ টি ইউনিয়নই যমুনা নদীগর্ভে বিলিনের ফলে তৈরি হওয়া বিশালাকার চরাভূমিতে মহিষের খামার গড়ে উঠেছে। এসব বাথানের মহিষগুলো থেকে প্রতিদিন অন্তত : ১৫ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। একে খুদ, কুড়া, ভূষির দাম ঊর্ধ্বমূখি তার ওপর হরতাল ও অবরোধে দুধের দরপতনে মহিষ পালন করতে হিমশিম খাচ্ছেন খামারীরা।

কাজলা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া চরের মহিষের বাথানের মালিক আমরূল দেওয়ান জানান, তার বাথানে ৯ জন মালিকের ৪০০ টির বেশি মহিষ আছে। প্রতিদিন এ খামার থেকে প্রায় ৫৫০ লিটার দুধ বিক্রি হয়। যা প্রতি লিটার দুধ ৫৫ টাকা দরে জামালপুর মাদারগঞ্জ বালিজুরি খামারে বিক্রি করেন। মহিষ পালন তার বাপ-দাদার পেশা। মহিষ লালন পালন করেই তিনি পৌর এলাকায় জমি কিনে পাকা বাড়ি করেছেন। তার বাথানে ৭ জনের বেশি রাখাল রয়েছে। মহিষকে খাওয়ানোর জন্য ৮ মাসের জন্য তারা কাজলা পাকুরিয়া চরের গো চারণভূমি ৫ লাখ টাকায় কিনেছেন।

তবে বর্ষা মৌসুমে বাজার থেকে খড় এবং ঘাস কিনে খাওয়াতে হয়। তিনি আরও জানান,সরকারি কোনও সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই শুধুমাত্র চরের বিশাল এলাকায় কাঁচাঘাস থাকার জন্যই মহিষগুলো টিকে আছে। কুঁড়া, ভূষি ও ফিডের যে পরিমান দাম সে হিসেবে বাথান টিকে রাখাই এখন মুশকিল।

অপরদিকে হরতাল অবরোধে পানির দরে দুধ বিক্রি করে আমরা একেবারেই দিশেহারা হয়ে পড়েছি। বাথানের মহিষ দেখাশোনা করে রাখাল বাবু মিয়া (১৩)। সে জানায়, গত ২ বছর আগে বাবা জহুরুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর সংসার চালাতে কাজ নেয় মহিষের বাথানে।

এখন সে দিনরাত চরের বালুমাটিতে মহিষের দেখাশোনা করে। দুধভাত তার পছন্দের খাবার। শাহিনের মতো আরও ৬ জন রাখাল তার সাথে এ বাথানের মহিষের দেখাশোনা করেন। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজলা ইউনিয়নের চর ঘাঘুয়া চরে শাহজাহানের বাথানে ২শ’ টির বেশি মহিষ, একই ইউনিয়নের জামথল চরের সুরুজ মিয়ার বাথানে ১শ’ ও ফজলু মিয়ার খামারে ৯০ টি, কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের মথুরাপাড়া তালতলা হোসেন দেওয়ানের বাথানে ৫০টির বেশি মহিষ, হাটশেরপুর ইউনিয়নের চকরথিনাথ চরে আমিরুল ইসলামের বাথানে ২শ’ টির বেশি মহিষ, একই ইউনিয়নে ভোলা মিয়ার বাথানে ৩শ’ টির বেশি মহিষ এবং চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নে সরকার মোল্লার বাথানে ২শ’ টির বেশি মহিষ আছে।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, পুরো উপজেলায় সর্বমোট ৩ হাজার মহিষ রয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে ১৫০ জন মহিষের খামারি রয়েছে। তবে চরের প্রায় বাড়িতেই দুএকটি করে মহিষ পালন করতে দেখা যায়।

প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শাহ আলম বলেন, চরাঞ্চলে মহিষ পালন করে অনেকেই লাভবান হয়েছেন। চরের মহিষের বাথানে সরকারি সহযোগিতা এবং প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখা হয়েছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ