যে কারণে বিপিএম এ ভূষিত হচ্ছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান

কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারের চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন, অস্ত্র উদ্ধার, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিরসন, মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য সহ ডাকাত ও সন্ত্রাসী গ্রেফতার, মিয়ানমারে পাচারকৃত ৭ জন ভিকটিম উদ্ধার সহ অনেকগুলো সফলতার সাক্ষর রেখেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান। একের পর এক হত্যাকাণ্ড সহ চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও নানা সফল অভিযানে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা। যার দরুন পুলিশ প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে। সেই কারনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বিপিএম পুরুস্কার পাচ্ছেন আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি।

গত বৃহস্পতিবার তাঁর নামসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগ একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় কক্সবাজারের আরো তিন পুলিশ কর্মকর্তা নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে বিপিএম সেবা পুরুস্কার পাচ্ছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো.মাহফুজুল ইসলাম, পিপিএম সেবা পুরুস্কার পাচ্ছেন পেকুয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওমর হায়দার (বর্তমান কর্মস্থল কক্সবাজার সদর সার্কেল) ও পিপিএম সাহসিকতা পুরুস্কার পাচ্ছেন চকরিয়ার হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মহসীন চৌধুরী।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান গত ২৪ নভেম্বর ২০২১ সালে কক্সবাজার সদর সার্কেল অফিসে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর তিনি বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ড সম্পাদন করেন।

এর মধ্যে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি হতে এ পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন, অস্ত্র উদ্ধার, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিরসন, মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য সহ ডাকাত ও সন্ত্রাসী গ্রেফতার, মিয়ানমারে পাচারকৃত ৭ জন ভিকটিম উদ্ধার সহ অনেকগুলো সফলতার সাক্ষর রেখেছেন।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অভিযার হলো- সাগরে মাছ ধরার ট্রলারে চাঞ্চল্যকর ১০ জেলে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও মূল পরিকল্পনাকারী সহ আসামী গ্রেফতার, চাঞ্চল্যকর সাবেক পৌর আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিন হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামী গ্রেফতার, কলাতলীর আবাসিক হোটেলে চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত মা মেয়ে জোড়াঘুনের রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার, কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যার‌্যাটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র এবাদুল্লাহ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার, কক্সবাজার পৌরসভার সাবমেরিন ক্যাবল এলাকায় চাঞ্চল্যকর মিজান খুনসহ ডাকাতির রহস্য উদঘাটন ও ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারীসহ ৫ আসামী গ্রেফতার, ঈদগাওতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিরসনে অগ্রণী ভূমিকা পালন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বাড়ি থেকে চুরি হওয়া ১০ ভরি স্বর্ণ ও ১৩ লক্ষ টাকা উদ্ধার ও আসামী গ্রেফতার, শহরের বাহারছড়া থেকে জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস অফিস থেকে চুরি হওয়া ১১লাখ ২৩হাজার চোরাই টাকা উদ্ধার ও আসামী গ্রেফতার, মিয়ানমারে পাচারকৃত ৭ জন ভকিটমি উদ্ধার এবং মানব পাচারকারী চক্ররে মূল হোতা সহ ৪ জন গ্রেফতার করেন।

এছাড়া কক্সবাজার শহরের কাছাকাছি এলাকা ভারুয়াখালী থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৩টি অস্ত্র ও ১৫ রাউন্ড গুলিসহ ২ ডকাত গ্রেফতার এবং ৩টি অস্ত্র ও ৯৮ রাউন্ড গুলিসহ ২ অস্ত্র ব্যবসায়ী গ্রেফতার, শহরে ৩টি অস্ত্র ও ৮২ রাউন্ড গুলিসহ অস্ত্র ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারী গ্রেফতার, ঈদগড় থেকে দেশীয় তৈরি এলজি ও ৮০ রাউন্ড গুলি সহ ৩ ডাকাত গ্রেফতার, শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া থেকে দেশীয় তৈরি অস্ত্র ও গুলি সহ ৩ ছিনতাইকারী গ্রেফতার।

উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় বিভিন্ন দালাল ও প্রতারক চক্ররে মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্ররে হাতে পড়ে কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, মহশেখালী, উখিয়া এবং সিরাজগঞ্জ এলাকার কতপিয় কিশোর ও যুবক। থানায় দায়েরেকৃত পৃথক পৃথক নিখোঁজ জিডির প্রেক্ষিতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারের লক্ষ্যে অভিযান শুরু কওে পুলিশ। চক্রটি এদেরকে টেকনাফ দক্ষিণ লেঙ্গুরবিল এলাকার তৈয়বের বাড়িতে নিয়ে জড়ো করে। পরে পাচারকারীরা তাদের নৌকা যোগে টকেনাফ হতে মায়ানমার নিয়ে যায়। মানবপাচারকারী চক্ররে সদস্যরা তাদরেকে সেখানে আটক করে রাখে। উক্ত চক্রটি নিখোঁজ ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ইমো এ্যাপস এবং মায়ানমাররে মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তাদের শারীরিক নির্যাতন করে মোটা অংকরে মুক্তিপন দাবী করে। টেকনাফ দক্ষিণ লেঙ্গুরবিল এলাকা হতে চক্রের মূলহোতা বেলালসহ ৪ চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ পাচারকারী চক্রদের বিভিন্ন আস্তানা এবং সহযোগিদের বাসায় অভিযান চালিয়ে পাচারকারীদের মাধ্যমে কৌশলে পাচার হওয়া ৭ জনকে মায়ানমার থেকে টেকনাফে এনে উদ্ধার করা হয়।

গত ২৩ এপ্রিল কক্সবাজার পৌরসভার কুতুবদিয়া পাড়া সাগরপাড় এলাকায় মাছ ধরার ট্রলারে ১০ জেলের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সাগরে মাছ ধরার ট্রলারে ১০ জেলে হত্যাকান্ডে চাঞ্চল্যেও সৃষ্টি হয়। উক্ত ঘটনায় প্রযুক্তির সহায়তায় মামলার রহস্য উদঘাটনপূর্বক দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারীসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ৭ জন আসামী আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেন। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।

গত ২০ আগস্ট রাতে হলিডে মোড়স্থ হোটেল সানমুনের ২০৮নং কক্ষে কক্সবাজার সদর উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ ও পৌর আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিন খুন হয়। চাঞ্চল্যকর আলোচিত এ হত্যাকান্ডের আসামী আশরাফুল ইসলামকে হোয়াইক্যং চেকপোষ্ট হতে হত্যাকান্ডের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই গ্রেফতার করা হয়। তার দেখানো মতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি, ভিকটিমের মোবাইল ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

গত ৭ জানুয়ারি কক্সবাজার পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সাব-মেরিন ক্যাবল সংলগ্ন পশ্চিমে রাস্তার উপর ডাকাতের ছুরিকাঘাতে মো. মিজান খুন হন। এ ঘটনায় প্রযুক্তির সহায়তায় মামলার রহস্য উদঘাটনপূর্বক হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারীসহ ৫ ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ৩ জন বিজ্ঞ আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেন।

গত ১৭ ফেব্রয়ারী কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোনের হোটেল সী-আলিফ এর ৪র্থ তলা ৪১১ নং কক্ষে মা সোমা দেব ও তার ৮ মাস বয়সী কন্যা কনামিকা দেব এর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। উক্ত ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় প্রযুক্তির সহায়তায় মামলার রহস্য উদঘাটনপূর্বক হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী জেবিন দেবকে গ্রেফতার করে। সে আদালতে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেন।গত ২৪ জুন কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যার‌্যাটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র এবাদুল্লাহ (১৫)র লাশ পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়ার ঝাউবাগান থেকে উদ্ধার হয়। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনপূর্বক হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারীসহ ২জনকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতার ২ জনই আদালতে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেন। গত ১৩আগস্ট গোপন সংবাদে কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীর উল্টাখালীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অভিযান চালানো হয়। অস্ত্রধারী ডাকাত দলের সাথে পুলিশের গুলাগুলি হয়। এ ঘটনায় তিনি নিজে আহত হলেও দুর্র্ধর্ষ ডাকাত আব্দুল জলিল ও সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। ৩টি বন্দুক, ১৫ রাউন্ড গুলি ও দা-ছোরা উদ্ধার করা হয়। গত ১৯ আগস্ট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালী বাজারের পুতুইন্যা খলিফার গ্রীল ও ওয়ার্কশপের দোকান থেকে দেশিয় তৈরি ৩টি এলজি ও ৯৮ রাউন্ড গুলিসহ অস্ত্র কারবারী মো. বাবুলকে গ্রেফতার করেন।

গত ২ জুন রামু থানার ঈদগড়ের ছগিরাকাটায় গোপন সংবাদে অভিযান চালিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী ৩ জনকে গ্রেফতার করে দেশীয় তৈরি ১টি এলজি ও ৮০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেন। গত ৩জুন কক্সবাজার পৌরসভার দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া থেকে অস্ত্র গুলিসহ দূর্ধর্ষ ছিনতাইকারী হাতী সোহেলসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে।

গত ২৬ মার্চ বেনাপোল হাফেজিয়া মাদ্রাসা পড়–য়া এক হাফেজ ছাত্র ঈদগাঁও পালপাড়া মসজিদে শীবমূর্তি রাখার গুজব সামাজকি যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ায়। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে তাৎক্ষণিক সমাধান করে সম্ভাব্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিরসন করেন। একইভাবে ১৭ মে ভোর রাতে ঈদগাঁওর পোকখালীর নাইক্ষ্যংদিয়া দক্ষিণ পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদ ও নুরানী মাদ্রাসার দেয়ালে পায়খানা নিক্ষেপ এবং ৭টি পবিত্র কোরান শরীফ, ৫টি হাদিসের কিতাব, মসজিদের ১৪টি জায়নামাজ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশংকা দেখা দেয়। এ ঘটনায় প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও পরিকল্পনাকারী মো. শাহেদ কামালকে গ্রেফতার করা হয়। উক্ত ঘটনায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিরসনে তিনি গুরুত্বর্পূণ ভুমিকা রাখায় সর্বমহলে প্রশংসিত হন।

গত ৩ জানুয়ারি কক্সবাজার পৌরসভার মধ্যাম বাহারছড়াস্থ জিসকা ফার্মেসিটিক্যালস কোম্পানীর ডিপো অফিসের ভোল্ট ভেঙ্গে ১১ লক্ষ ২৩ হাজার ৫৬৬ টাকা চুরি হয়। এ ঘটনায় প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে এজাহারনামীয় ৩ জন আসামীকে গ্রেফতার ও চুরি হওয়া ১০ লক্ষ ৮৭ হাজার ৫৬৬ টাকা উদ্ধারপূর্বক আদালতের নির্দেশে বাদীর নিকট হস্তান্তর করা হয়। গত ১৬ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর বাসায় চুরির ঘটনায় ১৩ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ১৫ লক্ষ টাকা চুরি হয়। তদন্ত করে জড়িত চোর মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার পূর্বক স্বীকারোক্তি মতে ১০ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ ১৩ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেন। তার শ্বশুড় বাড়ি মহেশখালীর কেরণতলী এবং তার নিজ বাড়ি সাহিত্যিকা পল্লীতে অভিযান চালিয়ে এসব স্বর্ণ এবং টাকা উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার সকালে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান এক প্রতিক্রিয়ায় আল্লাহ দরবারে শোকরিয়া জ্ঞাপন করেন। তিনি সকলের দোয়া কামনা করেছেন। তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

প্রসঙ্গত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ২০১৩ সালের ১৫ জুন বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পান।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ