দালাল চক্রের হাতে জিম্মি বগুড়ার শজিমেক হাসপাতাল

ষ্টাফ রিপোর্টার: বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) দালালদের দৌরাত্ম বেড়েছে। যে কারণে চিকিৎসা সেবা কিছুটা একশ্রেণির দালাল চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। উন্নত সেবার আশায় সাধারণ মানুষ গ্রাম থেকে শহরে সরকারি হাসপাতালে ছুটে আসলেও দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে চিকিৎসা সেবার নামে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

দিনের পর দিন দালালদের প্রকাশ্যে তৎপরতা চলে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে নেই কোনো কার্যকর ব্যবস্থা। কয়েক বছর আগে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন দালালকে গ্রেফতার করে। দালালমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বগুড়ায় সরকারি স্বাস্থ্য সেবার জন্য রয়েছে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট শজিমেক হাসপাতাল। এ হাসপাতালে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগসহ ২৮টি বিভাগ চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে।

এছাড়াও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মাদ আলী হাসপাতাল, ১২টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আসা রোগীও এ হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়ে থাকেন।

বগুড়া ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন শত শত রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। কিন্তু রোগী এসে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছার আগেই দালালদের খপ্পরে পড়েন। এক পর্যায়ে রোগীদের হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে নেয় তাদের পছন্দের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে নেয়ার পর ইচ্ছে মতো টাকা আদায় করা হয় অসহায় রোগী ও তার পরিবারের কাছ থেকে।

এছাড়া বগুড়ায় গড়ে উঠা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা রোগী ধরতে মাসিক ও কমিশনের ভিত্তিতে দালাল নিয়োগ করে। এ সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ডাক্তারের সঙ্গে কিছু ক্লিনিকের কন্টাক্ট রয়েছে। তারা যে কজন রোগী পাঠায় তাদের বিভিন্ন টেস্টের শতকরা ৩০ থেকে ৫০ ভাগ কমিশন দেয় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা। পাশাপাশি হাসপাতালের কর্মচারীদেরও দিতে হয় ১০ থেকে ২০ ভাগ কমিশন এমন দাবি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মালিকদের।

বছর খানিক আগে শজিমেক হাসপাতালের এক গেট খোলা রাখা হতো। ফলে দালাল শ্রেণির লোকজন প্রবেশ কম করতে পারতেন। এ সব দালালচক্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় আন্দোলনও করেছেন হাসপাতালের কর্মচারীরা। তাতে কোনো ফল আসেনি। তবে, কয়েক বছর আগে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ১০-১২জন দালালকে হাসপাতাল চত্বর থেকে গ্রেফতার করে। এরপর এই চক্রের তৎপরতা কিছুটা কমে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান না থাকায় দালাল চক্রের তৎপরতা বেড়েছে।

জেলার কাহালু উপজেলা থেকে আসা রোগী আব্দুল মোমিন বলেন, শজিমেক হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে এসেছি। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. দেখে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। ডাক্তারের রুম থেকে বের হতেই গোলচত্বর আসতেই এক যুবক আমার কাছ থেকে স্লিপ দেখে অন্য ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক চাপাচাপি করে।

শেরপুর থেকে আগত রোগী আজিরন বেগম জানান, হাসপাতালের ভবনের গেটে আসতেই ওষুধ কোম্পানির লোকেরা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে ভিড় করেন। এটাতে খুবই অস্বস্তি লাগে। এছাড়াও বিভিন্ন ক্লিনিকগুলোর এসে ধরে আমার সঙ্গে আসেন, ভালো মানের পরীক্ষা নিরীক্ষা হবে এবং কম টাকা লাগবে।

শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে আগত আজিজার রহমান জানান, এ হাসপাতালের ডাক্তারের রুম থেকে বের হয়ে ভবন থেকে বের হওয়া মাত্র দরজার বাইরে এবং হাসপাতালের প্রধান গেটের কিছু লোক দাঁড়িয়ে থাকে। তারা রোগীদের প্রেসক্রিপশন দেখে তাদের ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করে। অনেক কিছু বলে হাসপাতালের পরীক্ষা ভালো না, রিপোর্ট ১-২দিন পর দেবে, এসব রোগীদেরকে বুঝানো হয়। এক পর্যায়ে রোগীদেরকে তাদের ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে প্রত্যক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য উচ্চ দাম নেয়।

শজিমেক হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর হাসপাতাল হওয়ায় প্রতিদিন অনেক রোগী আসে। জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগের পাশাপাশি শয্যার বাইরেও ফ্লোরে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। কিছু কিছু রোগীর সঙ্গে স্বজনরাও আসেন। যে কারণে কারা রোগীর লোক আর কারা দালাল বুঝতে কিছুটা সমস্যা হয়। তারপরও হাসপাতালের মধ্যে যাতে কোনো ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোক প্রবেশ না করতে পারে দায়িত্বরত সব গার্ডদেরকে বলা আছে। কোনোভাবেই হাসপাতালে দালাল শ্রেণির লোককে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। যদি এমন কিছু হয় সেক্ষেত্রে রোগী ও তার লোকদের আরো সচেতন হওয়া উচিত।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০