হল না ছাড়ার ঘোষণা চুয়েট শিক্ষার্থীদের, অবরুদ্ধ উপাচার্য

চুয়েট প্রতিনিধি:  বিক্ষোভের মুখে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদেরকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এমন নির্দেশ আরও বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে শিক্ষার্থীদের। জবাবে প্রশাসনিক ভবনের মূল দরজায় তালা দিয়ে হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। সেইসঙ্গে জানা গেছে, তালাবদ্ধ ভবনে আটকে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে নিচে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল পৌনে পাঁচটায় ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করে তারা জানান, দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। কোনভাবেই হল ছাড়বেন না। এসময় আবারও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান তারা।

শিক্ষার্থীরা জানান, তারা ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব দাবির বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেসবের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা একমত হননি। তাই আন্দোলন চলছে। কিন্তু প্রশাসন আলোচনায় না বসে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করবেন না।

এর আগে আজ বেলা দেড়টা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত একাডেমিক কাউন্সিলের ১৫১তম জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ বিকেল পাঁচটার মধ্যে ছাত্রদের এবং আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ছাড়তে হবে।

এ ব্যাপারে রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বারবার আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আশানুরূপভাবে সাড়া দেননি। তাই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হল না ছাড়লে কী হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’

অবরুদ্ধ অবস্থাতেই মুঠোফোনে যোগাযোগ হয় সহ-উপাচার্য মো. জামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়েছে। আমরা ভেতরে আছি। শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হবে। যেহেতু ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সেহেতু আলোচনার আর পরিবেশ নেই।’

এদিকে হল ছাড়ার নির্দেশে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বরে থাকা ও মূল ফটকে রাখা শাহ আমানত পরিবহনের দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো ক্যাম্পাসে।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার বেলা সাড়ে তিনটায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে বাসের ধাক্কায় নিহত হন পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা (২২) ও দ্বিতীয় বর্ষের তৌফিক হোসাইন (২১)। আহত হন জাকারিয়া হিমু (২১)। চুয়েটের কাছাকাছি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জিয়ানগর এলাকায় পৌঁছালে তাঁদের মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় বেপরোয়া গতির শাহ আমানত পরিবহনের একটি যাত্রীবাসী বাস।

দুর্ঘটনার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় প্রথম দফায় সড়ক অবরোধ করা হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাস। পাশাপাশি আরও দুটি বাস ভাঙচুর করা হয়। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে রাত নয়টার দিকে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীর। পরে সেদিন রাত তিনটায় নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করা হয়। এরপর গত বুধবার প্রায় ১৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। আজও সড়ক বন্ধ।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০