মহাদেবপুরে তীব্র গরমে তালপাতার হাতপাখার কদর বেড়েছে

মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুরে তীব্র রোদ ও ভ্যাপসা গরমে তালপাতার হাতপাখার কদর বেড়েছে। এই পাখা স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে পাইকারদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এখানকার তৈরি পাখার কদর ও বিক্রি বাড়ার কারণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কারিগররা।

মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলো মিটার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত ভালাইন গ্রাম। এ গ্রামটিকেই এখন সবাই চেনে পাখা গ্রাম হিসাবে। এ গ্রামের প্রবেশ মুখেই বসবাস করে প্রায় ৫০ টি পরিবার। এ ৫০ টি পরিবারের সবাই তালপাতার হাতপাখা তৈরি ও বিক্রির সাথে জড়িত।

এক কথায় এই ৫০টি পরিবারের ৪ শতাধিক সদস্যের জীবন জীবিকা বাঁধা পড়েছে তালপাতার হাতপাখায়। গতকাল শনিবার সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি বাড়িতেই চলছে পাখা তৈরির কাজ। বাড়ির মেয়েরা ব্যস্ত পাখা তৈরির কাজে। পাখা তৈরি ও সুতা দিয়ে বাঁধার কাজটি মূলত বাড়ির মেয়েরাই করে থাকেন।

পাখা তৈরির জন্য তালের পাতা সংগ্রহ, পাতা ছাঁটাই ও তৈরি পাখা বিক্রির দায়িত্ব পালন করে থাকেন বাড়ির পুরুষ সদস্যরা। গ্রামে ঢুকতেই দেখা যায় পাখার কারিগর আছমা, মনিরা, সীমাসহ কয়েকজন পাখা তৈরি করছেন। এমন নিপুন ভাবে পাখা তৈরির কাজ শিখলেন কিভাবে?

এ প্রশ্নের জবাবে গৃহবধু আছমা জানান, তার বাবার বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার কির্ত্তীপুর গ্রামে। প্রায় ১৮ বছর আগে বিয়ে হয় এই গ্রামের যুবক সামছুর রহমানের সাথে। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ির সবাইকে পাখা তৈরি করতে দেখে তাদের কাছ থেকেই শিখেছেন পাখা তৈরির কাজ।

তালের পাতা কাটা ও ছাটাই থেকে শুরু করে কয়েক ধাপে শেষ হয় পাখা তৈরির কাজ। পাখা তৈরির শেষ ধাপে রয়েছে সুতা দিয়ে বাঁধাই। আছমা এখন প্রতিদিন একাই ১০০ থেকে ১২০ টি পাখা বাঁধাই করতে পারেন। এ থেকে প্রতিদিন তার প্রায় ৪৫০ টাকা আয় হয়।

পাখা তৈরির আয়ের টাকা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি একমাত্র ছেলেকে লেখা পড়া করানোর স্বপ্ন দেখছেন গৃহবধূ আছমা। শুধু আছমাই নয় এখানকার গৃহবধু সুমী, খোরশেদা, সায়রা, শেফালী, কহিনুর, মালা, শিউলিসহ অনেকের পরিবারই পাখা তৈরি ও বিক্রির উপর নির্ভরশীল।

পাখার কারিগর সুমী জানান, গরম কালে পাখার চাহিদা ও দাম দুটোই বাড়ে। পাখার কারিগররা জানান, একটি পাখা তৈরি করতে ২০/২২ টাকা খরচ হয়। সেই পাখা ৭ থেকে ৮ টাকা লাভে ২৭/৩০ টাকায় তারা মহাজনদের কাছে বিক্রি করে দেন।

মহাজনরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি করেন। এতে পাখার মহাজনরা শুধুমাত্র পুঁজি খাঁটিয়ে বেশি লাভবান হলেও হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে পাখা তৈরি করেও অধিক লাভ থেকে বঞ্চিত হন পাখার কারিগররা।

স্থানীয় যুবক গোলাম রসুল জানান, এখানকার কারিগররা শীত মৌসুমে মহাজনদের কাছ থেকে পাখার দাম ধরে আগাম টাকা নেয়। গরমকালে পাখার দাম বাড়লেও কারিগরদের লাভ হয়না। লাভের অংশ চলে যায় মহাজনদের ঘরে। সরকারী বে-সরকারী ভাবে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দিতে পারলে মহাজনদের খপ্পর থেকে রক্ষা পাবে হাত পাখায় জীবন জীবিকা বাঁধা এই মানুষগুলো।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০