বান্দরবানে যৌথবাহিনীর অভিযানে কেএনএফ সন্ত্রাসী নিহত

বান্দারবান প্রতিনিধি: বান্দরবানে সেনাবাহিনীর অভিযানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এক সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন। এ সময় বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার রুমা উপজেলার দুর্গম দার্জিলিং পাড়ায় এই অভিযান পরিচালিত হয়। গণমাধ্যমে পাঠানো আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিযানে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা বাঙ্কার, পর্যবেক্ষণ চৌকি ছাড়াও তিনটি একে-২২ রাইফেল, একটি শটগান, ৭১ রাউন্ড তাজা অ্যামোনিশন, ১৫৭ রাউন্ড শটগান অ্যামোনিশন, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক সরঞ্জামাদি, একটি ড্রোন, তিনটি জুম্মল্যান্ডের পতাকা ও মোবাইল ফোনসহ ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়।

রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজাহান জানান, রুমা দার্জিলিং পাড়া থেকে এক কেএনএফ সদস্যের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। তবে নিহত কেএনএফ সদস্যের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রুমা উপজেলার দার্জিলিং পাড়ায় যৌথ বাহিনীর সঙ্গে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গোলাগুলির এক পর্যায়ে যৌথ বাহিনীর গুলিতে কেএনএফের এক সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

গত ২ এপ্রিল রুমার সোনালী ব্যাংকে হামলা করে অর্থ লুট করে একদল অস্ত্রধারী। পুলিশের ১০টি এবং আনসার সদস্যের চারটি অস্ত্রও লুট করে নিয়ে যায় তারা। অপহরণ করা হয় ব্যাংকটির ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে। তবে দু’দিন পর রুমার একটা পাহাড়ি এলাকা থেকে ছাড়া পান তিনি।

রুমার ঘটনার ১৭ ঘণ্টা পর থানচি উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখা থেকে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা লুট করে অস্ত্রধারীরা। দুটি ঘটনায় পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন ‘কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ’ জড়িত বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এরপর থেকে লুট হওয়া অস্ত্র-অর্থ উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুমা ও থানচিতে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ বাহিনী। এ পর্যন্ত যৌথ অভিযানে কেএনএফের ৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ফেসবুকে পেজ খুলে বছর দু-এক আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল কেএনএফ। পাহাড়ের দুই জেলার নয় উপজেলা নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণাও দেয় তারা। কয়েকটি সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজি এবং হত্যার অভিযোগ উঠতে থাকে শুরু থেকেই।

একপর্যায়ে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাত হয় বার কয়েক। এরপর সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় ফেরে দলটি। গত ২২ এপ্রিল সেই আলোচনায় আবার বসার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই পাহাড়ের দুই ব্যাংকের তিন শাখায় হামলা করে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।

২০২২ সালের গোড়ার দিকে কেএনএফের নাম নজরে আসে, আসতে থাকে তাদের নানা তৎপরতার খবর। মূলত ফেসবুকে পেজ খুলে এই গোষ্ঠী তাদের অস্তিত্বের জানান দেয়। সঙ্গে ছিল সশস্ত্র তৎপরতা। বান্দরবানের বম জাতিগোষ্ঠীর কিছু ব্যক্তি এটি গড়ে তুলেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। কেএনএফ ফেসবুক পেজে দাবি করে, রাঙামাটি ও বান্দরবান অঞ্চলের ছয়টি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা। সেগুলো হলো বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি। তারা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম-এই উপজেলাগুলো নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি করে। তাদের কল্পিত সেই ‘রাজ্যের’ মানচিত্রও তাদের পেজে দিয়ে দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা একাধিক বিবৃতিতে কথিত এই সংগঠন জানায়, কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) নামে একটি সশস্ত্র দল গঠন করেছে তারা। তাদের মূল সংগঠনের সভাপতি নাথান বম।

কেএনএফ সেই সময় দাবি করেছিল, তাদের সামরিক শাখার শতাধিক সদস্য গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশে পাড়ি জমান বছর তিনেক আগে। ২০২১ সালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি দল ফিরে আসে। ২০২২ সালে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। তবে একাধিক সূত্র বলছে, কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যের সংখ্যা শুরুতে খুব বেশি ছিল না। তখন হয়তো ১৫ থেকে ২০ জনের মতো সদস্য ছিল। কিন্তু পরে তাদের সংখ্যা বাড়ে।

কেএনএফের প্রধান হিসেবে যে নাথান বমের কথা বলা হয়, তিনি রুমা উপজেলার এডেন পাড়ার অধিবাসী। নাথান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের স্নাতক। রুমার এডেন পাড়ায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামের একটি বেসরকারি সংগঠনেরও প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তবে তিনি এখন কোথায় আছেন, সেটি জানা যায়নি।

পাহাড়ে কেএনএফের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে কেএনএফের সম্পর্কের কথা জানা যায়। রুমা উপজেলার ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন এলাকার সালাপৌপাড়ার কাছের কোনো স্থানে কেএনএফের আস্তানা ছিল বলে মনে করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছর অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১