কোরবানি, যাকাত, হজের ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ কী কী?

বগুড়া নিউজ ২৪: কোরবানি, যাকাত, হজ, ফিতরা ইসলামের গুরুত্ব বিধান। এর মধ্যে যাকাত ও হজ ফরজ। কোরবানি ও সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব।এই বিধানগুলো পালনের ক্ষেত্রে শর্ত হলো নিজের জীবনোপকরণের থেকে অতিরিক্তি সম্পদ থাকলে কোরবানি, যাকাত, হজ, সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়।

অর্থাৎ, কারো কাছে নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্তি সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলার রূপা এর সমতুল্য সম্পদ এক বছর থাকলে এবং তা বর্ধনশীল হলে যাকাত ফরজ হবে।

হজ ফরজ হয় কারো কাছে নিজের জীবনোপকরণের বাইরে মক্কায় গিয়ে হজ করে আসা পরিমাণ সম্পদ থাকলে।

কোরবানি ওয়াজিব হয় কারো কাছে ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের ভেতরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ অর্থাৎ, সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলার রূপা এর সমতুল্য সম্পদ থাকলে।

সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয় কারো কাছে ঈদুল ফিতরের দিন সকালে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ অর্থাৎ, সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলার রূপা এর সমতুল্য সম্পদ থাকলে। তবে ফিতরা দেওয়ার জন্য তার কাছে এই সম্পদ এক বছর থাকা শর্ত নয়।

এই বিধানগুলো পালনের ক্ষেত্রে যেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের কথা বলা হয়েছে। তা আসলে কী?— এ বিষয়ে ইসলামি আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের বক্তব্য হলো—

যে সম্পদগুলো একজন ব্যক্তির জীবিকা নির্বাহে কাজে আসে না এবং যেগুলো ছাড়াও সংসার ভালভাবে চলে যায় কিংবা যে সম্পদগুলো তার দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় না, এমনকি সারা বছরেও কখনো প্রয়োজনে আসে না সেগুলো হচ্ছে ব্যক্তির প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ।

কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে তার বিবরণ দেওয়া হলো—

যেমন— হাসান শরিফ নামের এক ব্যক্তির ৫ টি বাড়ি রয়েছে। এগুলোর ভাড়া দিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। সংসার বড় হবার কারণে পুরো টাকাই পরিবারের পিছনে ব্যয় হয়ে যায়, কোনো অংশ বাকি থাকে না। এ অবস্থায় তার ৫টি বাড়ির সব ভাড়া প্রয়োজনীয় সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

বিপরীতে আতাউর রহমান নামের আরেক ব্যক্তির মাত্র ২ টি বাড়ি আছে। একটি বাড়ির ভাড়া দিয়ে তার সংসার ভালভাবে চলে যায়। এক্ষেত্রে অন্য বাড়িটি জনাব আতাউর রহমামের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ বলে গণ্য হবে।

আরেকটি উদাহরণ এভাবে তুলে ধরা যায় যে, জসিম উদ্দীন নামের এক ব্যক্তি ৩০ বিঘা জায়গা রয়েছে। এতে চাষ করে যে ফসল হয় তা তার সংসার খরচে ব্যয় হয়ে যায়। এক্ষত্রে পুরো ৩০ বিঘা জমি তার প্রয়োজনীয় সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

পক্ষান্তরে জনাব সেলিমের মাত্র ৪ বিঘা জায়গা রয়েছে। যার ২ বিঘার ফসলে তার সংসার চলে যায়। এ অবস্থায় অবশিষ্ট ২ বিঘা জমি জনাব সেলিমের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ বলে গণ্য হবে।

সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মাসাআলা

>> মহিলারা আলমারিতে যে সকল কাপড় সাজিয়ে রাখে তা যদি মাঝে মধ্যে পরিধান করে অথবা অন্তত বছরে দু একবার পরিধান করে তবে তা প্রয়োজনীয় সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হবে। অন্যথায় তা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ বলে গণ্য হবে।

>> বড় বড় ডেগ, বড় বড় বিছানা ইত্যাদি যা দৈনন্দিন কাজে লাগে না, বরং দু-এক বছরে কখনও অনুষ্ঠানে প্রয়োজন হয় তাহলে সেগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ বলে গণ্য হবে।

অনুরূপভাবে কাপ-প্রিচ, চেয়ার-টেবিল ইত্যাদি যদি সারা বছরে কখনো ব্যবহারে না আসে, তবে সেগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ বলে গণ্য হবে।

>> টেলিভিশন এবং হারাম বিনোদনের অন্যান্য উপকরণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ বলে গণ্য হবে।

সুতরাং কোনো ব্যক্তির কাছে যদি এ অতিরিক্ত সম্পদগুলো থাকে এবং তার মূল্য যদি ৫২.৫ তোলা রূপার সমপরিমাণ হয় তাহলে তার উপর কোরবানি ও ফিতরা ওয়াজিব হবে।

আর এ সম্পদগুলো বিক্রি করে যদি হজে যাওয়ার সামর্থ্য হয়ে যায়, তাহলে তার উপর হজ ফরজ হবে। একই সাথে এমন ব্যক্তির জন্য যাকাত ও ফিতরা গ্রহণ করা জায়েয হবে না।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১