ভারতে সব ধরনের ভিসা বাতিল

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসকে মহামারি ঘোষণার পর বিদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা বাতিল করেছে ভারত। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে বিশেষ কারণ ছাড়া ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন না আর কোনো বিদেশি। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ বহাল থাকবে।

বুধবার দেশটির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভিসা বাতিলের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন।

তবে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কূটনীতিক, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন প্রকল্পের ভিসা এই বিধিনিষেধের আওতায় পড়বে না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ভিসা বাতিল সংক্রান্ত নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে-

১. শুক্রবার মধ্যরাত ১২টার পর সমস্ত ভারতীয় ভিসা বাতিল করা হয়েছে। শুধুমাত্র কূটনৈতিক, জাতিসংঘ বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংগঠনের কর্মীদের জন্য জারি ভিসা বহাল থাকবে।

২. প্রবাসী ভারতীয় কার্ডধারীদের ভিসা ছাড়া দেশে প্রবেশের অধিকার ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে।

৩. যদি কোনো বিদেশি নাগরিকের ভারতে প্রবেশ করা খুব প্রয়োজনীয় হয় তবে তাকে কাছাকাছি ভারতীয় দূতাবাস বা কনস্যুলেটে যোগাযোগ করতে হবে।

৪. যেকোনো ব্যক্তি চীন, ইতালি, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, স্পেন ও জার্মানি থেকে এলে বা ১৫ ফেব্রুয়ারির পর সেখানে গিয়ে থাকলে ভারতে প্রবেশের পর তাকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম কার্যকর হবে।

৫. অত্যন্ত প্রয়োজনীয় না হলে বিদেশ থেকে ফেরার পর কাউকে যাত্রা করতে নিষেধ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

৬. খুব দরকার না হলে বিদেশে যাওয়াকে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিদেশ থেকে ফিরলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

৭. স্থলবন্দগুলোতে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বাড়ানো হবে নজরদারি।

এদিকে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ জনে। এদের মধ্যে ১৬ জন ইতালির নাগরিক রয়েছেন। ভারতে দিল্লি এবং তৎসংলগ্ন এলাকাতেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সেখানে এখনও পর্যন্ত ২০ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

তবে পশ্চিমবঙ্গে এখনও কারও শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়েনি। তবে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে এ রাজ্যে এ পর্যন্ত ৩জনকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরো পৃথিবী। এতে বিশ্বজুড়ে নিহত হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৩ জন। শুধু চীনেই মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ১৬৯ জন। চীনের বাইরে নিহত হয়েছে ১ হাজার ৪৬৪ জন।

এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭৩ জনে দাঁড়িয়েছে। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৯৬ জন। চীনের বাইরে ৪৫ হাজার ৪৭৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫ হাজার ৭০৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখন পর্যন্ত মোট ৬৮ হাজার ২৮৬ জন সুস্থ হয়েছে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস বয়স্ক ব্যক্তি এবং আগে থেকেই অসুস্থ এমন ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এখন পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই বয়স্ক লোকজন।

বৃহস্পতিবার সকালে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, চীনে নতুন করে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ১৮ জন এবং মারা গেছে ১১ জন। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৮০ হাজার ৭৯৬ জন এবং মারা গেছে ৩ হাজার ১৬৯ জন।

ভাইরাস সংক্রমণের কারণে চীনসহ অধিক আক্রান্ত দেশ ভ্রমণে সতর্কতা, নিষেধাজ্ঞা এবং কড়াকড়ি আরোপ করেছে প্রায় সকল দেশ। ভাইরাসের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অধিকাংশ বিমান সংস্থার ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে।

চীনে উদ্ভূত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১২৪টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। শুধু চীনেই আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৯৬ জন। চীনের বাইরে শনাক্ত হয়েছে ৪৫ হাজার ৪৭৭ জন। এর মধ্যে ইটালিতে ১২ হাজার ৪৬২ জন। যা চীনের বাইরে সর্বোচ্চ।

যেসব দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে-

নিহত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে চীনে ৩ হাজার ১৬৯, ইটালিতে ৮২৭, ইরানে ৩৫৪, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬৬, যুক্তরাষ্ট্র ৩৮, ফ্রান্স ৪৮, স্পেন ৫৫, জাপান ১৫, ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজে ৭, ইরাক ৭, হংকং ৩, অস্ট্রেলিয়া ৩, যুক্তরাজ্য ৮, নেদারল্যান্ড ৫, জার্মানি ৩, বেলজিয়াম ৩, সুইজারল্যান্ড ৪, সান ম্যারিনো ২, লেবানন ২, ফিলিপাইন ২, পানামা, মরক্কো, মিশর, থাইল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, কানাডা, সুইডেন, আয়ারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, আলবেনিয়া, পানামা, বুলগেরিয়া ও তাইওয়ানে ১ জন করে।

চীনের পর করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ইতালিতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২৭ জনে। দেশটিতে একদিনে এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।

চীনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও ইতালিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। একদিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩১৩। চিকিৎসাধীন আছেন ১০ হাজার ৫৯০ জন। দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ৪৬২ জন। যা চীনের পর সর্বোচ্চ।

করোনা ভাইরাসের কারণে ইতালি জনশূন্য এক দেশে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় কোন মানুষ নেই। হোটেল ও রেস্তোরাঁ বন্ধ। স্টেডিয়াম খালি। কোনও পর্যটক নেই। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে দেশটির ছয় কোটি মানুষ। থমকে গেছে গোটা ইতালি। যানবাহন আগের মতো চলাচল না করায় বেড়ে গেছে যাত্রী দুর্ভোগ।

খাদ্যসামগ্রী এবং ঔষধের দোকান ব্যতীত সমগ্র ইতালিতে সব ধরনের দোকানপাট, বার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত বন্ধ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী গিসেপে কন্তে লোকজনকে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

পুরো দেশজুড়েই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর আগে দেশটির ১৪টি প্রদেশে ৮ মার্চ থেকে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করা হলেও তা বাড়িয়ে পুরো দেশেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কন্তে লোকজনকে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সফরের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী কন্তে বলেন, এখন আর সময় নেই। যারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন তাদের সুরক্ষার জন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। দেশজুড়ে স্কুল, জিমনেশিয়াম, জাদুঘর, নাইটক্লাব এবং অন্যান্য ভেন্যু বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আমাদের নাগরিকদের স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা দিতে চাই।’

সরকারের ডিক্রিতে রেড জোন দেয়া হয়েছে ইতালির কয়েকটি প্রদেশ। এরমধ্যে মোডেনা, পারমা, পিয়াসেনজা, রেজিও এমিলিয়া, রিমিনি, পেসারো এবং উরবিনো, ভেনিস,পাডুয়া, ট্র্যাভিসো, আস্তি, আলেসান্দ্রিয়া, নোভারা, ভারবানো, কুসিও অসসোলা এবং ভেরসেল্লি। এসব এলাকা থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

সরকার বলছে, এই রেড জোনের আইন কেউ অমান্য করলে ২০৬ ইউরো জরিমানা অন্যথায় ৩ মাসের জেল দেয়া হবে। এছাড়াও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সিনেমা, মসজিদ আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় করোনা ভাইরাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বুধবার (১১ মার্চ) বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘোষণা দেয় সংস্থাটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ডা. টেড্রস আধানম ঘেব্রেয়াসুস বলেন, গত দুই সপ্তাহে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা উৎপত্তিস্থল চীনের বাইরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ভাইরাসের আশঙ্কাজনক মাত্রায় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি ‘গভীরভাবে শঙ্কিত’।

তিনি বিভিন্ন দেশের সরকারকে ‘জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ’ গ্রহণের মাধ্যমে এই প্রাদুর্ভাব থেকে উত্তেরণের আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ইউরোপের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছেন। টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে আগামী ৩০ দিনের জন্য সমস্ত ভ্রমণ স্থগিত করা হয়েছে।

এ সময় তিনি আরও বলেছিলেন যে “শক্তিশালী তবে প্রয়োজনীয়” এই বিধিনিষেধ যুক্তরাজ্যের জন্য প্রযোজ্য হবে না, যেখানে ইতিমধ্যে ৪৫৬ জন ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে এবং ৮ জন মারা গেছে।

আমেরিকাতে এই ভাইরাসের ১ হাজার ৩২২ জন আক্রান্ত, যার মধ্যে ৩৮ জন মারা গিয়েছে।

বুধবার ওভাল অফিস থেকে মি. ট্রাম্প বলেছেন, “নতুন কোনও সংক্রমণ যেন আমাদের দেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য আমরা ইউরোপ থেকে সমস্ত ভ্রমণ স্থগিত করব। যেটি শুক্রবার মধ্যরাতে কার্যকর হবে।”

মি. ট্রাম্প আরও বলেছিলেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো “একই সাবধানতা অবলম্বন করতে ব্যর্থ হয়েছিল।”

তিনি চীনের বাইরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ ইতালির কঠোর নতুন বিধিনিষেধের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এ কথা বলেছেন। দেশটি দেশব্যাপী লকডাউনের অংশ হিসাবে খাদ্যের দোকান এবং ফার্মেসী ব্যতীত সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছে।

মি, ট্রাম্প বলেছিলেন যে ভ্রমণ স্থগিতাদেশ ইউরোপ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসা “প্রচুর পরিমাণে বাণিজ্য এবং পণ্যসম্ভারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।”

তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলার ‍ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন এবং কংগ্রেসকে মার্কিন অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রভাব কমানোর লক্ষ্যে বড় ধরনের কর মওকুফ বিষয়ক আইন পাসের আহ্বান জানিয়েছেন।

“আমেরিকান জনগণকে রক্ষা করার জন্য আমরা ফেডারেল সরকার এবং বেসরকারী খাতের পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করছি”, বলছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

অন্যদিকে করোনা ভাইরাসে জার্মানির ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ আক্রান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল। তারপরও ভাইরাস প্রতিরোধে দেশটি সীমান্ত বন্ধের পক্ষে নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান।

জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলন করেছেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল। সেখানেই গবেষকদের বরাতে তিনি বলেছেন, এই ভাইরাসে জার্মানির ৭০ ভাগ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। কোন প্রতিষেধক আবিস্কার না হওয়ায়, এর ছড়ানোর গতি কিভাবে কমানো যায় সেদিকেই তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

বার্লিনে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘এ ভাইরাস ঠেকানোর কোনো ব্যবস্থা বা কার্যকর উপায় এখনও নেই। জনসংখ্যার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ তাই (করোনা ভাইরাসে) আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।”

ইতিমধ্যে জার্মানিতে ১৯৬৬ জনের দেহে এই রোগ শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। যার মধ্যে তৃতীয়জন মারা গেছেন বুধবার এবং তিনজনেরই মৃত্যু হয়েছে পশ্চিমাঞ্চলের জেলা হাইন্সব্যার্গে। এরমধ্যে শুধু গত একদিনে আক্রান্ত হয়েছে ৪০১ জন।

ম্যার্কেল এই পরিস্থিতিতে সবাইকে ঐক্য বজায় রাখার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘‘ আমাদেরকে ঐক্য, বোধ-বুদ্ধি এবং ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে হবে। আশা করি সে পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ হবো।” এ সময় তিনি স্বাস্থ্য কর্মী এবং স্থানীয় প্রশাসনগুলোকে ভাইরাস প্রতিরোধে উদ্যোগ নেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান। এছাড়া ইটালির নাগরিকদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন। ইটালিতে চীনের পর সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে এই ভাইরাস।

করোনা প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা এবং অর্থনৈতিক পতন সামলাতে ম্যার্কেল ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার উপরও জোর দেন।

ইটালিতে এরই মধ্যে ১২ হাজার ৪৬২ জন মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৮২৭ জন। এর মধ্যে শুধু গতকালই মারা গেছেন ১৯৬ জন। এমন প্রেক্ষাপটে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সীমান্ত বন্ধে দাবি উঠছে। জার্মানির প্রতিবেশি অস্ট্রিয়া ইটালির নাগরিকদের সেখানে ঢুকতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এর পক্ষে নয় জার্মানি। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান জানিয়েছেন, সীমান্ত বন্ধ করে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানো সম্ভব হবে না।

তবে এক হাজারের বেশি মানুষের জমায়েত হতে পারে এমন সব আয়োজন বাতিল করার আহবানও জানিয়েছেন স্পান। এ বিষয়ে জার্মানির ১৬ টি রাজ্যের কর্তৃপক্ষ শিগগিরই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

জার্মান জীবনযাত্রায় করোনার প্রভাব

জার্মানিতে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর থেকে সুপারশপ ও খাবারের দোকানগুলোতে লম্বা লাইন ধরে লোকজন নিত্যপণ্য কেনা শুরু করে। বিশেষ করে টিনজাত খাবার এবং টয়লেট পেপার পাওয়াই যাচ্ছে না। এ অবস্থায় দেশটিতে দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ দেশটিতে ১৫ লাখের বেশি মানুষ খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল।

করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় ভিড় এড়িয়ে চলা। এ জন্য বিশ্বজুড়ে অনেক অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে গেছে। জার্মানিতেও স্বাস্থ্য ‘সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ‘ বিবেচনা করে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করতে আলোচনা চলছে।

ভাইরাসটি শনাক্তের পর জার্মানিতে একের পর এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা স্থগিত বা বাতিল করা হচ্ছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লাইপৎশিশ বইমেলা, মুজিকম্যাসে ফ্রাঙ্কফুর্ট।

ইটালিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জার্মান সরকার এখনো এই সিদ্ধান্ত নেয়নি। যদিও দেশটির অন্তত ১০০টি স্কুল ও ডে-কেয়ার সেন্টার করোনার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। বাডেন-ভ্যুটের্নবের্গ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিতের কথা ভাবছেন।

চীনের উহানে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। পরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা আতঙ্কে পশ্চিমা দেশগুলোতে লোকজন শুধু চীন নয় বরং এশীয় রেঁস্তোরা ও দোকানও এড়িয়ে চলছেন। এশীয় চেহারার কারণে বর্ণবিদ্বেষের শিকার হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। লাইপৎশিশে বুন্দেস লিগার ম্যাচ দেখতে যাওয়া একদল জাপানিকে স্টেডিয়াম থেকে বের করে দেওয়া হয়।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে। বিশেষ করে এয়ারলাইনগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। জার্মানির এয়ারলাইন লুফথান্সার ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের পর তাদের প্রায় ১৫০টি উড়োজাহাজ বসে আছে, বাতিল হয়েছে সাত হাজার ১০০র বেশি ফ্লাইট।

ডিসেম্বরের শেষ দিকে উহানে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর জানুয়ারি থেকে চীনে গাড়ি তৈরির কারখানা বন্ধ আছে। জার্মানির গাড়ি উৎপাদন শিল্পেও করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

জার্মানির পর্যটন খাতে করোনার প্রভাব ভয়াবহ হবে বলে সতর্ক করেছে দেশটির হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর ৭৬ শতাংশের বেশি হোটেল ও রেঁস্তোরা তাদের বুকিং বাতিল হওয়ার কথা জানিয়েছে। একইভাবে তাদের আয়ও হ্রাস পেয়েছে।

ইটালি ও ফ্রান্সের পর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিতেই সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত সেখানে ১৯৬৬ জন সংক্রমিত হয়েছেন। যার প্রেক্ষিতে জার্মান সীমান্ত দিয়ে আসা গাড়ির যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা শুরু করেছে পোল্যান্ড ও চেকপ্রজাতন্ত্র।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপর এ পর্যন্ত বিশ্বের ১২৪টি দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ