করোনাভাইরাস প্রতিরোধঃ সামাজিক দূরত্ব ও হোমকোয়ারেন্টেন

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে সামাজিক বা পারস্পারিক দূরত্ব বজায় রাখাকেই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে বেছে নিয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষ। কলকারখানা, অফিস-আদালত বন্ধ রেখে মানুষকে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করা এবং বিশেষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়ার মধ্য দিয়ে নিজের পরিবার ও প্রতিবেশীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদ রয়েছে। চীনের উহান থেকে সমগ্র চীনে এবং বাইরে করোনাভাইরাস ব্যাপক মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে চীন সরকারের এমন লকডাউন, শাটডাউন ও সোশ্যাল ডিসটেন্সিং বেশ কার্যকর পন্থা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। যেসব দেশ এসব বিষয়ে শুরুতে গুরুত্ব দেয়নি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময়ক্ষেপণ করেছে সেখানেই করোনাভাইরাস প্রাণঘাতী মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। নানাবিধ সীমাবদ্ধতার মাঝেও বাংলাদেশ সরকার করোনাভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য চেষ্টা করছে। এ সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা অবলস্বন করলে মহামারীর ব্যাপকতা রোধ করা হয়তো সম্ভব।কিন্তু শহরে-বন্দরে গ্রামের মানুষ অনেকেই সামাজিক দূরত্বের নিয়মনীতি মানছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সেনাসদস্যদের নজরদারির মধ্যেও অনেক মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। ব্যাপক ছোঁয়াচে ও প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে এটি একটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশে নাগরিক সমাজের অসচেতনতায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের তরফ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে করোনাভাইরাস সংক্রমণে লাখ লাখ মানুষের ক্ষতি, এমন কি মৃত্যুও হতে পারে। 
দেশের অধিকাংশ এলাকার মানুষ করোনাসংক্রমণের বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্বনীতি ও সরকারি নির্দেশনা মানছে না। লাখ লাখ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাজারে ও চায়ের দোকানে আড্ডা জমাচ্ছে। অথচ এসব লোকের শহর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাই ছিল বড় ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। অন্যদিকে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে অবস্থানরত বেশিরভাগ মানুষকে সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা অমান্য করে রাস্তা, বাজার ও দোকানে ভিড় জমাতে দেখা যাচ্ছে। আইন ও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করার এহেন প্রবণতা দেশের মানুষের মধ্যে নতুন কিছু নয়। কিন্তু ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে নিজের পরিবারের সদস্যদের এবং সমাজের মানুষের জীবন-মৃত্যুর হুমকির বিষয় যেখানে জড়িত, সেখানে এহেন বেপরোয়া মনোভাব অকল্পনীয়, অপ্রত্যাশিত। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ কঠোরতা প্রদর্শন করতে হবে। আইন বিধি ও নির্দেশনা লংঘনকারীদের প্রতি দয়া বা অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে সরকারি নির্দেশনা অমান্যের গতানুগতিক প্রবণতার পাশাপাশি এক শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষের রুটি-রুজির বিষয়ও এর সাথে জড়িত রয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী কেনা-বেচার সুযোগ লকডাউনের আওতার বাইরে থাকায় প্রান্তিক পর্যায়ের একশ্রেণির মানুষ জীবিকার তাগিদে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। তাদের অহেতুক আতঙ্কিত বা বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে হতদরিদ্র লোকদের মধ্যে ত্রান দেওয়া শুরু হয়েছে।  
 জনগণের সচেতনতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া শুধুমাত্র প্রশাসনের পক্ষে লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো নির্দেশনার পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর আংশিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঠেকানো অসম্ভব। সরকারি নির্দেশনা ও আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর্মহীন, অতি দরিদ্র, প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের খাদ্য চাহিদাসহ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ত্রানের পরিমান বাড়ানো প্রয়োজন বলে দেশের বিজ্ঞমহল মনে করেন। 

লেখকঃ  ওসমান গনি ,সাংবাদিক ও কলামিস্ট
Email- ganipress@yahoo.com

মোবা- ০১৮১৮-৯৩৬৯০৯
কুমিল্লা

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ