বগুড়া নিউজ ২৪ঃ নানান ধরনের শাকের মধ্যে লাল শাক এবং কচু শাক অন্যতম। এই দুই শাকে এমন কিছু উপকারি গুণিাবলি রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি।
আমাদের দেশে বছরে বারো মাসই নানা রকম শাক সবজি পাওয়া যায়। শহর বা গ্রামে আমরা বাড়ির পাশে বা আঙ্গিনায় শাক লাগিয়ে থাকি। শাক আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি।
নানা ধরনের উপকারি গুণাগুণ রয়েছে শাকে। আজকে আমরা দেখবো লাল শাক এবং কচু শাক এর উপকারিতা।
দেহের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য লাল শাকের গুরুত্ব অনেক বেশি।৩০ বছর বয়স এর পর থেকে শরীরের ভাঙন আটকানোর পাশাপাশি একাধিক রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
কচুশাক আমাদের দেশে মাঠ ঘাটে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। আয়রনসমৃদ্ধ খাবার হিসেবে কচুশাকের খ্যাতি আছে। ইলিশ, চিংড়ি ও শুঁটকি মাছের সঙ্গে মুখরোচক খাবার হিসেবে বেশ সুস্বাদু।
তাহলে আসুন এখন দেখে নেওয়া যাক পুষ্টিগুণ বিচারে লাল শাক না কচু শাক খাওয়া উচিত-
লাল শাকের পুষ্টিগুণঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম লাল শাকে আছে ক্যালসিয়াম ৩৭৪ মি. গ্রা., শর্করা ৪.৯৬ মি. গ্রা., প্রোটিন ৫.৩৪ মি. গ্রা., স্নেহ ০.১৪ মি. গ্রা., ভিটামিন বি১ ০.১০ মি. গ্রা., ভিটামিন বি২ ০.১৩ মি. গ্রা., ভিটামিন সি ৪২.৯০ মি. গ্রা., ক্যারোটিন ১১.৯৪ মি. গ্রা., অন্যান্য খনিজ ১.০৬ মি. গ্রা., খাদ্য শক্তি ৪৩ কিলোক্যালরি।
উপকারিতাঃ
লালশাক রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ফলে হৃদরোগের ঝুকি কমে। এন্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে লালশাক। কিডনি ফাংশনগুলো ভালো রাখতেও লাল শাক খুব উপকারি। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে ফলে রক্তশূন্যতা রোধেও খুব উপকারী।
লালশাকে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি যা চোখের জন্য খুব উপকারী। বিশেষ করে দাঁতের সুস্থতা, হাঁড় গঠন, গর্ভবতী এবং প্রসূতি মায়েদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে এই শাক উপকারী।
কচু শাকের পুষ্টিগুণঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে থাকে- ৬.৮ গ্রাম শর্করা, ৩.৯ গ্রাম প্রোটিন, ১০ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), ০.২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন), ১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ১.৫ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি, ২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৫৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি।
উপকারিতাঃ
প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে তাই রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য কচুশাক খাওয়া একরকম আবশ্যক বললেই চলে। কচুশাকে ভিটামিন-এ থাকে যা আমাদের রাতকানা, ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধসহ দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে দেয়।
কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে যা খাবারকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে থাকে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তাঁরা কচুশাক খেতে পারেন।
কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এর লৌহ উপাদান আপনার দেহে সহজে আত্তীকরণ হয়ে যায়। তাছাড়া ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের ছোট বেলা থেকেই কচু শাক খাওয়ানো উচিত।
আমাদের শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখতে কচু শাক অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এই শাকের আয়রন ও ফোলেট রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে অক্সিজেন সংবহন পর্যাপ্ত থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিন কে রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করে।
কচু শাকের সব চেয়ে বড় উপকারিতা হল এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ফসফরাস। আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠনে এবং ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচু শাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কচু শাকে বিদ্যমান নানা রকমের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গর্ভবর্তী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী। কচু শাক সহজ লভ্য তাই দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী মহিলারা ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য কচু বা কচুশাক খেতে পারেন।
তাছাড়া কচুশাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল কমে তাই উচ্চরক্ত চাপের রোগীদের জন্য কচুশাক এবং কচু বেশ উপকারী। নিয়মিত কচুশাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।