আয়া সোফিয়ার ইতিহাস

যমুনা নিউজ বিডিঃ  এশিয়া ও ইউরোপ দুই মহাদেশেই অবস্থান তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের। বসফরাস প্রণালীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে, দেড়হাজার বছরের ঐতিহাসিক নান্দনিক স্থাপত্য ’আয়া সোফিয়া’।

৫’শ ৩৭ খ্রিষ্টাব্দে বাইজেন্টাইন শাসনামলে প্রথম জাস্টিনিয়ানের নির্দেশে নির্মাণ কাজ শেষ হয় ’আয়া সোফিয়া’র’। স্থাপত্যকলার ইতিহাসে অন্যমাত্রা যোগ করেছে আয়া সোফিয়া। আর এই স্থাপত্য সোফিয়া সম্পর্কে অনেকেরেই রয়েছে অজানা। এখানে প্রবেশ করতেই এর কারুকাজ যে কারোরই চোখ জুড়াবে।

স্থাপনাটি খ্রিস্টান এবং মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষের কাছেই মর্যাদার বস্তু। ইতিহাসের পালাবদলের সাথে বদলেছে এর পরিচয় এবং ব্যবহার। বানানো হয়েছিল বাইজেন্টাইন খ্রিস্টানদের উপাসনালয়। কালের বিবর্তনে ব্যবহৃত হয়েছে গ্রিক সনাতন খ্রিস্টানদের ক্যাথেড্রাল, রোমান ক্যাথলিকদের ক্যাথেড্রাল এবং মুসলিমদের মসজিদ হিসেবে। এখানে ছিল অর্থডক্স চার্চের প্রধানের অবস্থান। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজকীয় অনুষ্ঠান, রাজার অভিষেক ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হতো এখানেই।

আয়া সোফিয়ার মার্বেলের রঙিন যে নঁকশা রয়েছে, গির্জার সেই মূল অংশে দাঁড়িয়েই মুকুট পরতেন নতুন বাইজেন্টাইন সম্রাটরা। ৯’শ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল ’আয়া সোফিয়া’।

কিন্তু ১৪৫৩ সালে সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদের অটোমান সাম্রাজ্যের দখলে চলে যায় কনস্টান্টিনোপল। এর নতুন নাম হয় ইস্তাম্বুল। চিরকালের মত অবসান ঘটে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের। আয়া সোফিয়ায় ঢুকে ইস্তাম্বুল বিজয়ী সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদের নির্দেশে স্থাপত্যকে মসজিদে রূপান্তর করা হয়। সেখানেই তিনি প্রথম জুমার নামাজ পড়েন। ইস্তাম্বুলে ১৬১৬ সালে ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদ নির্মাণ শেষ হওয়া পর্যন্ত আয়া সোফিয়াই ছিল শহরের প্রধান মসজিদ।

আয়া সোফিয়া নিয়ে খ্রিস্টান- মুসলমানদের দ্বন্দ্বের অবসান টানতে প্রায় ৫শ’ বছর পর ১৯৩৪ সালে একে জাদুঘরে রূপান্তর করেন আধুনিক তুরস্কের রূপকার কামাল আতাতুর্ক। জাদুঘর থাকাকালীন ১৯৮৫ সালে বিশ্ব-ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় এ স্থাপনাটি।

দৃষ্টিনন্দন আয়া সোফিয়ার বিশাল সোনালী গম্বুজটি মেঝে থেকে কমপক্ষে ১’শ পঞ্চাশ ফুট উঁচুতে। সোনালী রঙের বিশাল গম্বুজটি দেখতে অনেকটা স্বর্ণের গম্বুজের মত। প্রতিবছর লাখো মানুষ এই ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখতে ভিড় জমান ইস্তাম্বুলে।

আয়া সোফিয়া খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের টানাটানি কম হয়নি। আবারও মসজিদে রূপ দিতে নড়েচড়ে বসেন বর্তমান ক্ষমতাসীন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান। ১০ই জুলাই ২০২০– উচ্চ আদালতের ঐতিহাসিক রায়ে পূরণ হয় মুসলমানদের স্বপ্ন। স্বাগত জানিয়েছেন তুর্কিবাসী। তারই ধারাবাহিকতায় ২৪শে জুলাই-শুক্রবারের জুমার নামাজের মধ্য দিয়ে আবারও এখানে এবাদতে মশগুল হচ্ছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ