মাহবুব আলী খান: এক ক্ষণজন্মা দেশপ্রেমিকের প্রতিচ্ছবি

সভ্যতার ইতিহাসে এমন কিছু মানুষের সন্ধান পাওয়াযায় যারা তাদের মহান কীর্তি দিয়ে দেশ ও জাতিকে এগিয়েনিয়ে গেছেন অনেক দূর। মহান কীর্তি যেমন বিলীন হয় না, তেমনি মহান পুরুষদের স্মৃতিও চিরকাল জাগরুক থাকে মানুষের অন্তরে। রিয়ারএডমিরাল মাহবুব আলী খান ছিলেন সে রকমই এক সৎ, কর্মীষ্ঠ, দেশপ্রেমিক মহান পুরুষ। যতদিন জীবিত ছিলেন দেশের জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করেছেন। নিষ্ঠা, কর্মদক্ষতা ও মানুষের প্রতি অকুন্ঠ ভালবাসা তাঁর পারিপার্শ্বিক জগৎকে উজ্জ্বল আলোকময় করে তুলেছিল। অমায়িক ব্যবহার, গভীর জ্ঞান ও প্রশ্নাতীত সততায় তাঁর আভিজাত্যই উদ্ভাসিত হতো বার বার।

আজ ৬ আগষ্ট সেই মহান পুরুষের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক যোগাযোগ উপদেষ্টা, সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও সাবেক নৌবাহিনী প্রধান।বর্ণাঢ্যকর্মময় জীবনের অধিকারী এ সৎ ও মহান দেশপ্রেমিকের জন্ম ১৯৩৪ সালের ৩ নভেম্বর সিলেট জেলার বিরাহীমপুরের এক সম্ভ্রান্ত ও বিখ্যাত মুসলিম পরিবারে। তার পিতাব্যারিস্টার আহমেদ আলী খান প্রথম মুসলিম হিসেবে তৎকালীন ভারতে ১৯০১ সালে ব্যারিস্টার হন। তিনি নিখিল ভারত আইন পরিষদের সদস্য (এমএলএ) ও আসাম কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যুক্তরাজ্যেরক্যামব্রিজবিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি তিনটি বিষয়ে এমএ ডিগ্রিও নেন। হায়দ্রাবাদ নিজামের প্রধান আইন উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।

এম এ খানের মাতা ছিলেন জুবাইদা খাতুন। অবিভক্ত বিহার, আসাম ও উড়িষ্যার জমিদার পরিবারেরখান বাহাদুর ওয়াসিউদ্দিন আহমেদএর কন্যা। আহমেদ আলী খানের অপর ভাই গজনফর আলী খান ১৮৯৭ সালে ভারতে চতুর্থ মুসলিম হিসেবে আইসিএসলাভ করেন। গজনফর আলী খানকেতাঁর কর্মদক্ষতারস্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার১৯৩০ সালে তাঁকে ‘অফিসার অব দি ব্রিটিশ এম্পায়ার’ এবং সি.আই.ই উপাধিতে ভূষিত করে।

এম এ খানের দাদা ছিলেন তৎকালীন ভারতের বিশিষ্ট চিকিৎসক খানবাহাদুর আসসাদার আলী খান। তিনি বিহার ও আসামেরদারভাঙ্গা মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবংপাটনা মেডিকেল কলেজেরঅধ্যক্ষছিলেন। তিনি ১৯২৪ সালে সিলেটের বিরাহীমপুরেনাফিজাবানুচ্যারিটেবল হাসপাতাল ও ১৯৩০ সালে সিলেটমাতৃমঙ্গলনার্সিংট্রেইনিংসেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন।

এম এ খানের পিতার মামা জাস্টিস আমীর আলী কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। এম এ খানের দাদা খানবাহাদুর আসসাদার আলী ছিলেন স্যার সৈয়দ আমীর আলীর জামাতা। স্যার সৈয়দ আমীর আলী ছিলেন ইংল্যান্ডের রয়্যালপ্রিভি কাউন্সিলের সদস্য এবং ইন্ডিয়ানভাইসরয়েজএক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য।

স্যার সৈয়দ আমীর আলীর বিখ্যাত দুটি গ্রন্থ হলো ‘হিস্ট্রি অব সারাসেন’ ও ‘স্পিরিট অব ইসলাম’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী ছিলেন এম এ খানের চাচাতো ভাই। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে এম এ খান ছোট। সবার বড় বোন সাজেদা বেগম। মেজভাই বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. সেকেন্দার আলী খান। মরহুম ডা. সেকেন্দার আলী খানের মেয়েআইরিনজোবায়দা খান, যিনি মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেলএবংআন্তর্জাতিকউন্নয়নআইনসংস্থারমহাপরিচালক।২০২০ সালের ১৮ জুলাইজাতিসংঘকর্তৃপক্ষসংস্থাটিরবাক ও মতপ্রকাশবিষয়কবিশেষর্যাাপোটিয়ারহিসেবেআইরিনখানকেনিয়োগদিয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সিলেটের বিরাহীমপুর, কলকাতা ও পুরান ঢাকার ৬৭ পুরানা পল্টন লাইনের বাড়িতে এম এ খানের শৈশব ও কৈশোর অতিবাহিত হয়। তিনি কলকাতা ও ঢাকায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন শান্ত, ধীর ও চিন্তাশীল। সুদর্শন শারীরিক গঠন ও ব্যক্তিত্বপূর্ণ অভিব্যক্তির কারণে পরিবারের সবার প্রিয় ছিলেন তিনি।

এম এ খান ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করতেন। ব্যাডমিন্টনখেলায় পারদর্শী ছিলেন। খেলা নিয়ে ভাইদের সঙ্গে খুনসুটিও হতো।পুরানা পল্টন লাইনের বাড়িতে সামনের খালি জায়গায়ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্ট কেটে ভাই-বোনরা দিন-রাত খেলতেন। ধর্মের প্রতি ছোটবেলা থেকেই ছিল তার গভীর অনুরাগ। প্রতিদিন সকালে নামাজ আদায় করে পবিত্র কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করতেন। যে কোনো কাজে বের হওয়ার আগে তিনি আল্লাহকে স্মরণ করতেন।

১৯৫৫ সালে সৈয়দাইকবালমান্দ বানুর সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই কন্যা শাহিনা খান জামান (বিন্দু) এবং ডা. জুবাইদা রহমান (ঝুনু)।

শাহিনা খান জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়াশোনা করেন।বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্তএয়ারকমডোর সৈয়দ শফিউজ্জামান এম এ খানের জ্যেষ্ঠ জামাতা।তিনি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন।

ছোটকন্যাজুবাইদা রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রেডিগ্রিলাভ করেনএবংইমপেরিয়ালকলেজ, লন্ডনথেকে৫৫টি দেশেরসকলশিক্ষার্থীদেরমধ্যেসর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে মাস্টার্স অফ কার্ডিওলজি ডিগ্রী অর্জন করেন।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় পুত্রএবংবিএনপিরভারপ্রাপ্তচেয়ারম্যান তারেক রহমান তার কনিষ্ঠ জামাতা। তাদের কন্যাব্যারিস্টার জায়মা রহমান এম এ খানেরএকমাত্র নাতনি।জায়মা রহমানলন্ডনের কুইন ম্যারি ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকরারপর ‘ইনার টেম্পল’ থেকে বার অ্যাট’ল অর্জনকরেন।

এম এ খান ১৯৫২ সালে ক্যাডেট হিসেবে পাকিস্তান নৌবাহিনীর নির্বাহী শাখায় যোগ দেন এবং কোয়েটায় সম্মিলিত বাহিনী স্কুল থেকে সম্মিলিত ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

তিনি উচ্চতর শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের ডারমাউথেরয়্যালনেভাল কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর রণতরীট্রায়ামপতে ১৯৫৪ সালে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।১৯৫৬ সালের ১ মে স্থায়ী কমিশন লাভ করেন। এরপর তিনি রয়্যাল কলেজে এবং গ্রিনউইচসহ ইংল্যান্ডের রয়্যালনেভালইনস্টিটিউশনে বিভিন্ন কোর্স সমাপ্ত করেন। ১৯৬৩ সালেকমনওয়েলথদেশগুলোরমধ্যেশ্রেষ্ঠ কৃতী অফিসার হিসেবে তিনি যুক্তরাজ্যে রানী এলিজাবেথ কর্তৃক পুরস্কৃত হন। এম এ খান ১৯৬৩ সালে যুক্তরাজ্যেরএইচএম ভূমি থেকে টর্পেডো ও অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়াফেয়ার অফিসার হিসেবে উত্তীর্ণ হন। তিনি পাকিস্তানের নেভাল স্টাফ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেন।

করাচিতে পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে তিনি সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট কোর্স সমাপ্ত করেন। এম এ খান ১৯৬০ সালে পিএনএসতুগ্রিলেরগানারি অফিসার ছিলেন এবং ১৯৬৪ সালে পিএনএসটিপু সুলতানের টর্পেডো ও অ্যান্টি-সাবমেরিন অফিসার ছিলেন।১৯৬৭-৬৮ সালে তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েজয়েন্টচিফসসেক্রেটারিয়েট স্টাফ অফিসার (ট্রেইনিং এবং মিলিটারিঅ্যাসিস্ট্যান্স) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

তিনি ১৯৬৯ সালে পিএনএস মুখতার-এ মাইন সুইপার প্রধানও ছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালে পিএনএসহিমালয়ে টর্পেডো ও অ্যান্টি-সাবমেরিন স্কুলের অফিসার-ইন-চার্জ এবং করাচিতে সিওয়ার্ডডিফেন্স অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধশুরুরআগেথেকেইতাঁরপোস্টিংছিলোতৎকালীনপশ্চিমপাকিস্তানে।সেখানেতিনি স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ অবস্থান করছিলেন। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানসরকার এমনিতেইবাঙালিদের আর বিশ্বাস করছিলোনা,তারউপর এম এ খানের দেশের জন্য অনুভূতি টের পেলে তাঁকেএবংআরোকিছুবাঙালীঅফিসারকেসপরিবারেগৃহবন্দিকরারপরিকল্পনাকরিহয়।এইপরিকল্পনারতথ্যপাবারপরতিনি১৯৭৩ সালেপাকিস্তানেতাঁরবাসারসকলকার্যক্রমস্বাভাবিকদেখিয়েসপরিবারেএকপোষাকেপালিয়েআফগানিস্থানএবংভারতহয়েবাংলাদেশেআসেন।

বাংলাদেশেফেরতআসারপর১৯৭৩ সালের অক্টোবরে তিনি চট্টগ্রামে মার্কেন্টাইল একাডেমির প্রথম বাঙালি কমান্ড্যাট নিযুক্ত হন। ১৯৭৪ সালে নৌ-সদর দফতরে পারসোনেল বিভাগের পরিচালক হিসেবে তাকে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি নৌবাহিনীর সহকারী স্টাফ প্রধান (অপারেশন ও পারসোনেল) নিযুক্ত হন।

১৯৭৬ সালের ডিসেম্বরে রয়্যাল নেভি কর্তৃক হস্তান্তরিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রথম রণতরীবিএনএস ওমর ফারুক(সাবেক এইচএমএএসল্যান্ডাফ)-এর অধিনায়ক হন। এ রণতরী গ্রহণের পর তিনি তা নিয়েআলজেরিয়া, যুগোস্লাভিয়া, মিসর, সৌদি আরব এবং শ্রীলঙ্কারবন্দরগুলোতে শুভেচ্ছা সফরের পর দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭৯ সালের ৪ নভেম্বর তিনি নৌবাহিনীর স্টাফ প্রধান নিযুক্ত হন এবং ১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারিরিয়ারএডমিরাল পদে উন্নীত হন। এম এ খান সবসময়ই জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন। নৌবাহিনীতে যোগদানে দেশপ্রেম স্পষ্ট ছিল।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগদানের পর তাকে নেভালকমডোর পদে দায়িত্ব দেয়া হয়। এ সময় নেভালকমডোর আকবর ছিলেন তার ঘনিষ্ঠজন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে বিশ্বমানের আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে তিনি কাজ করেছেন। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আইন প্রণয়ন করেছেন তিনি। দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষা, সমুদ্রে জেগে ওঠা দ্বীপের দখল রক্ষা, দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ বাংলাদেশের দখলে রাখা, সমুদ্র এলাকায়জলদস্যু দমন, সুন্দরবন এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে নৌবাহিনীকে সচেষ্ট করতে তার নেতৃত্ব বিশেষ ভূমিকা রাখে।

তিনি সরকারের সশস্ত্র বাহিনীর বেতন ও পেনশন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। বাহিনীগুলোর বেতন কাঠামো এই কমিটির দীর্ঘদিনের বিশেষ বিবেচনার ফল। তিনি দেশের প্রশাসনিক পুনর্গঠনে জাতীয় বাস্তবায়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। বাংলাদেশে উপজেলা পদ্ধতির প্রবক্তাও তিনি। ১৯৮২ সালে দেশে সামরিক আইন জারিকালেএডমিরাল এম এ খান উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হয়। এ সময় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা হয় তাকে। এবং ১৯৮২ সালের ১০ জুলাই থেকে ১৯৮৪ সালের ১ জুন পর্যন্ত তিনি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এ সময় শাহজালাল সেতু, লামাকাজী সেতু ও শেওলা সেতুসহ দেশের অন্যান্য স্থানেও বড় বড় কাজের সূচনা হয়। রিয়ারএডমিরাল মাহবুব আলী খানের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ছিল না। লক্ষ্য ছিল স্বল্পকালীনমেয়াদে স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কিছু কাজ সম্পাদন। তাতে তিনি সফলও হয়েছেন। তিনি শুধু সিলেটের নয়, সারাদেশের জন্যই ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিতছিলেন।

১৯৮২ সালের জুন মাসে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে রিয়ারএডমিরাল মাহবুব আলী খান বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৮২ সালের ডিসেম্বরের ৬ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত জ্যামাইকায় অনুষ্ঠিত সমুদ্র আইন বিষয়ক সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কনভেনশন অন অফ সিকনফারেন্সে স্বাক্ষর দেন।
এসকাপের উদ্যোগে ১৯৮৩ সালের মার্চে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত রেলওয়ে মন্ত্রীদের সভায় তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৮২ সালের এপ্রিল মাসে রিয়ারএডমিরাল মাহবুব আলী খান নৌ, রেল ও সড়ক প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে চীন সফর করেন এবং চীনের নৌঘাঁটিগুলো পরিদর্শন করেন। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রীকোরিয়া সফরে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

১৯৮২ সালের নভেম্বরে তিনি রাশিয়া যান এবং প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভেরঅন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। সর্বশেষ ১৯৮৪ সালের ৩০ মার্চ তিনি গিনির প্রেসিডেন্ট আমদের সেকুতুরেরশেষকৃত্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বড় ভাই রেজাউর রহমান নৌবাহিনীতে এম এ খানের সহপাঠী ছিলেন।

তাই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে এম এ খানের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এম এ খানকে সম্মান করতেন। জিয়াউর রহমানরাষ্ট্রপতিহবারপরে ১৯৭৯ সালের ৪ নভেম্বররিয়ারএ্যাডমিরালমাহবুবআলীখাননৌবাহিনীর প্রধানহনএবং পাশাপাশি তিনি তত্কালীন সরকারের যোগাযোগ উপদেষ্টারদায়িত্বপালনকরেন।

১৯৮৪ সালের ৫আগস্ট সকালেচট্টগ্রামহতেঢাকাগামীবাংলাদেশবিমানেরএকটিফকারএফ ২৭-৬০০ যাত্রীবাহীবিমানতৎকালীনজিয়াআন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিকটস্থজলাভূমিতেবিধ্বস্ত হলে এম এ খান উদ্ধারকাজেনেতৃত্বদেবারজন্যসেখানেযান। একনাগাড়েপ্রায় ‌১২ ঘণ্টাকাজকরারপরগভীররাতেবুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলেবাসায়ফেরতআসেন। পরদিন ৬ আগস্টসকালেচিকিৎসারজন্যঢাকাসেনানিবাসস্থসম্মিলিতসামরিকহাসপাতালেভর্তিহনএবংসেইদিনই তিনি চিকিত্সাধীন অবস্থায় ইন্তেকালকরেন। জীবনাবসান হয় মাত্র ৪৯ বছর বয়সে একদেশপ্রেমিক মহান নায়কের। রিয়ারএডমিরাল মাহবুব আলী খান সমাজসেবা এবং দেশপ্রেমে ছিলেন এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। স্ত্রী সৈয়দাইকবালমান্দ বানু প্রতিষ্ঠিত সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান সুরভির জন্য ছিল তার পূর্ণ সহযোগিতা।

সুরভির হাজার হাজার শিশুর মাঝে আজও তাকে দেখতে পান দেশবাসী। সুরভির কার্যক্রমে ও তৃণমূলের পথকলি শিশুদের উন্নয়নে এম এ খানের স্ত্রী সৈয়দাইকবালমান্দ বানুকে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকার সমাজসেবায় বিশেষ ভূমিকা রাখায় ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রদান করে। সমাজসেবারপাশাপাশিতিনিঅক্সফোর্ডবিশ্ববিদ্যালয়েআর্টএরউপরবিশেষকর্মশালায়অংশগ্রহণকরেসম্মানসূচকসনদলাভকরেন।

এছাড়া নারীর স্বাস্থ্যসেবা আরো বাড়াতে সিলেটের নাফিজাবানুচ্যারিটেবল হাসপাতাল ও ম্যাটারনিটি হাসপাতাল উন্নয়নে এম এ খান বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। তার আরো একটি গুণ আজো সবাইকে মনে করিয়ে দেয় আর তা হলো, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা ও ছোটদের ভালোবাসা।

সবারসেইভালোবাসানিয়েতিনিআজওবেঁচেআছেনবাংলাদেশনৌবাহিনীরপ্রতিটিসদস্যেরবুকে, সুরভীপরিবারেরপ্রতিটিমানুষেরহৃদয়েআরতাঁরনামেপ্রতিষ্ঠিতএম এ খানস্মৃতিসংগ্রহশালায়।

লেখক:- আতিকুর রহমান রুমন, সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ