রেড ক্রিসেন্টের দানের টাকা জোরপূর্বক ফেরতের অভিযোগ

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ করোনা মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি হত দরিদ্রদের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। ৩ হাজার টাকা করে সহযোগিতা পায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ৪০০ পরিবার। অর্থ প্রদানের পরের দিনেই সেই টাকার অর্ধেক জোর করে ফেরত নেয়ার অভিযোগ উঠেছে খোদ ওই সংগঠনের গাইবান্ধা জেলা সভাপতি আতাউর রহমান আতার বিরুদ্ধে। আতাউর রহমান গাইবান্ধা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও। ভুক্তভুগীদের অভিযোগ গাইবান্ধা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তার দুই সহযোগী সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ছাইদুর রহমান ও সাবেক মহিলা মেম্বার আছিয়া বেগমের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকার মধ্যে এক থেকে দেড় হাজার টাকা জোরপূর্বক হাতিয়ে নিয়েছে।
যদিও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও রেড ক্রিসেন্টের গাইবান্ধা জেলা সভাপতি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, তার সম্মানহানীর উদ্দেশ্যে কেউ হয়তো এমন কাজ করে থাকতে পারে। বিষয়টি প্রমাণ হলে তিনি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, করোনাভাইরাসে খেটে খাওয়া মানুষদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। ওই সংগঠন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নে ৪শ’ পরিবারের মাঝে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে।
প্রত্যেককে ৩ হাজার টাকা করে সহায়তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক স্বেচ্চাসেবী ওই সংগঠন। নিয়ম অনুযায়ী তালিকা করার পরে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ আসে। পোস্ট অফিসের অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং নগদ একাউন্টের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকা উপকারভোগীদের মোবাইলে দেয়া হয়। পরে ফরম ফিলাপের মাধ্যমে গত ২৬শে জুলাই সাঘাটা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৪শ’ পরিবারের হাতে সহায়তার নগদ টাকা বুঝে দেয়া হয়। এ সময় সংগঠন থেকে বলা হয় এই টাকা সম্পূর্ণ আপনাদের। কোনো দালাল চক্রকে একটি টাকাও দিবেন না। হাতে ৩ হাজার টাকা পেয়ে উপকারভোগী পরিবারগুলো অনেক খুশি। সেদিন তারা বুঝতে পারেনি এই টাকার ভাগ দিতে হবে। পরদিন সকাল থেকেই ঘুড়িদহ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ছাইদুর রহমান ও সাবেক মহিলা মেম্বার আছিয়া বেগম বাড়িতে এসে হাজির সেই টাকার ভাগের জন্য। এই সাবেক দুই মেম্বার ছাইদুর ও আছিয়া বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান টাকা নেয়ার জন্য পাঠিয়েছে বলে উপকারভোগীদের কাছ থেকে ২ হাজার করে টাকা চেয়ে বসেন। কারো কাছে ১ হাজার আবার কারো কাছে দেড় হাজার টাকা নিয়ে ক্ষান্ত হন তারা।

সাঘাটার দক্ষিণ ঘুড়িদহ গ্রামের আফিয়া বেগম জানান, ‘তিন হাজার টাকা হাতে পাওয়ার পরদিনেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের লোক ছাইদুর মেম্বর দুই হাজার টাকা ফেরত চায়। পরে এক হাজার টাকা ফেরত দিয়েছি।
একই গ্রামের মনোয়ারা বেগম বলেন, “সহায়তার তালিকায় নাম দেয়ার আগে সাবেক মেম্বার ছাইদুর রহমান ও সাবেক মহিলা মেম্বার আছিয়া বেগম বাড়িতে এসে বলেছে, নাম দিচ্ছি টাকা পাওয়ার পরে অর্ধেক ফেতর দিবে হবে। সেই শর্ত মোতাবেক দেড় হাজার টাকা ফেরত নেয়ার জন্য এসেছিল। আমি এক হাজার টাকা ভয়েই ফেরত দিয়েছি।

এই ঘুড়িদহ ইউনিয়নের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী বিলকিছ বেগম জানান, “করোনায় সহায়তার তালিকা করার সময় আমাদের সবাইকে ছাইদুর রহমান বলেছেন, তোমাদের নাম দিবো একটা শর্তে ৩ হাজার টাকার ২ হাজার টাকা আমাকে দিতে হবে। আমি প্রথমে ৫০০ টাকা দিয়েছি মানেন নি। পরে এক হাজার টাকা নিয়ে গেছে। কি আর করার আমরা গরিব মানুষ যা বলবে তাই শুনতে হবে ।”
এই গ্রামের ছাদেকের ছেলে ভুলু মিয়া জানান, আমরা অনেকেই টাকা দিতে অস্বীকার করলে মেম্বার হুমকি দেয়। বলে টাকা না দিলে আগামীতে আর কোনো সহায়তার তালিকায় নাম দেয়া হবে না। গরিবের কপালে সহায়তার ৩ হাজার টাকার এক হাজার টাকা দিতে হয়েছে।

ফিরোজা বেগম, সহিমন বেগম, সাহানা বেগম, ছলিম উদ্দিন, আসাতন, জোবেদাসহ প্রায় অর্ধশত উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বললে তারা সবাই এমন অভিযোগ করেন। তাদের একটাই কথা সাবেক দুই মেম্বার বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের কথা বলে তাদের থেকে এক থেকে দেড় হাজার টাকা ফেরত নিয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এমন কি বিষয়টি প্রকাশ করলে মিথ্য মামলা দিয়ে গ্রামছাড়া করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে তারা।

টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক ইউপি মেম্বার ছাইদুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
বিষটি জানতে চাইলে অভিযুক্ত গাইবান্ধা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও গাইবান্ধা জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান আতা মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচন করার কারণে আমার অনেক শত্রু আছে। আমার সম্মানহানী করতে তারা এধরনের কাজ করে থাকতে পারে। যদি এমন কাজের প্রমাণ মেলে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন জানান,‘বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির করোনা সহায়তার টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি তদন্তপূর্বক দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ