যে কারণে ফুসফুসে সমস্যা হয়, সুস্থ থাকবেন যেভাবে

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ দেশে ফুসফুসের প্রধান অসুখ যক্ষ্মা। এছাড়া বায়ু দূষণের কারণে ফুসফুসের নানা রোগে অনেকেই আক্রান্ত হন। আর এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস। তাই এই সময়ে ফুসফুস সুরক্ষিত রাখাটাই চ্যালেঞ্জ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৮ সালের ‘হেলথ বুলেটিন’ অনুযায়ী, বাংলাদেশে অসংক্রামক ব্যাধিতে যাদের মৃত্যু হয় তার ১০% শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাজনিত কারণে। এই বুলেটিন অনুযায়ী শিশু মৃত্যুর যে ১০টি প্রধান কারণ রয়েছে, তার মধ্যে দুই নম্বরে রয়েছে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টজনিত রোগে।

বাংলাদেশে যক্ষ্মা ছাড়াও হাঁপানি, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিস এবং শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণও অনেক বেশি। বায়ু দূষণের কারণে ফুসফুসের সমস্যায় অনেকেই আক্রান্ত হন। এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের যক্ষ্মা বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, যে দেশগুলোতে যক্ষ্মা রোগের হার সবচেয়ে বেশি তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে আক্রান্ত ছয়টি দেশের মধ্যে।

বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে যক্ষ্মার প্রবণতা বেশি। কারণ, বাংলাদেশ খুব ঘনবসতির একটি দেশ। সব জায়গায় এত ভিড় যে শ্বাসপ্রশ্বাসের রোগগুলো হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে একজন থেকে আর একজনের শরীরে সংক্রমিত হওয়া খুব সহজ। যক্ষ্মায় আক্রান্ত একজন রোগী আরও দশজনকে আক্রান্ত করতে পারে।

আমাদের দেশে হাঁচি ও কাশির সময়ে মুখ রুমাল দিয়ে ঢেকে নেয়া, রুমাল না থাকলে বাহু দিয়ে মুখ ঢেকে হাঁচি ও কাশি দেয়ার অভ্যাসটা বেশিরভাগের মধ্যেই নেই। এটা ভিড়ের মধ্যে ঘটলে সংক্রমণ অতি সহজে ছড়িয়ে থাকে।

ফুসফুসের শত্রু ধূমপান ও বায়ু দূষণ
ঢাকা শহরে বায়ুর মান যত দিন যাচ্ছে খারাপ হচ্ছে। বায়ুতে ধুলো ও ধোয়ার কারণে শহরের আকাশ কেমন ঝাপসা দেখায়। এর ফলে হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টের রোগীর হার অনেক বেশি।

বছরের শেষের দিকে ইটের ভাটার চিমনি শুধু শহরে নয় গ্রামেও দূষণ তৈরি করে। যারা দুষিত বায়ুর পরিবেশে নিয়মিত লম্বা সময় কাজ করেন তাদের ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হবে। বিশেষ করে যারা শহরের রাস্তায় বা ইটের ভাটায় কাজ করেন।

ইদানীংকালে ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিস’ মেয়েদের মধ্যে অনেক বেশি দেখা যায়। এর একটি কারণ হচ্ছে সরাসরি ধূমপান না করলেও ধূমপায়ীদের আশপাশে যারা থাকেন তাদেরও অনেক ক্ষতি হয়। মেয়েরাও আগের চেয়ে এখন বেশি ধূমপান করছেন।

এছাড়া গ্রামের কাঠের চুলায় রান্না হয়, তার ধোঁয়া ফুসফুসের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। যেহেতু নারীরা চুলার খুব কাছে থাকেন, প্রতিদিন এবং লম্বা সময় ধরে তাই খুব সরাসরি এই ধোঁয়া তার ফুসফুসে প্রবেশ করে।

আরও রয়েছে মশার কয়েলের ধোঁয়া, এটিও ফুসফুসের ক্ষতি জন্য কম দায়ী নয়।

ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে করোনাভাইরাস
করোনাভাইরাসের আক্রমণের প্রধান লক্ষবস্তু হচ্ছে ফুসফুস। মানুষের শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে করোনা। এমনকি সুস্থ ব্যক্তি যাদের ফুসফুসে কখনো কোন সমস্যা ছিল না তারাও মারাত্মক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

করোনাভাইরাস ফুসফুসে একটা তাণ্ডবলীলা চালায়। ফুসফুসের কোষগুলোতে সে বাসা বাঁধে এবং সেখানেই তার প্রসার ঘটে। এই কোষগুলোর মারাত্মক ক্ষতি করে করোনাভাইরাস। কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের একটা বড় অংশের পালমোনারি ফাইব্রোসিস হচ্ছে।

মানুষের ফুসফুস নরম, এতে সহজে ফুসফুসে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড যাওয়া-আসা করে। কিন্তু ফাইব্রোসিস হয়ে গেলে ফুসফুস শক্ত আকার ধারণ করে। তখনই অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের যাওয়া আসা ব্যাহত হয়। এই কারণে ফুসফুসের থলিগুলো ফুলতে পারে না। ফলে রোগী দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টে ভোগে। এই রোগের চিকিৎসার পরও ফুসফুসকে তার আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা যায় না।

ফুসফুস যেভাবে সুস্থ রাখবেন
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, শুধু করোনাভাইরাসের জন্য নয়, ফুসফুসকে সুস্থ রাখার সারাবছরই চেষ্টা থাকা উচিৎ। ফুসফুস সুস্থ রাখতে সবচেয়ে বেশি দরকার নির্মল বায়ু। কিন্তু সেটি পাওয়া যেহেতু খুব সহজ নয়, তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে ফুসফুস সুস্থ রাখতে কয়েকটি উপায় মানতে হবে। তা হলো-

ধূমপান যত দ্রুত সম্ভব ত্যাগ করা : ধূমপান শুধু ফুসফুসের ক্ষতি নয়, শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও ক্ষতি করে। ধূমপান ত্যাগ করলে পুরো শরীরের মঙ্গল।

সুষম খাদ্য গ্রহণ করা : শাকসবজি, ফল ও মাছ বিশেষ করে টক জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। লেবু, কমলা, মাল্টা, বাতাবি লেবু, আমড়া, বড়ই এই ধরনের টক জাতীয় ফল ফুসফুসের জন্য উপকারী।

ফুসফুসের জন্য উপকারী ভিটামিন : ফুসফুসে প্রতিনিয়ত যে ক্ষয় হয় সেজন্য ভিটামিন-সি, ডি এবং জিঙ্কযুক্ত খাবার খাওয়া খুবই জরুরি।

ফুসফুসের সহজ ব্যায়াম : দুই হাত আস্তে আস্তে একসাথে মাথার উপরে তুলতে হবে। তোলার সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হবে। দুই হাত প্রসারিত করে মাথার উপরে তুললে বক্ষ পিঞ্জর প্রসারিত হয়। এতে বেশি বাতাস প্রবেশ করে। মাথার উপরে হাত কিছুক্ষণ রাখতে হবে। দশ সেকেন্ডের মতো শ্বাস ধরে রাখতে হবে। এরপর হাত নামাতে হবে একই সাথে জোরের সাথে মুখ দিয়ে ধরে রাখা বাতাস ছেড়ে দিতে হবে। এই ব্যায়াম সকাল ও বিকাল ১৫ মিনিট ধরে করতে হবে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০