তারিকুল আলম,
সিরাজগঞ্জঃ শারদীয় দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় উৎসব। সারা বছর এই পাঁচ দিনের অপেক্ষায় বসে থাকেন সবাই। কিন্তু এবার কোভিড-১৯ এর কারণে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম জারি রয়েছে। মণ্ডপে জমায়েত নিষেধ। এজন্য এবার আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক বা কোনো আনন্দ আয়োজন হচ্ছে না।
আতসবাজি ও পটকা ফাটানো, ভক্তিমূলক সংগীত ছাড়া অন্য কোনো গান বাজানো, সন্ধ্যার আরতির পর দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এবার ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে মন্দির প্রাঙ্গণেই সীমাবদ্ধ থাকছে দুর্গাপূজা।
তার মধ্যে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে পঞ্চমীর দিন থেকেই হচ্ছে একটানা বৃষ্টি। ফলে উৎসব আমেজ না থাকার পাশাপাশি ধর্মীয় আচার পালনেও বিঘ্ন ঘটছে।
পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দসহ অনেকেই বলছেন, যেখানে মিলনের উপরেই নিষেধাজ্ঞা, সেখানে উৎসব হয় কী করে? তাই এ বছর দুর্গাপূজা আছে, কিন্তু দুর্গোৎসব নেই। এবার পূজা মনে-মনে, নিষ্ঠায়, ভক্তিতে, আরাধনায়।
প্রতিবছর শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের প্রত্যেক এলাকার আনাচে কানাচে থাকে বাহারী আলোকসজ্জার ঝলকানি। এলাকাভিত্তিক ভাবে হরেক রকম পণ্যের পসরা নিয়ে বসে মেলা। কিন্তু করোনার কারণে এবার সব কিছুই যেনো ধূসর।
শেরে বাংলা ঐক্য পূজা কমিটির সভাপতি দীলিপ গৌড় বলেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যথাবিধি নিয়ম মেনে মায়ের পূজা করা হচ্ছে। দূরত্ব বজায় রাখতে কয়েক স্টেপে অঞ্জলি প্রদান করা হচ্ছে। সেখানেও অল্প লোককে রাখা হবে। এবার বাড়তি কোনো আনন্দ আয়োজন নেই। দর্শনার্থীদের জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা মাস্ক ছাড়া আসবেন তাদের মাস্ক দেয়া হবে। হ্যান্ড স্যানিটইজারও রাখা হবে।
কেন্দ্রীয় মন্দির শ্রী শ্রী মহাপ্রভু আখড়ার সভাপতি প্রদীপ বসাক জানান, করোনা মহামারীর কারণে যথাসম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শাস্ত্রমতে পূজার বাইরে এবার কোনো উৎসব পালন হবে না। অন্যবারের মতো নাটক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না। শুধু শুক্রবার মহা সপ্তমীতে বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কয়েক ধাপে অঞ্জলি দেয়ার পর প্রসাদ দিয়ে সকলকে মন্দির চত্বর থেকে বের করে গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। দর্শণার্থীদের জন্য বিকেল ৪টা থকে রাত ৯টা পর্যন্ত মন্দিরের গেট খোলা থাকবে। ভেতরে যাতে দর্শনার্থীরা বেশিক্ষণ অবস্থান করতে না পারেন, সে জন্য মন্দির চত্বরে এবার চেয়ার রাখা হয়নি। ভলান্টিয়াররাও কাউকে বেশিক্ষণ অবস্থান করতে দিচ্ছেন না।
মারোয়ারী পট্টী পূজা কমিটির সভাপতি রবি কানু বলেন, প্রতিবার যে জমকালো আলোকসজ্জা হয় সেটা এবার আমরা করিনি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা নাটকও হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে অঞ্জলি প্রদানের জন্য মণ্ডপে নিরাপত্তামূলক সার্কেল করা হয়েছে। কয়েক ধাপে অঞ্জলি প্রদান করেছেন ভক্তরা। হাত ধোয়ারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও মহনবমীতে বাসায় বাসায় প্রসাদ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। অতিথিদের জন্য শুকনো প্রসাদের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নরেশ ভৌমিক বলেন, যথাবিধি নিয়ম মেনে পূজা অর্চনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দূরত্ব বজায় রেখে অঞ্জলি প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিদিন মায়ের পূজার পর সীমিত আকারে উপস্থিত ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুন্দরভাবে পূজা উদযাপিত হচ্ছে। পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে করা মনিটরিং সেল সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছে। উপজেলা কমিটিগুলোও পৃথকভাবে মনিটরিং সেল করে সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারাও জেলা ও উপজেলার মণ্ডপগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছেন।
সারাবছর অপেক্ষার পর এই দুর্গোৎসবের আনন্দে ভাঁটা পড়ায় কষ্ট পেলেও দেশ ও সমাজের কথা এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারাও মেনে নিয়েছেন সকল নির্দেশনা।
সবার প্রত্যাশা সকল অমানিষার অন্ধকার কেটে গিয়ে পৃথিবী খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে এবং আসছে বছর দুর্গোৎসব ফিরবে তার স্বমহিমায়।