বগুড়া নিউজ ২৪ঃ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ৷ একইসঙ্গে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উপলক্ষে দুদকের ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। এসময় ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে হবে। সমস্যা স্বীকার না করলে সমাধান হবে কীভাবে? আজ আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে, আমরা রাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করবো না। যে কাজটি করবো, তা নির্মোহভাবে করবো।
তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘নিজেকে সর্বোচ্চ পরিশুদ্ধ রাখতে হবে। সম্পদের মোহাচ্ছন্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যাদের জন্য সম্পদ রেখে যাবেন, তারা হয়তো এ সম্পদ ভোগও করতে পারবে না। এটাই সত্য। তাই নিজেদেরকে শুদ্ধতম মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুন। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন। অবশ্যই এ সমাজ দুর্নীতির করালগ্রাস থেকে মুক্তি পাবে।’
দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বিভিন্ন পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, ‘একমাত্র জনসংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়া পাকিস্তান সব অর্থনৈতিক-সামাজিক সূচকের ইতিবাচক অগ্রগতিতে বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে। যদি দেশ স্বাধীন না হতো, হয়তো আমাদের আরও খারাপ পরিণতি হতো। দুদক যে চেতনায় গঠিত হয়েছিল, ক্রমাগত প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বাড়ার মাধ্যমে এটি কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সত্যিকার অর্থেই উন্নতির প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। তাই আমাদেরকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। আর এক্ষেত্রে সরষের ভেতর যেন, ভূত না থাকে। তাই আসুন, মনন, চিন্তন ও আচরণে নিজ নিজ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করি। দুদক কমিশনার ড. খান আরো বলেন, ‘উন্নতির প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। তাই আমাদেরকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে সরষের ভিতর যেন, ভূত না থাকে।’
আলোচনা সভায় দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমাদের তখনকার আবাস ছিল নড়াইলে। এই মফস্বল শহরে ২৬ মার্চ সকালেই আমরা খবর পাই, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। আমরা তখন পাগলের মতো ছুটছিলাম-অস্ত্র সংগ্রহের জন্য। আমরা তৎকালীন এসডিপিওর কাছে অস্ত্রের জন্য ট্রেজারি খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানাই। তিনি আমাদের অনুরোধ রাখলেন না। এমন সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর নূর মোহাম্মদ লোহাগড়া থেকে নড়াইলে আসেন। তিনিও এসডিপিওকে অনুরোধ করলেন। কিন্ত তার কথাও এসডিপিও শুনলেন না। এমন সময় এই মহান শিক্ষক এসডিপিওর গালে কষে চড় মারলেন। এবং আমাদের ট্রেজারি ভেঙ্গে অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নির্দেশ দিলেন। সরকারি ট্রেজারির অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করে আমরা জাতির পিতার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ অংশ নিয়ে ছিলাম। যুদ্ধের এক পর্যায়ে আমরা ভারতে চলে যাই।’
ভারতে যাওয়ার এক মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়ে দুদক কমিশনার আরো বলেন, ‘ভারত থেকে আবার যুদ্ধের তথ্য সংগ্রহের জন্য নড়াইলে ফিরে আসি। পথিমধ্যে পাক-আর্মির চেকে ধরা পড়ি। কিন্তু সৌভাগ্য আমাকে তারা চিহ্নিত করতে পারেনি। নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বেঁচে যাই। আজকের এই দিনে আমরা বিজয়ী হই। লাল-সবুজের পতাকায় পৃথিবীর প্রশংসিত একটি দেশ বাংলাদেশ। আমরা গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা।’
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদক মহাপরিচালক মোঃ জহির রায়হান, সাঈদ মাহবুব খান, একেএম সোহেল, পরিচালক মোঃ গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোঃ মাহমুদ হাসান, দুদক সিলেট সজেকার উপপরিচালক মোঃ নূর-ই-আলম প্রমুখ।