আমার দেখায় তারেক রহমান

সময়টা ১৯৯৫ সালের মধ্য ডিসেম্বর। যাত্রা শুরু বগুড়ার চম্পামহল থেকে। গন্তব্য ঢাকার কারওয়ান বাজারে অবস্থিত বিএসইসি ভবন। উদ্দেশ্য স্বাধীনতার মহান ঘোষক, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জৈষ্ঠ্য পুত্র তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাৎ। তখন সবেমাত্র শহীদ জিয়া প্রতিষ্ঠিত দেশের একমাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী শেষ করেছি। পরের দিন দুপুর ২টায় সময় পেলাম সাক্ষাৎ করার। চরম আনন্দে আর কিছুটা ভয়ে ভয়ে গেলাম বেলা পৌনে দু’টা নাগাদ বিএসইসি ভবনে। আমি ওয়েটিং রুমে বসা। এর ১০ মিনিট পর ভিতরে ডাক পড়লো।

ছোট্ট একটি কক্ষ, পরিপাটি করে সাজানো। বিলাসিতার নামমাত্র চোখে পড়লো না। যা দেখলাম, তা অবাক করার মত। চারিদিকে রুচিশীল ও মার্জিত সব আসবাবপত্রে নিখুঁতভাবে সাজানো ছোট্ট কক্ষে দর্শনার্থীর জন্য মাত্র দুটো হাতল ছাড়া চেয়ার। তারেক সাহেব বসে আছেন তার নির্ধারিত চেয়ারে। আমি বসলাম ঠিক তাঁর সামনের চেয়ারে। ছালাম বিনিময়ের পর জানতে চাইলেন কেন এসেছি। তিনি খুশি হলেন এটা জেনে যে, আমি তার বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। খুঁটেখুঁটে শুনলেন সব কিছু। শোনার পর একটি নোট বুক এগিয়ে দিয়ে বললেন নাম ঠিকানা ও প্রয়োজনটা লিখে দেবার জন্য। একপর্যায়ে কাজের ব্যস্ততার জন্য স্বহাস্যে দাঁড়িয়ে বিদায় জানালেন। কিছু বললেন না। শুধু স্মিত হেসে বললেন বিষয়টি দেখবেন। তিনি আমার কথা রেখেছিলেন

সেদিন তিনি ছিলেন বয়সে তরুণ, কিন্তু দেখেছিলাম একজন পরিপক্ক ব্যক্তি হিসেবে। তিনি সেদিন শুনেছিলেন বেশি, বলেছিলেন কম, মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি কথা। আমার সেদিনের দেখা যুবকটি আজ একজন পরিপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। যাপন করছেন নির্বাসিত জীবন। ভাবতেই কষ্ট লাগে। এরপর বহুবার, বহুদিন, বহু জায়গায় দেখেছি তাঁকে। কখনও দেখেছি গ্রাম্য রাস্তায় নিজে গাড়ী ড্রাইভ করে জানার চেষ্টা করছেন কৃষকের সমস্যাগুলো, কখনও দেখেছি রাস্তা-ঘাট, ব্রীজের নির্মাণ কাজ তদারকি করছেন একজন বিজ্ঞ প্রকৌশলীর মত। কখনও দেখেছি বগুড়া বায়তুর রহমান মসজিদের নির্মান কাজে প্রকৌশলীদেরকে একজন অভিজ্ঞ আর্কিটেকের মত নিখুঁত সব পরামর্শ দিতে।

তিনি ছিলেন মূলত একজন বিনয়ী, মার্জিত ও রুচিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তরুণ বয়সে ১৯৮৮ সালে নিজ জন্মভূমি বগুড়ার গাবতলী থানা বিএনপির একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে তিনি রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে রাজপথে অংশগ্রহণ করে রাজনীতিতে সক্রিয় হবার আগাম বার্তা দেন জাতিকে। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মা বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারণায় বগুড়ার গাবতলীতে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। গাবতলীবাসী তাদের সন্তানকে পেয়ে নতুন করে বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তিনি তাঁর বাবা স্বাধীনতার মহান ঘোষক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মত সহজেই সাধারণ মানুষের মাঝে মিশে যেতে পারতেন। সহজেই করতে পারতেন মানুষের মন জয়।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিশাল জয়ে তার গৃহিত পরিকল্পনা, সু-সংগঠিত রাজনৈতিক প্রচার কৌশল, কার্যকরী ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁর প্রণীত কর্মকৌশলে হেরে গিয়ে আওয়ামী লীগ পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়। মূলত এর পর থেকেই শুরু হয় তারেক রহমানের প্রতি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। কারণ তারা তারেক রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচণতা ও দূরদর্শিতার ভয়ে হয়ে পড়ে আতঙ্কিত। তিনি তার বিনয়ী অথচ দৃঢ়চেতা মানসিকতার জন্য অচিরেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে আবির্ভূত হয়ে উঠেন।

তারেক রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বাস্তবমুখী কর্মপরিকল্পনা শহীদ জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচির প্রতি অবিচল আস্থা ও কর্মীবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ২০০২ সালের ২২ জুন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম একজন বিচণ রাজনীতিবিদ বিবেচনায় তাঁকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত করে দলকে তৃণমূল পর্যায়ে সু-সংগঠিত করার দায়িত্ব অর্পণ করেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেই সারাদেশের অগণিত নেতা-কর্মীদের ডাটাবেজ তৈরি করেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, যদি শহীদ জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে দলকে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সু-সংগঠিত করতে হবে। তিনি রাজনীতিকে রাজধানীর বিলাস বহুল ড্রইং রুম থেকে বের করে গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তৃণমূল প্রতিনিধি সভার মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতির সাথে তৃণমূলের সেতুবন্ধন তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তাতে তিনি সফলও হয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথা এখানে বলে রাখছি, যা সেদিন আমাকে অভিভূত করেছিল।

দিনটি ছিল ২০০৩ সালের ৬ মে। তিনি গিয়েছিলেন ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে, উদ্দেশ্য ২৬৮টি দুঃস্থ পরিবারের মধ্যে হাঁস, মুরগী, গাছের চারা, ছাগল ও নগদ অর্থ বিতরণ। রাত্রি যাপন করেছিলেন ঝিনাইদহ সার্কিট হাউসে। আমি তখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। বিশ্ববিদ্যালয়টি তখন ভাইস-চ্যান্সেলর বিরোধী আন্দোলনে অচল। সন্ধ্যার পর গেলাম তার সাথে কথা বলার জন্য। নিরাপত্তার কারণে বেশ বেগ পেতে হলো সার্কিট হাউসে প্রবেশ করতে। তারপর তারেক রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোঃ আতিকুর রহমান রুম্মনের সহায়তায় তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত কক্ষে ঢুকে দেখলাম পূর্বদিকে মুখ করে চেয়ারে বসে আছেন। সালাম দিয়ে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলাম। তিনি স্মিত হেসে বললেন, আজ আর পারবো না। হাতের আংগুলটা কেটে গেছে। দেখলাম ডান হাতে রক্ত মাখা ব্যান্ডেজ। নিজেই জানেেত চাইলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি। আমি বলতে শুরু করলাম। একপর্যায়ে তিনি নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সমস্যার খুঁটিনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত বললেন। সমস্যা সমাধানের করণীয় উপায় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দিলেন। অবাক হলাম তার সমৃদ্ধ তথ্য ভান্ডার দেখে। বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা দু’ভাগে বিভক্ত, কেন এই বিভক্তি তাও বললেন স্ববিস্তারে। সেদিনের ঘটনা মূল্যায়ন করতে গিয়ে আজও অবাক হই এই ভেবে যে, তাঁর মত একজন জাতীয় নেতা কিনা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সমস্যার প্রকৃত তথ্য সম্যক অবগত আছেন।

যে কথা বলছিলাম, যে সব অগণিত তৃণমূল নেতৃবৃন্দ জাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে যেতে পারতেন না, বলতে পারতেন না তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা, তাদের সামনে জাতীয় নেতৃবৃন্দকে তারেক রহমান তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে এনে তৃণমূলের কথা শোনানোর চমৎকার একটি ব্যবস্থা চালু করতে পেরেছিলেন। এসব সম্মেলনে তিনি জাতীয় নেতৃবৃন্দদেরকে বলতে নয়, মূলত তৃণমূলের কথা শুনতে উৎসাহিত করতেন। আর যারা বিএনপির রাজনীতির মূলশক্তি, সেই গ্রামের পরিশ্রমী ও ত্যাগী নেতৃবৃন্দকে তাদের দুঃখ-কষ্ট ও দল পুনর্গঠনে পরামর্শ প্রদানে উৎসাহিত করতেন। তিনি কখনও কখনও মঞ্চে নয়, আসন গ্রহণ করতেন দর্শক ও শ্রোতার কাতারে। দ্রুত সমাধানযোগ্য সমস্যাগুলোর সমাধান করতেন তাৎক্ষণিকভাবে। যেসব কর্মী কোনদিন মন্ত্রী-এমপিদের কাছে বা তাদের দপ্তরে যাবার সুযোগ পেতেন না, তারা জাতীয় নেতৃবৃন্দকে সামনে পেয়ে প্রাণ খুলে তাদের সমস্যাগুলো বলতে পেরে নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান মনে করতেন। ফলে অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে এধরণের কর্মীমুখি কর্মসূচি জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক রাজনীতিতে ব্যাপক প্রশংসিত হতে থাকে।

২০০৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এধরণের একটি প্রতিনিধি সম্মেলনে উপস্থিত থাকার সুযোগ আমার হয়েছিল। রাজশাহী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলন। আর এর মাত্র কয়েক মাস আগে পূর্বতন কর্মস্থল ইসলামী বিশ্ববিদ্যাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছি। তারেক রহমান জানতেন না যে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। তার সাথে দেখা হলো যখন তিনি মঞ্চ থেকে নেমে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে স্টেডিয়ামের কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন। সালাম বিনিময়ের পর জিজ্ঞাসা করলেন, এখানে কেন? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ে যোগদান করেছি শুনে স্মিত হেসে জানতে চাইলেন, কেমন লাগছে নতুন পরিবেশ। সত্যি সেদিন অভিভূত হয়েছিলাম, আমার মত সামান্য দলীয় আদর্শে বিশ্বাসী একজন শিক্ষকের ভাললাগা ও মন্দ লাগাও ছিল তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। দুপুরের লাঞ্চ বিরতির সময় দেখলাম তাঁর মহানুভবতার আরেক দৃষ্টান্ত। তিনি নিজেকে আলাদা করে নয়, দুপুরের খাবার খেলেন কর্মীদের সাথে একই টেবিলে, একই মেন্যুতে। সেদিন দেখেছিলাম, কাছ থেকে কীভাবে তিনি গ্রামের মাঠে প্রান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কর্মীদের উৎসাহিত করছেন দেশ গঠনের আন্দোলনে শরিক হতে। দেশ গড়তে, দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করতে। জানতে চেয়েছিলাম সম্মেলনে উপস্থিত কয়েকজন বয়োবৃদ্ধ নেতার কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া। তারা যা বলেছিলেন, তার মর্ম কথা হলো- এভাবে তাদেরকে মূল্যায়ন করা হলে তারা দলের আদর্শিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে থাকবেন অবিচল। মূলত রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে তারেক রহমান এখনও দক্ষ ও অত্যন্ত নিপূণ কারিগর। তিনি তাঁর দলের নেতাকর্মীদের শিখিয়েছিলেন, নেতার কাজ শুধু মঞ্চে আসন গ্রহণ করে বক্তৃতা দেয়া নয়। বরং প্রকৃত কাজ হলো অন্যকে দিয়ে সফলভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে নেওয়া।

তারেক রহমান শিক্ষা বিস্তারে ও শিক্ষার মান উন্নয়নে ছিলেন সদা তৎপর। তিনি মেধাবীদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে চালু করেছিলেন মেধা শিক্ষা বৃত্তি। আয়োজন করতেন মেধাবীদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান। এমনই একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। যা কিনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল মৃতপ্রায় এককালের খরস্রোতা করতোয়া নদীর কোল ঘেঁষে স্থাপিত বগুড়া পুরাতন শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে। মিলনায়তন ভর্তি মেধাবী শিক্ষার্থী ও উপস্থিত অভিভাবকদের কলকাকলিতে মুখরিত অনুষ্ঠানে তারেক রহমান ছিলেন প্রধান অতিথি। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিজেই মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ঘোষণা করলেন তিনি নন, মেধাবীরাই আজকের অনুষ্ঠানের অতিথি। তিনি আরও বললেন যে, আমি আজ বলতে নয়, এসেছি তোমাদের কথা শুনতে, শিক্ষা নিতে, তোমাদের ভাবনাগুলো জানতে। সত্যি সত্যি তিনি এক এক করে সবাইকে মঞ্চে ডাকলেন। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তাদের মতামত শুনলেন। জানতে চাইলেন তাদের প্রত্যাশা। অনুষ্ঠান শেষে তিনি আবারও মাইক্রোফোন হাতে দাঁড়িয়ে বললেন, যা শুনলাম, যা দেখলাম, তা বাস্তবায়নই হবে আজকের অনুষ্ঠানের স্বার্থকতা। পরবর্তীতে দেখলাম তিনি তাঁর দেয়া সেদিনের কথা রেখেছিলেন। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নকলমুক্ত পরীক্ষা পদ্ধতি। চালু করেছিলেন উপ-বৃত্তি, মেধাবীদেরকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য চালু করেছিলেন শিক্ষক নিবন্ধন পদ্ধতি। ফলে জাতি পেয়েছিল মেধাবী শিক্ষক, সমৃদ্ধ হয়েছিল দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। যার সুফল এখনও জাতি ভোগ করছে।
যে কথা পূর্বেই বলেছি যে, তারেক জিয়া মূলত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তসমূহ তৃণমূল থেকে গ্রহণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। অর্থাৎ গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ত্যাগী, পরিশ্রমী ও দলীয় আদর্শে অবিচল নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে তিনি করতে চেয়েছিলেন দল পরিচালনা। তিনি রাজনীতিতে মনোনিবেশের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন, মেধা বিকাশ ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বহু কর্মমুখি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে তার সার্থক বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন।

তারেক রহমান জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে সামাজিক উন্নয়ন, দুঃস্থদের সহযোগিতা কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামের অর্থনীতিকে সচল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচিটি শুরু করেছিলেন ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজশাহী জেলার পুঠিয়া-দূর্গাপুর থেকে। পরবর্তীতে তিনি ব্যাপক সাড়া জাগানো এই কর্মসূচি নিয়ে ছুটে গেছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। অনুপ্রাণিত করেছেন গ্রামের কৃষককে। দেশের মূল অর্থনীতিতে অবদান রাখতে মৎস্যচাষ, কৃষি খামার প্রতিষ্ঠাসহ নানাবিধ উৎপাদনমুখী কর্মসূচি গ্রহণ ও বস্তবায়ন ছিল তাঁর দূরদর্শী রাজনৈতিক কর্মসূচি।

আজ যখন বর্তমান সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা, হত্যা, গুম, হয়রানী, মামলা, হামলাতে দেশের মানুষ অতিষ্ট, তৃণমূলের অগণিত নেতাকর্মী মামলা-হামলায় জর্জরিত, মানুষের ভোটাধিকার লুণ্ঠিত, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সীমিত, ঠিক তখনই সরকারের রোষানলে পড়ে নির্বাসিত জীবনে থেকে গোটা জাতিকে দক্ষতার সাথে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। মানুষের ভোটাধিকার ও বাক-স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলনে তিনি জোড়ালো ভূমিকা রেখে চলেছেন। বিএনপির রাজনীতিতে তিনি চালকের আসনে আসীন থেকে দেশবাসীকে প্রতিনিয়ত উজ্জীবিত করে যাচ্ছেন। এখনও গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অগণিত তৃণমূল নেতাকর্মীরা আশায় বুক বেঁধে আছেন। নেতা আসবেন, শুনবেন তাদের কষ্টের কথা। তারপর বলবেন আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশের কথা, ঐক্যবদ্ধ জাতির কথা। অনুপ্রাণিত করবেন দেশবাসীকে আগামীর দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নিতে। আমরা অপোয় আছি। দেশ অপোয় আছে। জাতি অপোয় আছে আগামীর কান্ডারীর জন্য। তিনি আসবেন। অবশ্যই আসবেন।

লেখকঃ অধ্যাপক, আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০