ষ্টাফ রিপোর্টারঃ বগুড়া সামাজিক বন বিভাগ কার্য্যালয়ে কর্মরত কর্মচারীদের মাঝে সর্বদা বিরাজ করে অস্থিরতা। একইসাথে অজানা আতংকে সর্বদা তটস্থ থাকে কর্মরত কর্মচারীরা। সরেজমিনে বগুড়া বন বিভাগের কার্য্যালয়ে গিয়ে কর্মচারীদের চোখেমুখে অসহায়ত্বের ছাপ পরিলক্ষিত হয়েছে। নিজেদের নাম পরিচয় বলাতো দুরে থাক, অফিসে অনুপস্থিত ডিএফও ড. মোহা: আবদুল আউয়াল এর মুঠোফোন নাম্বার দিতেও তাদের প্রচন্ড অনীহা। প্রায় প্রত্যেক কর্মচারীর মুখে শুধু একটি কথা ডিএফও স্যারের অনুমতি ব্যতীত কোন কথা বললে আমাদের সমস্যা হবে। বন অধিদপ্তরের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী বগুড়া বন বিভাগে ৯০টি পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছে মাত্র ৫৩ জন। শুধু তাই নয়, ফরেস্ট রেঞ্জার পদ ৫টি থাকলেও ৫টি পদই শূন্য রয়েছে। একইভাবে ফরেস্টার পদে ১৩টি পদ থাকলেও শূন্য রয়েছে ৬টি। ৪টি ডেপুটি রেঞ্জারের পদ থাকলেও ৪টি রয়েছে শূন্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মতে জনবল সংকটের দরুন বগুড়ায় ১২টি উপজেলায় রেঞ্জার পদে একই ব্যক্তি ২/৩ টি উপজেলার তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, জনবল সংকটের কারণে একাধিক উপজেলায় রেঞ্জারের দায়িত্বে রয়েছে ফরেস্ট গার্ড। এতে করে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচী থেকে শুরু করে বন বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন কর্মসূচী পালনে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে বাধা বিঘœতা। তেমনি ভাবে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের অভিজ্ঞতার অভাব থাকায় কর্মসূচী বাস্তবায়নে শৃংখলা ও জবাবদিহিতা পদে পদে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের অর্ধেক সময় অতিবাহিত হলেও বন বিভাগের আওতাধীন জেলার বিভিন্ন সড়কে সৃজনকৃত ফলজ, বনজ বৃক্ষের মার্কিংÍ এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি। উপরোন্ত উপ বন সংরক্ষক ড. মোহা: আবদুল আউয়াল এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে সোনাতলা উপজেলা ফরেস্ট রেঞ্জার ও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বগুড়া বন বিভাগের হিসাবরক্ষণ শাখার প্রধান দুলাল কুমার সাহার নেতৃত্বে গড়ে উঠা সিন্ডিকেট বগুড়া বন বিভাগের সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে বন বিভাগে কর্মরত একাধিক কর্মচারী। মূলত: এই দুলাল কুমার সাহার ভয়ে তটস্থ থাকে অফিসের অন্যান্য কর্মচারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের একাধিক কর্মচারী আরও জানিয়েছেন, এই দুলাল কুমার সাহা আমাদের উপর নজরদারী করা সহ ডিএফও স্যারের কানভারী করতে পারঙ্গম। সে কারণেই আমাদের নানান সমস্যা তৈরী হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে আমরা স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতেও অনেক সময় দ্বিধান্বিত থাকি।
যদিও একটি ছ’মিলের লাইসেন্স পাবার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, বন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ভূমি বিভাগের সার্ভে রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করার বিধান রয়েছে। তাসত্বেও অনেক ক্ষেত্রেই ছ’মিল স্থাপনকারী ব্যবসায়ীরা এসব আইনের তোয়াক্কা না করে গায়ের জোরে কখনও বা রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন স্থানে ইচ্ছামতো ছ’মিল স্থাপন করে চলছে। এসব ছ’মিলে রাতের আধারে ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির ফলজ ও বনজ বৃক্ষ চেরাই ও ফাড়াই করা হচ্ছে, অথচ এই বিষয়গুলো দেকভালের দায়িত্ব বন বিভাগের থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছ’মিল মালিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিষয়গুলো এড়িয়ে যায় বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা। এতে করে নিরবে ধ্বংস হচ্ছে দেশের বনায়ন, ভূপ্রকৃতিতে অনাকাঙ্কিত পরিবর্তন ঘটছে পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলেও নিবর রয়েছে বন বিভাগ। বন বিভাগের একটি সূত্র মতে বগুড়া জেলায় অবৈধ ভাবে গড়েউঠেছে প্রায় ৫ শতাধিক ছমিল। বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলার প্রায় ১ হাজার এর মত ছমিল থাকলেও লাইসেন্সকৃত ছমিলের সংখ্যা কত সে সম্পর্কে সুস্পস্ট সংখ্যা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন ডিএফও ড. মোহা: আবদুল আউয়াল বলেন, ছ মিলের তালিকা অদ্যাবধি চুড়ান্তকরণ না হওয়ায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এসংক্রান্ত কোন তথ্য আমি দিতে পারবো না। অথচ উনার দেওয়া তথ্যমতে বগুড়া জেলায় ৩৫৫টি অবৈধ ছমিল রয়েছে। এখন জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যদি উনি অবৈধ ছমিলের সংখ্যা জানেন তাহলে বৈধ ছমিলের সংখ্যাও উনার অজানা নয়। আর যদি তাই হয়, সেক্ষেত্রে কেন এতো লুকোচুরি ? বন বিভাগের একটি বিশ্বস্ত সূত্র এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, বর্তমান ডিএফও প্রায় ২ বছর ৬ মাস যাবৎ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এমন সব বিতর্কিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন যার কারণে বন বিভাগের কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অথচ এ বিষয়ে জেনে বুঝেও কোন কর্মচারীর কথা বলার ন্যূনতম সুযোগ নেই।
বগুড়া সামাজিক বন বিভাগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সর্বোপরি সিন্ডিকেটের বিষয়ে ডিএফও ড. মোহা: আবদুল আউয়ালের মুখোমুখি হলে তিনি দ্বিধান্বিত ভাবে বলেন, অস্বীকার করার উপায় নেই আমার অফিস কিছুটা হলেও সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তিনি আরও বলেন, যদিও আমি দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে চেষ্টা করেছি কিন্তু অভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণে আমার চেষ্টা পুরোপুরি সফল হয়নি। অপরদিকে বগুড়া জেলায় লাইসেন্স প্রাপ্ত এবং লাইসেন্স বিহীন ছ’মিল কতটি রয়েছে জানতে চাইলে এখনও ছ’মিলের তালিকা সম্পন্ন হয়নি তাই ছ’মিল সংক্রান্ত কোন তথ্য আমি এখন দিতে পারবো না বলে তিনি নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন।