থমথমে ভারতের মণিপুর, নিহত ১১

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে চলমান সহিংসতায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। আনুষ্ঠানিকভাবে মৃতের সংখ্যা জানানো হয়নি তবে রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলের স্থানীয় নির্ভরযোগ্য সংবাদ পত্রগুলি অন্তত ১১ জন মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। খবর বিবিসির।

রাজ্যে চলমান সহিংসতায় এই প্রথম প্রাণহানির কথা জানালো রাজ্য সরকার। সেনাবাহিনী ও কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষকে উপদ্রুত এলাকাগুলি থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের পুলিশ মহানির্দেশক পি ডউঙ্গেল।

প্রায় এক হাজার জন মণিপুর থেকে আসামের কাছাড় জেলায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে সেখানকার এসপি জানিয়েছেন।

রাজধানী ইম্ফলসহ গোটা রাজ্যে কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ জারি রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার বৃহস্পতিবার রাতেই সেনাবাহিনী পাঠাতে শুরু করেছিল। শুক্রবার তারা জানিয়েছে সহিংসতা বন্ধ করতে তারা আরও ২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাচ্ছে।

বাহিনী মোতায়েন এবং আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব সিনিয়র কেন্দ্রীয় বাহিনীর অফিসারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৩৫৫ ধারা প্রয়োগ করেই রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার দায়িত্ব কেন্দ্র সরকার নিয়ে নিয়েছে। কোনো রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে কেন্দ্রীয় সরকার এই ধারা প্রয়োগ করে থাকে, যদিও এটি খুবই বিরল।

এই ধারার প্রয়োগ অনেকটা জরুরি অবস্থা জারির মতো। মণিপুরের সহিংসতার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কর্ণাটকে তার নির্বাচনী প্রচার বাতিল করে মণিপুরের ওপরে নজরদারি চালাচ্ছেন বলে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে।

বিরোধী কংগ্রেস বলছে, রাজ্যের বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ভারতীয় রেল জানিয়েছে, মণিপুরে সহিংসতার প্রেক্ষিতে তারা ওই রাজ্যে কোনও ট্রেন এখনই পাঠাচ্ছে না। আর প্রতিবেশী রাজ্য আসাম, মেঘালয় এবং ত্রিপুরা এবং অরুণাচল প্রদেশ মণিপুরে পাঠরত তাদের রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে।

সেনা ও অর্ধসৈনিক বাহিনী ফ্ল্যাগ মার্চ করছে পুরো রাজ্যেই। স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার অশান্তি কিছুটা কমেছে, তবে রাজধানী ইম্ফল ও সহিংসতার উৎস যে চূড়াচন্দ্রপুর, সেখানে এখনও প্রবল উত্তেজনা রয়েছে।

তবে সেনাবাহিনী মোতায়েন হওয়ার আগেই দুইদিন ধরে বহু বাড়িঘর, দোকান গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। লুঠ হয়েছে দোকান বাজার। সাত-আটটি পুলিশ থানা থেকে বন্দুক ও গুলি লুঠ হয়েছে।

manipur police

পুলিশ মহানির্দেশক শুক্রবার জানিয়েছেন, যারা ওগুলো লুঠ করেছে, তারা যদি নিজের থেকে ফেরত দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে না। কিন্তু যারা বন্দুক ফেরত দেবে না, তাদের জাতীয় সন্ত্রাস দমন এজেন্সির তদন্তের মুখে পড়তে হবে।

সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড পরিষেবা বন্ধ থাকলেও অনেক ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে, যার সঙ্গে সাম্প্রতিক সহিংসতার কোনও যোগাযোগ নেই।

সহিংসতা বন্ধ করতে পদকজয়ী বক্সার মেরি কম এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন। খ্রিস্টান চার্চগুলিও মণিপুরে খ্রিস্টানদের ওপরে হামলা এবং চার্চগুলি রক্ষার আবেদন জানিয়েছে।

মনিপুরের সংখ্যাগুরু মেইতেই গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে তপশীলি উপজাতি বা এসটি তালিকাভুক্ত হওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের বসবাস মূলত ইম্ফল উপত্যকায়। এদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করেন যে আদিবাসীরা, তাদের একটা বড় অংশ মূলত কুকি চিন জনগোষ্ঠীর মানুষ। সেখানে নাগা কুকিরাও যেমন থাকেন কিছু সংখ্যায়, তেমনই আরও অনেক গোষ্ঠী আছে।

মেইতেইরা তপশীলী উপজাতির তকমা পেয়ে গেলে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ বঞ্চিত হবেন, এই আশঙ্কা ছিলই। কিন্তু ৩ মে, হাইকোর্ট মেইতেইদের তপশীলি উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি সরকারকে বিবেচনা করতে বলে।

তার বিরুদ্ধে পাহাড়ি উপজাতি জনগোষ্ঠী বিক্ষোভ মিছিল করে বুধবার। সহিংসতার শুরু সেখান থেকেই, যা খুব দ্রুত পুরো রাজ্যেই ছড়িয়ে পড়ে। তপশীলি উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশ আসার আগে থেকেই অবশ্য সরকারের এবং মেইতেইদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হচ্ছিলেন পাহাড়ি উপজাতিরা। ওইসব পাহাড়ি বনাঞ্চল থেকে সরকার ‘বেআইনি দখলদার’ সরাতে শুরু করেছিল সম্প্রতি। এগুলি সবই নাগা এবং কুকিদের বসবাসের এলাকা ছিল। সূত্র: বিবিসি

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ