বগুড়া শেরপুরে গ্রাহকের পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও এনওএসএস

শেরপুর প্রতিনিধিঃ বগুড়া শেরপুরে দ্বিগুণ মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকের নিকট থেকে পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও ‘এনওএসএস’ নামের একটি সংস্থা। মঙ্গলবার (০৯ মে) থেকে সংস্থাটির কার্যালয়ে তালা ঝুলতে দেখা যায়।  এতে বিপাকে পড়েছেন ওই সংস্থাটিতে সঞ্চয় রাখা অসংখ্য গ্রাহক। সেইসঙ্গে প্রতারিত হওয়ায় তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কষ্টার্জিত টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে সহযোগিতা চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের শেরুয়া বটতলা বাজার এলাকায় বিগত ২০১৮ সালে গড়ে তোলা হয় ‘নন-স্টপ অরগানাইজেশন ফর সোস্যাল সার্ভিস’ (এনওএসএস)। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালকের নাম শহিদুল ইসলাম (মাস্টার)। তিনি  শেরুয়া হামছায়াপুর হাজী রোড মহল্লার আয়েজ উদ্দীনের ছেলে। সরকারি কোনো দপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই শেরুয়া বাজার এলাকায়  একটি মার্কেটে ঘরভাড়া নিয়ে সংস্থাটির কার্যক্রম শুরু করা হয়। ‘যত সঞ্চয় তত মুনাফা’-এমন শ্লোগানে এক লাখ টাকায় প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা লাভ দেওয়ার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি সহজ শর্তে কাগজপত্র ছাড়াই ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখান এনওএসএসের প্রধান কর্তা শহিদুল ইসলাম মাস্টার ও তার সর্ঙ্গীরা। ফলে তাদের চাটুকারি প্রচারণায় ফাঁদে পড়ে যান শেরুয়া বাজার ছাড়াও ফুলতলা, ধর্মকাম,কানাইকান্দর, আন্দিকুমড়া, হামছায়াপুর গ্রামের অন্তত সহস্রাধিক নারী-পুরুষ। এরমধ্যে রয়েছেন মুদি দোকানি, সবজি বিক্রেতা, গৃহপরিচারিকা, রিকশাচালক, দারোয়ান, ভিক্ষুকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা জায়গা-জমি, গরু-ছাগল, সহায়-সম্পদ‘ বিক্রি করে টাকা তুলে দেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক শহিদুলের হাতে। তিনি কিছুদিন গ্রাহকদের লাভ দিয়ে বিশ্বাস তৈরী করে বাড়াতে থাকেন গ্রাহক সংখ্যা। একপর্যায়ে গ্রাহকদের জমানো সঞ্চয়ের অন্তত পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিগত রবিবার দুপুরে অফিসে তালা ঝুলে দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান।  ভুক্তভোগী রিনা বেগম জানান, তিনি পেশায় একজন গৃহপরিচারিকা। প্রতিদিন পঞ্চাশ টাকা করে সঞ্চয় জমা করেন। বিগত দুই বছর এভাবে টাকা জমা করেছেন। কিন্তু তার সেই সঞ্চিত ত্রিশ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়েছেন শহিদুল ইসলাম মাষ্টার। একইভাবে মিস্ত্রি মনির হোসেন প্রতিদিন একশ’ টাকা করে তিন বছর এক লাখ আট হাজার টাকা সঞ্চয় জমা দেন। এছাড়া প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা মুনাফায় সংস্থাটিতে সবজি বিক্রেতা বাবলু মিয়া এককালিন জমা রাখেন ছয় লাখ টাকা, ফজলুল করিম জমা রাখেন তের লাখ টাকা।
ভুক্তভোগী শাহজাহান আলী বলেন, প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা লাভ দেওয়ার কথা বলে তার নিকট থেকে চৌদ্দ লাখ টাকা নেওয়া হয়। বিগত ছয়মাস আগে টাকাগুলো জমা রাখেন তিনি। কিন্তু অদ্যবধি  তাকে কোনো লাভই দেওয়া হয়নি। এখনতো পুরো টাকা নিয়েই লাপাত্তা ওই সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শহিদুল ইসলাম মাস্টার। টাকাগুলো পাবো কিনা জানি না। জীবনের সব সঞ্চিত এই টাকা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি। ফেরত পেতে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) জাহিদুল ইসলাম বলেন, অধিক লাভের আশায় অনেকেই টাকা জমা রাখেন। এছাড়া সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক শহিদুল ইসলাম স্থানীয় শেরুয়া সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির অন্যতম নেতা। তাই এই সমিতির সদস্যদের সঞ্চয়ের প্রায় অর্ধকোটি টাকা জমা রয়েছে তার সংস্থায়। সবমিলিয়ে অন্তত পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে শহিদুল মাষ্টার উধাও হয়েছেন বলে জানান ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আব্দুল জলিল বলেন, তার দপ্তর থেকে শুধুমাত্র শেরুয়া সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি নিবন্ধন নিয়েছে। তবে এনওএসএস নামের কোনো সংস্থাকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এছাড়া উধাও হওয়ার বিষয়টিও আমার জানা নেই। তাই খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে শেরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রবিউল ইসলাম বলেন, শহিদুল ইসলাম মাস্টার নিখোঁজ-মর্মে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। তবে সে নিজেই আত্মগোপন করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ এলাকার অনেক লোকজনের নিকট থেকেই দ্বিগুণ লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে প্রতিনিয়ই থানায় অভিযোগ আসছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম মাস্টার ও তার পরিবারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু  শহিদুল পলাতক থাকায় এবং পরিবারের লোকজন কথা বলতে রাজী না হওয়ায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ