স্ত্রীর অধিকার আদায় না করলে যে শাস্তি পাবেন

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ বিয়ের মাধ্যমে দুজন মানুষ জীবনভর একসঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞা করেন। ইসলামী শরিয়ত মতে, বিবাহের পর থেকেই স্বামীর ওপর স্ত্রীর জন্য যেসব অধিকার সাব্যস্ত হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো স্ত্রীর ব্যয়ভার গ্রহণ করা। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সন্তানের পিতার ওপর সন্তানের মায়ের জন্য অন্ন-বস্ত্রের উত্তম পন্থায় ব্যবস্থা করা একান্ত দায়িত্ব।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৩)

স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর ওপর

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের ঘরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করো।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৬) হাদিস শরিফে স্ত্রীদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরবে, তাকেও পরাবে। চেহারায় কখনো প্রহার করবে না, অসদাচরণ করবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪২, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৮৫০১)

স্ত্রীর সঙ্গে দুর্বব্যবহার কাম্য নয়

বর্তমানে অনেক স্বামী স্ত্রীর কাছ থেকে নিজের পাওনা পুরোপুরি আদায় করলেও স্ত্রীর অধিকার পালনের বিষয়ে সামান্যতম সচেতনতা দেখান না। অনেকে স্ত্রীর প্রয়োজনীয় খরচ দিতেও গড়িমসি করেন, আবার কেউ কেউ স্ত্রীর সঙ্গে দুর্বব্যবহার করেন। যেমন, বিভিন্নভাবে ধমক দিয়ে থাকেন, অনেকে তো আবার সর্বোচ্চ কাপুরুষতার পরিচয় দিয়ে স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেন, যা কখনোই কাম্য নয়।

স্ত্রীদের প্রতি সদাচারণের বিষয়ে মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে দীর্ঘ বয়ানের একপর্যায়ে বলেছিলেন, ‘অতএব, তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো, কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত ও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে গ্রহণ করেছ এবং তোমরা আল্লাহর হুকুমেই তাদের লজ্জাস্থানকে হালাল হিসেবে পেয়েছ…। (সহিহ মুসলিম : হাদিস ১২১৮)

আরেক হাদিসে হজরত সুরাকা ইবনে মালিক (রা.) সূত্রে বর্ণিত : একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) খুতবা প্রদানকালে ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলো যে অন্যের ওপর অত্যাচার করা ছাড়া নিজ পরিবার ও আত্মীয়স্বজন থেকে সব অনিষ্ট দূর করে।’ (আবু দাউদ, হা. : ৫১২০)

স্ত্রীর অধিকার অনাদায়ে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা

কোনও স্বামী তার স্ত্রীর অধিকার আদায়ে সচেতন না হলে তাকে আল্লাহর কাছে অবশ্যই জবাবদিহিতা করতে হবে। হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জেনে রাখ! তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন পুরুষ তার পরিবার (স্ত্রী-সন্তানদের) উপর দায়িত্বশীল। সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’  (বুখারি, হাদিস : ৮৯৩) স্ত্রীর অধিকার ঠিকমতো পালন না করা স্বামী জালেম হিসেবে চিহ্নিত। আর জালেম সম্পর্কে আল্লাহ আল্লাহ তায়ালা বলেন-

‘(হে নবি!) তুমি কখনো মনে করো না যে, সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন। আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন, যেদিন সব চোখ স্থির হয়ে যাবে। ভীত-বিহব্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে তারা ছুটাছুটি করবে। নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফেরবে না এবং তাদের অন্তর হবে (জ্ঞান) শূন্য।

(হে নবি!) সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর; যেদিন তাদের শাস্তি আসবে, যখন সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) বলবে, ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে কিছু সময়ের জন্য অবকাশ দাও; আমরা তোমার আহবানে সাড়া দেব এবং রাসুলদের অনুসরণ করবো।’ (তখন তাদেরকে বলা হবে,) ‘তোমরা কি আগে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের কোনো পতন নেই?’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪২-৪৫)

জুলুমের শাস্তি

জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তায়ালা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তায়ালা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১১)

রাসুল (সা.) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর কথা বর্ণনা করে বলেন, ‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম কোরো না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)

স্ত্রীর ভালো গুণে মুগ্ধতা

ভালোমন্দ গুণ মিলিয়েই মানুষ সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তায়ালা। অন্য অনেকের মতো স্ত্রীদের মাঝেও ভালোমন্দ বিভিন্ন গুণ রয়েছে। তাই কখনো তাদের কোনও কাজ বা অভ্যাসের কারণে বিরক্ত হলে তাদের ভালো গুণের প্রতি খেয়াল করার কথাও বলেছেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন মহিলার ওপর রুষ্ট হবে না, কেননা যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তাহলে তার এমন গুণও থাকবে, যার ওপর সে সন্তুষ্ট হতে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৯) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নারীদের প্রতি ভালো আচরণের উপদেশ দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৮৪)

পবিত্র কোরআনেও মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবু তুমি যা অপছন্দ করছ আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)

ভালো মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার জরুরি

এছাড়াও স্ত্রীর সঙ্গে ভালো আচরণের বিষয়ে হাদিসে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকেই অন্যের কাছে ভালো হতে চায় এবং সবসময় ভালো হওয়ার চেষ্টা করে । কিন্তু আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম ভালো মানুষ হওয়ার মানদন্ড বলে দিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)

অন্য হাদিসে হজরত আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজের পরিবারের কাছে ভালো।’ (তিরমিজি, হা. : ৩৮৯৫) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলো যে নিজের স্ত্রীর কাছে ভালো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৯৭৮)

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ