কাউন্টার ট্রেডের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির অনুমতি

বগুড়া নিউজ ২৪: এখন থেকে যেকোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আমদানি বিলের বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার না করেই রপ্তানির মাধ্যমে বিল পরিশোধ করতে পারবেন। এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশি রপ্তানিকারক, আমদানিকারক বা ব্যবসায়ীরা স্বেচ্ছায় বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যের আয়ের বিপরীতে আমদানি বিল নিষ্পত্তির জন্য তাদের বিদেশি প্রতিপক্ষের সঙ্গে ‘কাউন্টার ট্রেড’ বা পালটা বাণিজ্য ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে পারবেন। এই ব্যবস্থা দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষয় কমাতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাউন্টার-ট্রেড এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে পণ্য বা পরিষেবা বেচাকেনার ক্ষেত্রে নগদের ব্যবহার না করে অন্য পণ্য বা পরিষেবার মাধ্যমে তা বিনিময় করা হয়। ব্যবসায়ের দুই পক্ষের (ক্রেতা-বিক্রেতা) মধ্যে পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে এটি সম্পাদন হয়ে থাকে। মূলত যেসব দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সীমিত, সেসব দেশকেই এ ব্যবস্থা ব্যবহার করতে দেখা যায় বেশি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেশের নতুন এক্সপোর্ট নীতিমালায় কাউন্টার ট্রেডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে দেশের আমদানি-রপ্তানিকে আরও সম্প্রসারিত করতে এবং নতুন নতুন দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়াতে এই প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কাউন্টার-ট্রেড সুবিধায় যাওয়ার অন্যতম লক্ষ্য হলো কম বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হলেও উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানো।

তাদের সঙ্গে যদি আমরা এই চুক্তি করতে পারি তাহলে আমাদের দেশের রপ্তানি বাজারকে আরও উৎসাহিত করা যাবে। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে আমাদের নতুন বাজারে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু) দেশগুলোর সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির যে নিট গ্যাপ, তা পেমেন্ট করতে হয়। তেমনি নতুন এই কাউন্টার ট্রেডের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা চুক্তি করে বিনিময় পদ্ধতিতে আমদানি-রপ্তানি করতে পারবেন।

ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, যেহেতু নতুন রপ্তানি নীতিমালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাউন্টার-ট্রেডকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, তার মানে হচ্ছে এর ফলে আমাদের আমদানি-রপ্তানির জন্য ভালো কিছু হবে। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাত্র গাইডলাইন করেছে। আমরা দেখি এটা আমাদের জন্য কী সুবিধা দেয়। যদি কোনো অসুবিধা হয়, তাহলে পরবর্তীতে এর পরিবর্তনও আনা সম্ভব।

তবে দেশের পোশাক খাতের এক জন রপ্তানিকারক বলেন, কাউন্ট্রার-ট্রেডের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যাও থাকে। এখানে দুই দেশের চুক্তির ফলে নির্দিষ্ট পরিমাণে আমদানি করতে হয় যার কারণে পণ্যের গুণমান ও দামের ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতা দেখা যায়। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও চীনে কাউন্টার-ট্রেড ব্যবস্থা প্রচলিত আছে।

কাউন্টার-ট্রেডের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো বিদেশি প্রতিপক্ষের নামে বা বাংলাদেশি পক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে এসক্রো অ্যাকাউন্ট খুলতে ও পরিচালনা করতে পারবে।

এসক্রো অ্যাকাউন্টগুলো বাংলাদেশের আমদানিকারকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আমদানি বিলের অর্থ ক্রেডিট এবং রপ্তানিকারকদের তাদের রপ্তানির বিপরীতে এক্সপোর্ট পেমেন্ট ডেবিট করার মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তি করবে।

সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি নিয়ে এসক্রো অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে। তবে কাউন্টার-ট্রেডের এই ব্যবস্থা আকুর বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে জানানো হয়েছে সার্কুলারে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ