এসআই জেবুন্নেছার মমত্ববোধে মাতৃকোল ফিরে পেল পথহারা দুই শিশু

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ রাত ৯ টা। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা সদরের অদুরে সাজাপুর এলাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পাশে টিএমএসএস পেট্রোলপাম্পের পাশে অঝরে কাঁদছিল ১০-১২ বছর বয়সের উস্কখুস্ক বিষন্ন দুই শিশু। শিশু কান্না শুনে কৌতুহলী মানুষের ক্রমেই ভীড় বাড়ছিল। হঠাৎ চোখে পড়ে পেট্রোল ডিউটিতে থাকা থানা পুলিশ সদস্যদের। এগিয়ে গিয়ে কান্নার কারণ জানতে চাইলে পথহারা দুই শিশু কেঁদে কেঁদে বলে ‘বাড়ি যেতে চাই’। জেলার নাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও বাবার নাম বলতে পারলেও পুরো ঠিকানা বলতে না পারায় অবুঝ দুই শিশুকে থানায় নিয়ে এসে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী হেল্পডেস্কে কর্মরত এসআই জেবুন্নেছার হাতে তুলে দেন পেট্রোল পার্টির পুলিশ সদস্যরা।

উস্কখুস্ক বিষন্ন দুই শিশুর কান্না দেখে মাতৃত্ববোধ জেগে উঠে জেবুন্নেছার। সাথে সাথে অবুঝ দুই শিশুকে কাছে টেনে কোলে নিয়ে মাতৃআদরে শান্ত করেন তিনি। জীর্ণশীর্ণ অভুক্ত দুই শিশুর মুখে বেদনাকাতর বিবরন জেনে নারীত্বের কোলে নূয়ে পড়েন জেবুন্নেছা। মাতৃত্বের মমত্ববোধে নিজেকে সামলাতে না পেরে উস্কখুস্ক শিশু দুটিকে নিজহাতে গোসল করিয়ে দেন তিনি। মায়ের আদরে খাবার খাইয়ে বাজার থেকে নতুন পোশাক কিনে জীর্ণশীর্ণ পোশাক খুলে নতুন পোশাক পরিয়ে দেন জেবুন্নেছা। মাতৃআদর পেয়ে মুখে হাসি ফোঁটে শিশু দু’টির। এক পর্যায়ে জেবুন্নেছাকে ‘মা’ বলে ডাকে তারা।

সংসার জীবনে জেবুন্নেছা ১১ ও ২ বছর বয়সী দুই কন্যা সন্তানের জননী। সরকারী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সন্তানদের প্রয়োজনীয় সময় দিতে না পারায় সন্তানের পাশে না থাকার শুন্যতা জাগ্রত হয় জেবুন্নেছার। অনুভব হয় মায়ের কাছে সন্তানের শুন্যতা। তাই পথহারা অবুঝ দুই শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেন তিনি। শুরু হয় বাবা-মার অনুসন্ধান। ব্রাম্মণবাড়িয়া জেলা সদর থানা থেকে শুরু করে জেলার বিভিন্ন থানায় মোবাইলে যোগাযোগ করে সারা রাত বহু কষ্টে অবশেষে খোঁজ মেলে বাবা-মার। ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদর থানা ও সরাইল থানা পুলিশের আন্তরিক প্রচেষ্টায় খুঁজে পাওয়া বাবা-মাকে শাজাহানপুর থানায় ডেকে পাঠান জেবুন্নেছা।

অবশেষে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে রবিবার রাত ৯টার দিকে পথহারা দুই শিশুকে বাবা-মার কোলে ফিরে দেন তিনি।

এসআই জেবুন্নেছা জানান, শিশু দু’টির একজনের নাম সুমন (১২)। অপর জনের নাম শরীফুল ইসলাম (১১)। সুমনের বাবা হুমায়ন ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা সদরের বড়হরন গ্রামের একজন দিনমজুর। শরীফুল ইসলামের বাবা মোহাম্মাদ আলী একই জেলার শরাইল থানার বইসামুড়া গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক। অভাবের তাড়নায় প্রায় বছর খানেক আগে সুমন ও শরীফুলকে বগুড়ায় এক ব্যাগ তৈরির কারখানায় রেখে যান তাদের বাবা-মা। অল্প বয়সে কাজের চাপ সামলাতে না পেরে পালিয়ে বাড়িতে যেতে চেয়েছিল শিশু দু’টি। পথ হারিয়ে শাজাহানপুর চলে আসে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এসআই জেবুন্নেছা আরো জানান, পুলিশ হলেও তিনি একজন নারী। নারীত্বের পূর্ণতা আসে মাতৃত্ব থেকে। পথহারা ওই দুই শিশুর সমবয়সী তার এক মেয়ে আছে। মাতৃত্ববোধের কারণেই হয়তো নিজেকে সামলাতে পারিনি। তাছাড়া মানুষতো মানুষের জন্যই। পুলিশের চাকরির পাশাপাশি নারী-শিশু ডেস্কের দায়িত্ব পাওয়ায় অসহায় মানুশের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ